কাগজেকলমে প্রকল্প, তরজায় জড়ালেন মন্ত্রী

একে বৃষ্টি কম হওয়ায় মার খেয়েছে চাষ। তার মধ্যেই জেলায় কোথাও কোথাও কালোবাজারে সার কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। আর কৃষি দফতরের কর্মী-আধিকারিকেরা কোনও কাজ করছেন না। বৃহস্পতিবার রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর উপস্থিতিতেই এই অভিযোগে সরব হলেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো। আর সেই মঞ্চেই পাল্টা জবাব দিলেন মন্ত্রী।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

কাশীপুর শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৮
Share:

একে বৃষ্টি কম হওয়ায় মার খেয়েছে চাষ। তার মধ্যেই জেলায় কোথাও কোথাও কালোবাজারে সার কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। আর কৃষি দফতরের কর্মী-আধিকারিকেরা কোনও কাজ করছেন না। বৃহস্পতিবার রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর উপস্থিতিতেই এই অভিযোগে সরব হলেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো। আর সেই মঞ্চেই পাল্টা জবাব দিলেন মন্ত্রী।

Advertisement

এ দিন পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া, দুই জেলার কৃষি দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে কাশীপুর ব্লকের সোনাথলিতে বৈঠকে বসেছিলেন পূর্ণেন্দুবাবু। সেখানে কৃষিসচিব সুব্রত বিশ্বাস, দফতরের অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্য, পরিষদীয় সচিব শুভাশিস বটব্যাল এবং পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার উপ কৃষি অধিকর্তা দিব্যেন্দু দাস ও দেবদাস মুখোপাধ্যায়। তৃণমূল নেতা তথা সভাধিপতি সৃষ্টিধরবাবু সবার সামনেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “পুরুলিয়ায় খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু, আমার কাছে অভিযোগ এসেছে, কিছু ব্লকে সার নিয়ে কালোবাজারি হচ্ছে।” উদাহরণ হিসেবে তিনি সাঁতুড়ি ব্লকের উল্লেখ করেন। সভাধিপতির প্রশ্ন, “প্রতি ব্লকেই কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা রয়েছেন। তা হলে কেন কৃষককে কালোবাজারে সার কিনতে হবে?” একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, কৃষি প্রযুক্তি সহায়কদের একটা বড় অংশেরই চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। সবই হচ্ছে কাগজে-কলমে।

বৈঠকে পরের পর অভিযোগ তোলেন সভাধিপতি। বলেন, “যত প্রকল্পের কথা শুনছি, তার কতটা বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে, এ বার তো মানুষ এই প্রশ্ন তুলবেন। আর তাঁদের জবাব দেওয়ার একটা দায়বদ্ধতা রয়েছে আমাদের।” এখানেই না থেমে তাঁর সতর্কবার্তা, “নিচুতলার মানুষের কথা উপেক্ষা করার জন্যই এক দিন মাওবাদী সৃষ্টি হয়েছিল। এ বার হয়তো আরও কিছু সৃষ্টি হবে!”

Advertisement

মাওবাদী হিংসা কী, তার চেহারাই বা কেমন, পুরুলিয়ার মানুষ তা বিলক্ষণ জানেন। অনুন্নয়নকে হাতিয়ার করেই যে এক সময় জঙ্গলমহলের তিন জেলায় মাওবাদীদের উত্থান, তা-ও আজ কোনও অজানা তথ্য নয়। সেই জঙ্গলমহলের জেলা পুরুলিয়ার সভাধিপতিই সরকারি মঞ্চে এমন কথা বলায় কৃষিমন্ত্রী ও কৃষিকর্তারা অস্বস্তিতে পড়ে যান। পরিস্থিতি সামাল দিতে কৃষি দফতরের অধিকর্তা পরিতোষবাবু বলেন, “সভাধিপতি সারের কালোবাজারি নিয়ে অভিযোগ তুলে সাঁতুড়ি ব্লকের কথা উল্লেখ করেছেন। এই অভিযোগের অতি দ্রুত তদন্ত করা দরকার।”

দফতরের কর্মী বা আধিকারিকেরা কাজ করেন না, এই অভিযোগ ওই মঞ্চেই উড়িয়ে দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। নিজের বক্তব্যে তিনি বলেন, “আপনারা (কর্মী-অফিসার) কাজ করেন না, এটা আমি বিশ্বাস করি না।” সভাধিপতিকে কিছুটা ঠুকেই তাঁর মন্তব্য, “একবগ্গা ভাবে এমন কথা বলা ঠিক নয়! সচিব, অধিকর্তা বা আপনারা যদি কাজ না করেন, তাহলে তো দফতরই চলত না!” মাওবাদীদের বদলে ‘আরও কিছু’ সৃষ্টি হওয়ার যে অভিযোগ সভাধিপতি তুলেছেন, তার জবাব দেননি মন্ত্রী। বরং কৃষি-সমস্যা নিয়ে বৈঠক যাতে চাপানউতোরেই হারিয়ে না যায়, তা মাথায় রেখেই হয়তো তিনি বলেন, “এ বার এই দুই জেলায় বৃষ্টি কম হয়েছে। বৃষ্টি কম হলে চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অবস্থায় কী করণীয়, তা বোঝার জন্যই আমরা এসেছি।” অনুন্নয়নের কথা অবশ্য মেনে নিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। বলেছেন, “পুরুলিয়া-বাঁকুড়া রাজ্যে উন্নয়নের নিরিখে শেষের দিকে থাকা দু’টি জেলা। এই অবহেলা থেকে বেরোতে আমি দফতরের দায়িত্ব নিয়েই প্রথম এই জেলায় এলাম।”

এ দিনের বৈঠকে অবশ্য শুধু অভিযোগ করেই থেমে থাকেননি সভাধিপতি, বিকল্প চাষ হিসেবে আখ, বাদাম ইত্যদি চাষ করার পরামর্শ দেন। মন্ত্রীর কাছে জেলায় জল ধরে রাখতে ছোট জোড়বাঁধ ও পুকুর সংস্কারে গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ করেন। পূর্ণেন্দুবাবু তাঁর কাছে জানতে চান, তা হলে জেলা পরিষদ কী করবে? সভাধিপতির পাল্টা প্রশ্ন, “জেলা পরিষদের অত তহবিল কোথায়?”

আর কথা বাড়াননি কৃষিমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন