বৈঠকের আশ্বাস জেলাশাসকের

কারখানা বন্ধই, ফের পথে রুজিহীন শ্রমিক

এক মাসেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা শিল্পতালুকে বন্ধ থাকা ফেরো অ্যালয় কারখানা খোলা নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি নীরব। প্রশাসনেরও হেলদোল নেই। এরই প্রতিবাদে তৃণমূল, সিপিএম এবং বিজেপি-র শ্রমিক সংগঠন শুক্রবার ফের নেমে পড়ল পথে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৫
Share:

কারখানা খোলার দাবিতে তিন শ্রমিক সংগঠনের অবরোধ শুক্রবার। (নীচে), আটকে পড়েছে শয়ে শয়ে ট্রাক-লরি। —নিজস্ব চিত্র

এক মাসেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা শিল্পতালুকে বন্ধ থাকা ফেরো অ্যালয় কারখানা খোলা নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি নীরব। প্রশাসনেরও হেলদোল নেই। এরই প্রতিবাদে তৃণমূল, সিপিএম এবং বিজেপি-র শ্রমিক সংগঠন শুক্রবার ফের নেমে পড়ল পথে। তাদের সঙ্গে রইলেন বন্ধ কারখানার কর্মীরা। ওই কর্মসূচির জেরে এ দিন বিষ্ণুপুর-সোনামুখী সড়ক এবং বাইপাস রাস্তার চৌমাথায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত থমকে রইল যানবাহন। চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়লেন ওই দুই পথ দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীরা। ঘণ্টা পর ঘণ্টা আটকে রইল পণ্যবাহী শতাধিক ট্রাক-লরি।

Advertisement

২০০০ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের এক শিল্পগোষ্ঠী বিষ্ণুপুর থানার দ্বারিকা ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ সেন্টারে ‘শ্রী বাসবী ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামে ওই ফেরো অ্যালয় কারখানাটি তৈরি করেছিল। গত ১৫ ডিসেম্বর রাতের ডিউটিতে আসা কর্মীদের বের করে দিয়ে গেটে তালা মেরে ‘লক-আউট’ নোটিস ঝুলিয়ে দেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। এক ধাক্কায় কাজ হারান অন্তত ৮০০ শ্রমিক। কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে একযোগে পথে নামে তৃণমূল, সিপিএম এবং বিজেপি। শ্রমিক-কর্মীদের নিয়মনীতি মেনে কাজ করতে না চাওয়ার মানসিকতা ও কাঁচামালের জোগানে টানকেই লক-আউটের কারণ হিসেবে জানিয়েছিলেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকেরা যদিও নিয়ম না মানার কথা অস্বীকার করেছিলেন। প্রশাসনও জানিয়েছিল, কারখানার মালিকপক্ষ আগে সমস্যার কথা না জানিয়ে এবং প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখে লক-আউট ঘোষণা করেছে। এটা বেআইনি। কারখানা খোলার ব্যাপারে দুর্গাপুর ও বিষ্ণুপুরে শ্রমিক সংগঠন, কারখানা কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হলেও কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। এ দিকে, রুজি হারিয়ে চরম সঙ্কটে পড়েছেন ওই ৮০০ শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার।

শুক্রবার সকাল ৯টা থেকেই কারখানার সামনে বিষ্ণুপুর-সোনামুখী সড়ক অবরোধ করে শ্রমিক সংগঠনগুলি। প্রথম দফায় পুলিশ এবং দ্বিতীয় দফায় প্রশাসনের আধিকারিকরা এসে অনুরোধ করলেও অবরোধ মুক্ত করা যায়নি। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র বিষ্ণুপুর ব্লক সভাপতি উদয় ভকত, সিটু নেতা তথা বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক স্বপন ঘোষ এবং বিজেপি প্রভাবিত ভারতীয় জনতা মজদুর মোর্চার বিষ্ণুপুর জেলা সাংগঠনিক সভাপতি অঞ্জন নাগ চৌধুরীরা দাবি করেন, “কারখানা খোলার ব্যাপারে জেলাশাসক বৈঠক না ডাকা পর্যন্ত আমরা সরছি না। প্রশাসন মালিকপক্ষকে ডেকে যত দ্রুত সম্ভব কারখানা খোলার ব্যবস্থা করুক। পাশাপাশি শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা মিটিয়ে দেওয়ারও বন্দোবস্ত করা হোক। এই সব দাবিতেই আমাদের আন্দোলন।” এ ভাবে আচমকা অবরোধ করায় বহু মানুষ যে খুবই অসুবিধায় পড়েছেন, তা মেনে নিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। কিন্তু তাঁদের বক্তব্য, “এই কারখানার সঙ্গে যুক্ত ৮০০ মানুষের এখন না খেতে পেয়ে মরার উপক্রম! তাঁদের কথা ভেবে এমন আন্দোলনে নামা ছাড়া উপায় নেই।”

Advertisement

রাস্তায় বসে পড়ে অবরোধ চালিয়ে যাওয়া ওই কারখানার কর্মী ফেলারাম পাল, বৃন্দাবন চক্রবর্তীদের ক্ষোভ, “দু’মাসের বেতন, আট মাসের এরিয়ার, পিএফ-এর টাকা কিছুই না দিয়ে লক-আউট নোটিস ঝুলিয়ে পালিয়েছে কোম্পানির কর্তারা। দোকানে ধার পাচ্ছি না। সংসার অচল। এ বার সরকার কারখানা খোলার ব্যবস্থা করুক।” এ দিন বিকেলে অবরোধস্থলে আসেন বিডিও (বিষ্ণুপুর) প্রশান্তকুমার মাহাতো। পরে তিনি বলেন, “বুঝিয়েও কাজ হয়নি। আন্দোলনকারীরা কারখানা খোলার বিষয়ে জেলাশাসকের হস্তক্ষেপ দাবি করছেন।”

এ দিন অবরোধে আটকে পড়া একটি বালির লরির চালক উমেশ সিংহ বলেন, “দ্বারকেশ্বর থেকে বালি তুলে ফিরছিলাম। আটকে পড়ে এখানেই সারাদিন শুয়ে বসে কাটাতে হল। জানি না কখন কলকাতার বেহালার বাড়িতে ফিরব।” অবরোধের ফলে বিষ্ণুপুর থেকে সোনামুখী যাওয়ার বাসগুলিকে স্ট্যান্ডে ফিরতে হয়েছে। উল্টো দিকে আটকে থাকা যাত্রীরা হেঁটে ফিরছেন। এমনই এক যাত্রী বিমল রায় বলেন, “কী ঝামেলায় পড়লাম। রিকশাকেও ঢুকতে দিচ্ছে না। ব্যাগপত্র বয়ে নিয়েই হাঁটতে হচ্ছে।”

শেষ পর্যন্ত বিকেল সাড়ে পাঁচটায় তিন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অবরোধ তুলে নিয়ে জানান, জেলাশাসকের সঙ্গে টেলিফোনে তাঁদের কথা হয়েছে। তিনি শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছেন। তার ভিত্তিতেই অবরোধ তুলে নেওয়া হল। বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ওই শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও বন্ধ কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে বসার কথা জানিয়েছি। কারখানা খোলার জন্য সমস্ত রকম চেষ্টা চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন