প্রবল গরম। সারা রাতের সফর। একটু স্বস্তিতে যাবেন বলে বাতানুকূল কামরায় টিকিট কেটেছিলেন পুরুলিয়া শহরের এল এম ঘোষ স্ট্রিটের বাসিন্দা অনমোল কেডিয়া। রাতে হাওড়া ছেড়ে সাতসকালে ট্রেন পৌঁছল পুরুলিয়া স্টেশনে। সিটের তলা থেকে ব্যাগ বের করতে দেখেন ব্যাগের গায়ে একাধিক ফুটো। ভিতরে থাকা জামা-কাপড়ের টুকরো বেরিয়ে রয়েছে।
রাতে নিশ্চিন্ত ঘুমের মধ্যে এমন কাণ্ড যে ইঁদুরের, তা বুঝতে দেরি হয়নি অনমোলের। চোখ ফেটে জল আসছিল, জন্মদিনে পাওয়া ব্যাগের এমন দশা দেখে। কিন্তু, কিছু করার নেই। ইঁদুরের বিরুদ্ধে তো আর অভিযোগ করা যায় না! কলকাতার ভবানীপুরে একটি কলেজের ছাত্রী অনমোলের কথায়, “বাড়ি ফিরব বলে তৎকালে এসি কামরার টিকিট কেটেছিলাম। পুরুলিয়ায় নামার সময় দেখি, ব্যাগের দফারফা করে দিয়েছে ইঁদুর। বাড়ি ফিরে দেখি, শুধু ব্যাগটাই নয় ভেতরে থাকা পোশাক, খাবার সব নষ্ট হয়েছে। ওই ব্যাগটা আমার জন্মদিনে উপহার পাওয়া। কী করব, করার তো কিছুই নেই!” আনমোলের বাবা আনন্দ কেডিয়ার আক্ষেপ, “বাতানুকূল কামরারই এমন অবস্থা হলে কী-ই বলা যেতে পারে!”
হাওড়া-আদ্রা-চক্রধরপুর ফাস্ট প্যাসেঞ্জারের যাত্রী অনমোলের শনিবার রাতে যে অভিজ্ঞতার সামনে পড়েছেন, তা অবশ্য নতুন নয়। ওই ট্রেনে নিত্য যাতায়াতকারী লোকজন মাত্রই জানেন, ট্রেনে ইঁদুরের উপদ্রবের কথা। কাশীপুরের বাসিন্দা সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “কিছুদিন আগে আমি ওই ট্রেনেই ফার্স্ট ক্লাসে হাওড়া থেকে ফিরছিলাম। দেখি মেঝেতে ছুঁচো, ইঁদুর ঘুরে বেড়াচ্ছে।” পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের চিকিৎসক পবন মণ্ডল বলেন, “আমার ব্যাগ কাটেনি ঠিকই। তবে, ওই ট্রেনে ইঁদুরের উৎপাতের কথা জানি। সেই ভয়ে আমি লোয়ার বার্থ এড়িয়ে চলি। আর ব্যাগ কখনওই সিটের নীচে রাখি না।
অনমোল অবশ্য বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। তিনি রেল কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, “এ রকম ঘটনা এর আগে আমার এক আত্মীয়ের সঙ্গেও হয়েছে। তাই ক্ষতিপূরণ দাবি করেছি।” দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রার ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার বিজয়কুমার মাঝি বলেন, “এ রকম অভিযোগ আমার হাতে আসেনি। তবে, ট্রেনটি সারাদিন সাঁতরাগাছিতে থাকে। ট্রেনে তো নানা খাবারের টুকরো পড়ে থাকে। তার জেরে ইঁদুর আসতে পারে। সাঁতরাগাছিতে কামরা পরিষ্কার করা হয়। এই সমস্যা নিয়ে আমি সাঁতরাগাছিতে কথা বলব।”