ব্যাঙ্কের কর্মীর পরিচয় দিয়ে ফোন এসেছিল। ব্যাঙ্কের এটিএমের গোপন নম্বর জানতে চেয়েছিলেন অপরিচিত কণ্ঠের লোকটি। বিশ্বাস করে তা জানিয়ে ২১ হাজার টাকা খুইয়েছেন বিষ্ণুপুর থানার কাঁকিলার বাসিন্দা পেশায় কৃষিজীবী অসিত পাল। পরে প্রতারণার বিষয়টি নজরে আসতেই তিনি বিষ্ণুপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু ঘটনার ১০ দিন পার হয়ে গেলেও দোষীদের ধরতে পারেনি পুলিশ। এ বার পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার তিনি অগত্যা মহকুমাশাসকের (বিষ্ণুপুর) দ্বারস্থ হলেন অভিযোগকারী।
অসিতবাবুর অভিযোগ, “বিষ্ণুপুর থানার চুয়ামসিনা গ্রামের ওই ব্যাঙ্কে আমার একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। কিছুদিন আগে এক ব্যক্তি মোবাইল থেকে নিজেকে ওই ব্যাঙ্কের আধিকারিক পরিচয় দিয়ে আমার এটিএমের গোপন নম্বরটি জানতে চান। ব্যাঙ্কের কাজে লাগবে বলে জানিয়েছিলেন। বিশ্বাস করে তাঁকে সেই নম্বরটি দিই। পরে সন্দেহ হওয়ায় কয়েক ঘণ্টা পরে এটিএমে টাকা তুলতে গিয়ে দেখি অ্যাকাউন্টে জমা রাখা ২১ হাজার টাকা সবই তুলে নেওয়া হয়েছে। তখনই বুঝতে পারি, ওই নম্বরটি জানিয়ে কি ভুলই না করেছি।” তিনি জানান, ভুল ভাঙতেই তিনি থানায় গিয়ে যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, সেই নম্বর দিয়ে তিনি অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, ওই অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পরেও পুলিশ এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ করেনি। তাই বিষ্ণুপুর মহকুমাশাসকের কাছে তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ দায়ের করেন।
মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) পলাশ সেনগুপ্ত-র আশ্বাস, “পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ পেয়েছি তা খতিয়ে দেখছি। এই ঘটনার যথাযথ তদন্তের জন্য পুলিশকে বলব।” বিষ্ণুপুর মহকুমার এক পুলিশ কর্তার দাবি, “পুলিশ ইতিমধ্যেই ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। গড়িমসির অভিযোগ ঠিক নয়। তবে তদন্তের স্বার্থে সব প্রকাশ করা যাবে না।”
এ দিকে, গ্রাহকদের ভুয়ো নম্বর থেকে ফোন করে এটিএমের গোপন নম্বর সংগ্রহ করে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলছে। রাজ্যের অন্যত্রও হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও গ্রাহকরা সজাগ না হওয়ায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও হতাশ। বিষ্ণুপুরের চুয়ামসিনা গ্রামের ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার অসিত দাশগুপ্ত বলেন, “কোথা থেকে ওই অ্যাকাউন্টের টাকা তোলা হয়েছে বুঝতে পারছি না। তবে গ্রাহকদের বার বার সতর্ক করেছি কাউকেই গোপন নম্বর দেবেন না। কিন্তু তবুও কিছু মানুষ সতর্কতায় কান দিচ্ছেন না বলেই এই ধরনের প্রতারণার ঘটনা বন্ধ করা যাচ্ছে না।”
মহকুমাশাসকেরও আক্ষেপ, “এটিএমের গোপন নম্বর জানিয়ে বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। অথচ এই নম্বার যাতে কাউকে না জানানো হয় তার জন্য বিভিন্ন স্তর থেকেই প্রচার চালানো হচ্ছে।” মানুষ সচেতন না হলে এই ঘটনা চলতেই থাকবে বলে তাঁর অভিমত।