কন্যাশ্রীর সুফল কি না বিতর্ক শুরু বাঁকুড়ায় উচ্চ মাধ্যমিকেও বাড়ল ছাত্রী

মাধ্যমিকের মতো এ বার উচ্চ মাধ্যমিকেও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে বাঁকুড়ায়। ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের সংখ্যাই বাড়ল। কিন্তু ছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি কন্যাশ্রী প্রকল্পেরই সুফল বলে দাবি করেছেন শিক্ষকদের একাংশ। বিরোধিতাও রয়েছে। আর এ নিয়েই এ বার উচ্চমাধ্যমিকের আগে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৫ ০১:২২
Share:

স্কুলে স্কুলে চলছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি। বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজিয়েট স্কুল।

মাধ্যমিকের মতো এ বার উচ্চ মাধ্যমিকেও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে বাঁকুড়ায়। ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের সংখ্যাই বাড়ল। কিন্তু ছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি কন্যাশ্রী প্রকল্পেরই সুফল বলে দাবি করেছেন শিক্ষকদের একাংশ। বিরোধিতাও রয়েছে। আর এ নিয়েই এ বার উচ্চমাধ্যমিকের আগে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

Advertisement

তবে মাধ্যমিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও হাতির হানা রুখতে বিশেষ সতর্কতা নিচ্ছে বাঁকুড়া বনদফতর। যদিও হাতি উপদ্রুত এলাকাগুলিতে পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি জেলা প্রশাসন। তবে বন দফতর জানিয়েছে, জেলার সোনামুখী, বড়জোড়া, বেলিয়াতোড় রেঞ্জ এলাকায় পরীক্ষা চলাকালীন গাড়িতে চড়ে নজরদারি চালাবে হুলা পার্টি। হাতির দল যাতে কোনও ভাবেই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে না পড়ে তার জন্যও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএফও (উত্তর) সুধীরচন্দ্র দাস। ডিএফও বলেন, “জঙ্গলে হাতির দল রয়েছে। তাই আমরা কড়া সতর্কতা জারি করেছি হাতি উপদ্রুত রেঞ্জগুলিতে। পরীক্ষার দিনগুলিতে যাতে কোনও ভাবেই হাতির জন্য পরীক্ষার্থীদের হয়রানির শিকার না হতে হয়, সে দিকে আমাদের নজর রয়েছে।”

আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। প্রথমদিন পরীক্ষা হবে পুরনো সিলেবাসের। শুক্রবার থেকে নতুন সিলেবাসের পরীক্ষাও শুরু হয়ে যাবে। গতবারের তুলনায় এ বার বাঁকুড়া জেলায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। গতবার জেলায় উচ্চ মাধ্যমিকে পরীক্ষায় বসেছিল ৩৮ হাজার ৫৬৩ জন। এ বছর মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৭ হাজার ৪৯০। গতবারের তুলনায় এ বার ছাত্র ও ছাত্রীর সংখ্যাও বেড়েছে সমান তালে। গতবছর জেলায় ২২ হাজার ৯৬৭ ছাত্র পরীক্ষায় বসেছিল। এ বার সেই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৫৪১। গত বছর ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৫৯৬, এ বার ১৯ হাজার ৯৪৯ জন ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিকে বসছে।

Advertisement

ছাত্রীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার হার বাড়ার ক্ষেত্রে কন্যাশ্রী প্রকল্পের বড় ভূমিকা রয়েছে বলেই দাবি করছেন তৃণমূল শিক্ষাসেলের জেলা সভাপতি গৌতম দাস। তিনি বলেন, “বাঁকুড়া জেলার বহু ছাত্রীর পড়াশোনাই শেষ হয়ে যেত দারিদ্রের কারণে। কন্যাশ্রী প্রকল্পের জেরে সেই সমস্যা এখন মিটে যাওয়ায় ছাত্রীরা উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী হচ্ছে।” তৃণমূল শিক্ষাসেলের বাঁকুড়া ২ ব্লকের আহ্বায়ক তথা বনকাটি হাইস্কুলের শিক্ষক পাপন চৌধুরী বলেন, “আমাদের ব্লকের অধিকাংশ স্কুলেই এখন ছাত্রদের থেকে ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে দেখা যাচ্ছে। এর কারণ অবশ্যই কন্যাশ্রী।” যদিও তৃণমূল শিক্ষাসেলের যুক্তি মানতে নারাজ এবিটিএ-র বাঁকুড়া সদর মহকুমা শাখার সম্পাদক আশিস পান্ডে। তিনি বলেন, “হঠাত্‌ করেই ছাত্রীদের শিক্ষার হারে পরিবর্তন আসেনি। ২০১০ সাল থেকেই সর্বস্তরে মেয়েদের অংশ গ্রহণ বাড়তে দেখা গেছে। এটা অবশ্যই গোটা সমাজের পক্ষে ভাল। তাই শুধু কন্যাশ্রী প্রকল্পকেই এর মূল কারণ বলা যায় না।”

বিষ্ণুপুর হাইস্কুলে।

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পরিচালনার জন্য জেলায় একটি অ্যাডভাইজারি কমিটি গড়া হয়েছে। প্রতিটি সেন্টারেই কাউন্সিলের দু’জন করে ‘নমিনি’ থাকবেন। পরীক্ষাকেন্দ্রগুলির সামনে থাকবে কড়া পুলিশ প্রহরাও। উল্লেখ্য, এ বার নতুন সিলেবাসের প্রশ্নপত্রের পদ্ধতি কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তরের জন্য যে পার্ট-বি প্রশ্নপত্র রয়েছে। তাতেই উত্তর লিখে পরীক্ষার উত্তরপত্রের খাতার সঙ্গে তা জুড়ে দিতে হবে। বাঁকুড়ার ক্ষীরোদপ্রসাদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধানশিক্ষক আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, “কোনও পরীক্ষার্থী যাতে ভুল করে প্রশ্নপত্রটি বাড়ি না নিয়ে চলে যায় সে দিকে শিক্ষকদের সতর্ক থাকতে বলেছি।”

পরীক্ষার দিনগুলিতে যাতে সমস্ত রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকে সে জন্য জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছে জেলা স্কুলশিক্ষা দফতর। জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পঙ্কজ রায় বলেন, “পরীক্ষার দিনগুলিতে বাস চলাচলে যাতে বিঘ্ন না ঘটে সে দিকে জেলা প্রশাসনকে দেখতে বলা হয়েছে। সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা শেষ করাই আমাদের লক্ষ্য।”

জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “হাতি উপদ্রুত এলাকায় বিশেষ গাড়ি চালানোর জন্য আমাদের বলা হয়নি। যদি কেউ আবেদন করেন তাহলে ব্যবস্থা করা হবে।” পরীক্ষার দিনগুলিতে জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপরে পুলিশের তরফে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে বলে আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার।

একনজরে

• পরীক্ষার্থী: ৪৭,৪৯০

• ছাত্র: ২৭,৫৪১

• ছাত্রী: ১৯,৯৪৯

• মোট সেন্টার: ৮০

• গতবারের তুলনায় ছাত্র বেড়েছে: ৪,৫৭৪

• গতবারের তুলনায় ছাত্রী বেড়েছে: ৪,৩৫৩

• আজ বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে পুরনো সিলেবাসের পরীক্ষা।

• শুক্রবার থেকে শুরু হবে নতুন সিলেবাসের পরীক্ষা।

• হাতি উপদ্রুত এলাকায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় মাধ্যমিকের মতোই হুলাপার্টি নজরদারি চালাবে।

বুধবারের ছবি তুলেছেন অভিজিত্‌ সিংহ ও শুভ্র মিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন