ওয়ার্কঅর্ডার ঢের আগে, এখনও বেহাল অযোধ্যা পাহাড়ের রাস্তা

দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে রাস্তাটির অবস্থা বেহাল। সেই রাস্তা সংস্কার করা হবে, প্রশাসনিক এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বছর খানেক আগেই। কিন্তু রাস্তা সংস্কার আজও হয়নি। এমনকী, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওয়ার্ক অর্ডার হয়ে যাওয়ার পরেও কবে কাজ শুরু হবে, তার কোনও উত্তর নেই প্রশাসনের কর্তাদের কাছে। অভিযোগ, বরাত পেলেও ঠিকাদার সংস্থা আজও ওই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির সংস্কারের কাজ শুরু করেনি।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৪ ০০:৫৬
Share:

বর্ষা শুরু হওয়ায় পাহাড়ে ওঠার রাস্তার হাল আরও খারাপ হয়েছে। ছবি: সুজিত মাহাতো।

দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে রাস্তাটির অবস্থা বেহাল। সেই রাস্তা সংস্কার করা হবে, প্রশাসনিক এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বছর খানেক আগেই। কিন্তু রাস্তা সংস্কার আজও হয়নি। এমনকী, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওয়ার্ক অর্ডার হয়ে যাওয়ার পরেও কবে কাজ শুরু হবে, তার কোনও উত্তর নেই প্রশাসনের কর্তাদের কাছে। অভিযোগ, বরাত পেলেও ঠিকাদার সংস্থা আজও ওই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির সংস্কারের কাজ শুরু করেনি।

Advertisement

অথচ এলাকার ‘লাইফ লাইন’ বলে পরিচিত, আড়শা ব্লকের শিরকাবাদ থেকে অযোধ্যা পাহাড়ের মাথা (হিলটপ) পর্যন্ত বেহাল ওই রাস্তাটির সংস্কারের দাবি বহু দিনের। পাহাড়ের একাধিক গ্রাম প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এ নিয়ে বারবার আবেদন জানিয়েছে। ২০১১ সালে রাজ্যে সরকার বদলের পরপরই মাওবাদী অধ্যুষিত পাহাড়ের এই রাস্তাটি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত আজও বাস্তবায়িত হয়নি।

১৯৯৬ সালে পূর্ত দফতর এবং ২০০৮ সালে জেলা পরিষদ রাস্তাটির সংস্কার করেছিল। তার পর থেকে দিন দিন বেহাল হয়েছে পাহাড়ের উপরে ওঠার অন্যতম প্রধান রাস্তাটি। পাহাড়ে ওঠার জন্য বলরামপুর-বাঘমুণ্ডি হয়েও একটি রাস্তা রয়েছে। তবে সেটা অনেকটাই ঘুরপথ। অতিরিক্ত ৩০ কিলোমিটার ঘুরে পাহাড়ে উঠতে হয়। গত সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে রাত্রিবাসের জন্য বলরামপুর-বাঘমুণ্ডির জঙ্গলের রাস্তা ধরে পাহাড়ে পৌঁছেছিলেন। যদিও রাত্রিবাসের পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝে পাহাড়ে পৌঁছেই নীচে বাঘমুণ্ডিতে নেমে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে বৈঠকে জেলা প্রশাসনকে তিনি পাহাড়ে ওঠার মূল রাস্তাটিকে দ্রুত সংস্কার করার নির্দেশ দিয়ে যান।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে খবর, রাস্তাটি সংস্কারের কাজ পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের হাতে রয়েছে। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি নাগাদ পর্ষদ এই কাজের জন্য ১ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা বরাদ্দও করে। কিন্তু দু’দু’বার দরপত্র আহ্বান করেও কোনও ঠিকাদার মেলেনি। পরে পর্ষদ বরাদ্দ বাড়িয়ে ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা করে দেয়। এ বার অনেকেই দরপত্র জমা দেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এক ঠিকাদার সংস্থাকে কাজের বরাতও দেওয়া হয়। কিন্তু এখনও কাজ শুরু হয়নি।

একদা মাওবাদী অধ্যুষিত পাহাড় ঘিরে বিশেষ পযর্টন কেন্দ্র গড়ে তোলাই মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন। সেই এলাকারই অন্যতম প্রধান এই রাস্তা পুজোর আগেই সারিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জেলা প্রশাসন। সম্প্রতি শিকার উৎসব উপলক্ষে একটি আদিবাসী সংগঠনের আমন্ত্রণে পাহাড়ে এসেছিলেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। পাহাড়ের বাসিন্দারা তাঁর কাছে রাস্তা সংস্কারের দাবি তুললে তিনি দ্রুত কাজ শুরু করার প্রতিশ্রুতিও দিয়ে যান। এর পরেও কেটেছে দু’মাস। কিন্তু কাজ এখনও শুরু হয়নি। বহু চেষ্টাতেও ওই ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

পর্ষদ সূত্রে খবর, যে ঠিকাদার কাজের বরাত পেয়েছেন তিনি দুর্ঘটনায় পড়াতেই কাজ এখনও শুরু করা যায়নি। যে কোনও দিন কাজ শুরু হয়ে যাবে। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু বলছেন, “ঠিকাদার দুর্ঘটনায় পড়তেই পারেন। কিন্তু তাঁর সংস্থা কেন কাজ শুরু করবে না?” অন্য দিকে, পর্ষদের কার্যনির্বাহী আধিকারিক বাসুদেব দে বলেন, “শুনেছি ঠিকাদার দুর্ঘটনায় পড়ায় কাজ এখনও শুরু হয়নি। তবে, যাতে দ্রুত রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়, তার ব্যবস্থা নিচ্ছি।” এখানেই প্রশ্ন উঠছে, পুজোর আগে শেষ করার লক্ষ্যে তড়িঘড়ি দ্রুত সংস্কার করতে গিয়ে এই ভরা বর্ষায় কাজের মান ঠিক থাকবে তো? জেলার সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো অবশ্য বলছেন, “বর্ষায় পিচের কাজ করতে দেব না। বাকি কাজটা পরে করতে বলব।”

এ দিকে, আজ বুধবারই পর্ষদের কাজকর্মের হাল হকিকত যাচাই করতে পুরুলিয়ায় পর্ষদ ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা বৈঠকে বসছেন। সেখানে সুকুমারবাবুরও থাকার কথা। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ওই বৈঠকে অযোধ্যা পাহাড়ের রাস্তা সংস্কারের বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে। অন্য দিকে, মন্ত্রীর আশ্বাস, “সমস্যা কোথায় তা দেখতে আমি বুধবারের বৈঠকে থাকব। কাজটা এখনও শুরু হয়নি ঠিকই। তবে, শীঘ্রই শুরু হয়ে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন