ঝালদায় মুখ্যমন্ত্রীর সভার প্রস্তুতি। ছবি: প্রদীপ মাহাতো।
বিভিন্ন সময়ে দলের একাধিক মন্ত্রী নানা সরকারি কর্মসূচিতে ছুটে গিয়েছেন ঝালদায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে বা পরে নিকট অতীতে এখানে আসেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রথম সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাভাবিক ভাবেই মঙ্গলবারের এই সভা রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল।
পুরুলিয়ার ঝালদা-জয়পুর-বাঘমুণ্ডি এই এলাকা কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এই তিন এলাকার কিছু কিছু জায়গায় বামফ্রন্টেরও প্রভাব রয়েছে। শুধু নখ বসাতে পারেনি তৃণমূল। শুধু তাই নয়, এ বারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে লড়তে হবে কংগ্রেস দুর্গের অধিপতি নেপাল মাহাতোর বিরুদ্ধে। এখানে তৃণমূল প্রার্থী মৃগাঙ্ক মাহাতো দাঁড়ালেও লড়াই মূলত মৃগাঙ্কবাবুর সারথি শান্তিরাম মাহাতো (যিনি কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে আসেন)। বিরোধী শিবিরের মতে, এখানে তৃণমূলের পক্ষে লড়াইটা কঠিন হবে ভেবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝালদায় সভা করতে আসছেন।
কারণ, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই তিন এলাকায় তৃণমূল একা লড়লেও খুব একটা ফায়দা তুলতে পারেনি। বাঘমুণ্ডি ও ঝালদা ১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের সব আসন কংগ্রেসের দখলে। একই অবস্থা ঝালদা ২ ব্লকের ক্ষেত্রেও। এখানে প্রভাব বেশি বামফ্রন্টের। এ ছাড়া, জেলার পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে পাশাপাশি অবস্থান করা বাঘমুণ্ডি এবং জয়পুর এই দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রের অনেক এলাকায় এখনও তৃণমূল সে ভাবে দলের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। জয়পুরের বিধায়ক ফরওয়ার্ড ব্লকেরই। এই বিষয়গুলি মাথায় রেখে দিন কয়েক আগে পুরুলিয়ায় একটি কর্মিসভা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তিনি কর্মীদের জিজ্ঞাসা করেন, “বাঘমুণ্ডি থেকে কত জন এসেছেন উঠে দাঁড়ান।” বেশ কয়েকজন কর্মী দাঁড়াতেই মুকুলবাবু বলেন, “বাঘমুণ্ডিতে ২০০ বুথ রয়েছে। ২০০ জন কর্মীও আসেননি।” বিরোধী শিবিরের মতে, মুকুল রায়ের পরে ঝালদার প্রান্তে টালিসেন্টার ময়দানে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর সভা করতে আসার সিদ্ধান্ত থেকেই বোঝা যায়, এখানে তৃণমূলের পক্ষে লড়াই কতটা কঠিন।
এ প্রসঙ্গে বামফ্রন্ট প্রার্থী নরহরি মাহাতো বলেন, “জেলার এত জায়গা থাকতে ওই প্রত্যন্ত এলাকায় মুখ্যমন্ত্রী সভা করছেন। কারণটা পরিষ্কার নয়। তবে ওই এলাকায় দেড় লক্ষ বিড়ি শ্রমিক আছেন। যাঁদের ষাট শতাংশই আমাদের সমর্থক। তাঁরা আমাদের সংগঠনে রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য আমাদের এই সংগঠনে কোনও ভাঙনই ধরাতে পারবেন না।” তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই সভা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কংগ্রেস প্রার্থী নেপালবাবু। তিনি শুধু বলেন, “যে কারও যেখানে খুশি সভা করার অধিকার রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন উপলক্ষে সভা করবেন। এতে অবাক হওয়ার তো কিছু নেই।” রাজনৈতিক সমীকরণ যাই থাক, শান্তিরামবাবু তাতে গুরুত্ব দিতে চান না। তিনি অবশ্য বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে বা পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলার বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন। কিন্তু এই এলাকায় একবারও যাননি। এই এলাকার মানুষ তাঁর শুনতে চান। তাই এ বারে তাঁর সভা ঝালদা এলাকায় রাখা হয়েছে।”