কুর্সি বাঁচল প্রধানের, অনাস্থায় কাত সিমলাপালের উপপ্রধান

প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রত্যাহার করা হয়েছিল আগেই। কিন্তু রেহাই পেলেন না উপপ্রধান। সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলীয় সদস্যদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের তলবি সভায় তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা পাশ হয়ে গেল। মঙ্গলবার সিমলাপাল পঞ্চায়েতের ঘটনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিমলাপাল শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪১
Share:

প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রত্যাহার করা হয়েছিল আগেই। কিন্তু রেহাই পেলেন না উপপ্রধান। সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলীয় সদস্যদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের তলবি সভায় তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা পাশ হয়ে গেল। মঙ্গলবার সিমলাপাল পঞ্চায়েতের ঘটনা।

Advertisement

সিমলাপালের বিডিও সৌমব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব আগেই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল। তবে উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব তোলা হয়নি। এ দিন তা পাশ হয়ে গিয়েছে।” তিনি জানান, উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের জন্যই ওই পঞ্চায়েতে তলবি সভা ডাকা হয়েছিল। পঞ্চায়েতের ১৬ জন সদস্যের মধ্যে ১০ জন উপস্থিত ছিলেন। উপপ্রধান-সহ ছ’জন তৃণমূল সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, সিপিএমের ৭, তৃণমূলের ২ ও একজন নির্দল সদস্য তলবি সভায় উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সকলেই উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানান।

সিমলাপাল গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, পঞ্চায়েতের ১৬টি আসনের মধ্যে ৮টি তে জয়লাভ করেছিল তৃণমূলের প্রতীকে লড়াই করা প্রার্থীরা। একটি আসনে নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থী ও ৭টি আসন পেয়েছিল সিপিএম। নির্দলের সমর্থন নিয়ে বোর্ড গড়েছিল তৃণমূল। প্রধান নির্বাচিত হন তরুলতা লোহার ও উপপ্রধান হয়েছিলেন হাফিজুল মণ্ডল। এই দু’জনের বিরুদ্ধেই সম্প্রতি সিমলাপাল বিডিও-র কাছে নির্দল সদস্য, পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা-সহ পাঁচ সিপিএম এবং দু’জন তৃণমূল সদস্য অনুন্নয়নের অভিযোগ এনে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, এই পঞ্চায়েতের প্রধানের আসনটি তফসিলি জাতি হিসেবে সংরক্ষিত। বর্তমানে শাসকদলের পঞ্চায়েত সদস্যদের মধ্যে এই শ্রেণির যোগ্য সদস্য না থাকায় প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু উপপ্রধানের বিরুদ্ধে তোলা হয়নি।

Advertisement

গত পঞ্চায়েত ভোটের আগেই জঙ্গলমহলের এই ব্লকে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির টিকিট ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের সদস্য দিলীপ পণ্ডা ও যুব তৃণমূল নেতা দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্রের গোষ্ঠীর কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছিল। পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনার পিছনেও এই দুই গোষ্ঠীর বিবাদকেই দায়ী করছেন এলাকার তৃণমূল কর্মীরা। গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে ব্লকের পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির দলীয় টিকিট নিয়ে চম্পট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে। পরে তিনি সমস্ত টিকিট নিজের গোষ্ঠীর লোকেদের দিয়ে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ছড়ায় দিব্যেন্দুবাবুর গোষ্ঠীর মধ্যে। প্রায় প্রতিটি পঞ্চায়েতের আসনেই দিব্যেন্দুবাবুর গোষ্ঠীর লোকেরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে নির্দল হয়ে লড়াই করেছিলেন। ভোটে জিততে কলাগাছকে প্রতীক করে দলবেঁধে জোরদার প্রচারেও নেমেছিলেন তৃণমূল বিক্ষুব্ধেরা। যদিও ভোটের ফল তৃণমূলের পক্ষেই যায়।

তৃণমূল সূত্রের খবর, দিলীপবাবুর দেওয়া প্রার্থীই সিমলাপাল গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান ও উপপ্রধান হয়ে থাকায় এত দিন দিব্যেন্দুবাবুর প্রভাব সেই অর্থে ছিল না এই পঞ্চায়েতে। তাই পঞ্চায়েত সদস্যদের দিয়ে এই অনাস্থা এনে দিব্যেন্দুবাবু নিজের পক্ষের লোকজনদের পঞ্চায়েতে শীর্ষ পদে আনতে চাইছেন। অনাস্থার পরে দিলীপবাবু দিব্যেন্দুবাবুর বিরুদ্ধে সরাসরি এলাকায় সিন্ডিকেট গড়ার অভিযোগ এনেছিলেন। অনাস্থার জন্যে তাঁকেই দায়ী করেছিলেন। যদিও অনাস্থা প্রস্তাবে তাঁর কোনও হাত রয়েছে বলে মানেননি দিব্যেন্দুবাবু। এ দিন অবশ্য দিলীপবাবুর সঙ্গে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে দিব্যেন্দুবাবুর সাফ বক্তব্য, “পঞ্চায়েতের অনাস্থা সংক্রান্ত ঘটনার সঙ্গে আমি কোনও ভাবেই জড়িত নই।” তবে দলের জেলা নেতাদের বারবার আপত্তি সত্বেও কেন উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা তুলে নেওয়া হল না তার উত্তর মেলেনি। সিমলাপাল ব্লক তৃণমুল নেতাদের একাংশের বক্তব্য, সরকারি কিছু প্রকল্প নিয়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন উপপ্রধানের উপরে। আর তাতেই অপসারিত হলেন তিনি। উপপ্রধানের সঙ্গেও এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খা।ঁ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন