স্বজনপোষণ ও অনুন্নয়নের অভিযোগ তুলে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিল বামফ্রন্ট। ওই অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হওয়ায় প্রধানের পদ খোয়ালেন কংগ্রেসের এক নির্বাচিত সদস্য। বৃহস্পতিবার মুরারই ২ ব্লকের কুশমোড় ১ পঞ্চায়েতের ওই ঘটনায় আবার প্রধানের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন দলেরই এক সদস্য। অনাস্থা সভা পরিচালনা দায়িত্বে থাকা ব্লকের পঞ্চায়েত অডিট ও অ্যাকাউন্ট অফিসার আলি শেখ বলেন, “পঞ্চায়েতের নির্বাচিত তেরো জন সদস্যের মধ্যে এ দিন সাত জন উপস্থিত ছিলেন। প্রধানের বিরুদ্ধে সাত জন্যই অনাস্থা জানিয়েছেন। খুব শীঘ্রই ব্লক প্রশাসন থেকে নতুন প্রধান নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হবে।” প্রধান তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, তেরো সদস্যের কুশমোড় ১ পঞ্চায়েতে ভোটের ফলে দলগত অবস্থান ছিল কংগ্রেস ৫, ফরওয়ার্ড ব্লক ৫, তৃণমূল ২ এবং সিপিএম ১। তৃণমূলের দু’ জন এবং কংগ্রেস, ফরওয়ার্ড ব্লক ও সিপিএমের এক জন করে সদস্য প্রধান নির্বাচনে যোগ দেননি। বাকি থাকা কংগ্রেসের ৪ জন এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের ৪ সদস্যের উপস্থিতিতে প্রধান হন বুলচাঁদপুর সংসদ থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য মুসলিমা বিবিকে। উপপ্রধান হন ফব-র শফিকুল মণ্ডল। কিন্তু গত ১৪ অক্টোবর প্রধানের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ, অনুন্নয়ন-সহ নানা অভিযোগে উপপ্রধান-সহ পঞ্চায়েতের সাত নির্বাচিত সদস্য সংশ্লিষ্ট মুরারই ২ বিডিও-র কাছে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন। অনাস্থা প্রস্তাবে ফব-র পাঁচ এবং সিপিএমের এক সদস্যের সঙ্গেই স্বাক্ষর করেন কেন্দিষ্টা সংসদের কংগ্রেস সদস্য টনিল মালও। এ দিনই যে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হয়ে যায়।
প্রধানকে অপসারণ করতে গিয়ে অন্য দলের সমর্থন নিলেন কেন? ফব-র নির্বাচিত সদস্য তথা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শফিকুল মণ্ডল বলেন, “নির্বাচনের সময় দলের চার জন সদস্য মুসলিমা বিবিকে প্রধান হিসেবে সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু প্রধান হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই তিনি যে সব কাজকর্ম করতে শুরু করেন, তা কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তাই এই অনাস্থা।” সে ক্ষেত্রে অভিযোগের সত্যতা থাকার জন্যই এক কংগ্রেস সদস্য স্বেচ্ছায় তাঁদের সমর্থন করেছেন বলে শফিকুলের দাবি। বরং তাঁর অভিযোগ, প্রধান স্বজনপোষণ করছেন। তাঁর আমলে উন্নয়নের কাজও ঠিক ভাবে হচ্ছে না। দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানিয়েই গোটা বিষয়টি সারা হয়েছে বলে উপপ্রধান জানিয়েছেন।
এ দিকে, শফিকুলের সুরেই দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে টনিল বলেন, “এই প্রধানের কাজ আমার ভাল ঠেকছে না। প্রধান পঞ্চায়েতে স্বজনপোষণ করছেন। প্রধান পঞ্চায়েত এলাকার উন্নয়নেও ব্যর্থ। আমি কেবল এরই প্রতিবাদে ওঁর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছি।” তাঁর আরও দাবি, দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থায় স্বাক্ষর করলেও তিনি এখনও কংগ্রেসেই আছেন। তবে, অনাস্থা ভোটে যোগ দেওয়া একমাত্র সিপিএম সদস্য দলকে কিছু না জানিয়েই এমনটা করেছেন বলে সিপিএমের মুরারই জোনাল সম্পাদক বরকতউল্লাহর দাবি। তাঁর বক্তব্য, “কুশমোড় ১ পঞ্চায়েতে দলের ওই সদস্য দলীয় প্রতীকে জেতার পর থেকে দলের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখেন না। ওই অনাস্থা নিয়েও আলোচনা করেননি।” প্রধান নির্বাচনে বা অনাস্থা ভোট, কোনও ক্ষেত্রেও পঞ্চায়েতের দুই নির্বাচিত তৃণমূল সদস্য যোগ দেননি। এ প্রসঙ্গে পঞ্চায়েতের লতাগ্রাম সংসদ থেকে নির্বাচিত তৃণমূল সদস্য নগেন মাল বলেন, “আমরা সংখ্যায় মাত্র দু’জন। সংখ্যালঘিষ্ঠ হওয়ায় দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই আমরা প্রধান নির্বাচন বা অপসারণে যোগ দিইনি।”
অন্য দিকে, অনাস্থায় দলীয় সদস্যের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অপসারিত কংগ্রেস প্রধান। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মুসলিমা বলেন, “আমি কী কাজ করেছি না করেছি, সেটা পঞ্চায়েতের স্পেশাল অডিট রিপোর্ট দেখলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে।” তাঁর পাল্টা দাবি, স্রেফ ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতেই দলীয় সদস্য বামেদের আনা এমন ‘অনৈতিক’ অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেছেন। তাঁর ক্ষোভ, টনিলের দলবিরোধী আচরণের বিষয়ে আগেই দলীয় নেতৃত্বকে অভিযোগ জানানো হলেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কংগ্রেসের মুরারই ২ ব্লক সভাপতি আফতাবউদ্দিন মল্লিক বলেন, “ওই সদস্য ভুল কাজ করেছেন। অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়ে প্রধান আমাকে আগে জানিয়েছলেন। ওই সদস্যের বিরুদ্ধে দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”