কবে সংস্কার হবে শ্যামবাটির সেচ সেতু, উঠছে প্রশ্ন

প্রায় মাস দু’য়েক আগে সেতুটি ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা সংস্কার না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে শান্তিনিকেতন এলাকায়। ভেঙে যাওয়া ওই শ্যামবাটি ক্যানালের সেতুটি মেরামত না হওয়ায় স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে ওই রাস্তার ওপর নির্ভরশীল দেশ, বিদেশের পর্যটকেরা অসুবিধের মুখে পড়ছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫২
Share:

এ ভাবেই দু’মাস ধরে ঝুলে রয়েছে ভেঙে যাওয়া সেচ সেতু। নিজস্ব চিত্র

প্রায় মাস দু’য়েক আগে সেতুটি ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা সংস্কার না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে শান্তিনিকেতন এলাকায়। ভেঙে যাওয়া ওই শ্যামবাটি ক্যানালের সেতুটি মেরামত না হওয়ায় স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে ওই রাস্তার ওপর নির্ভরশীল দেশ, বিদেশের পর্যটকেরা অসুবিধের মুখে পড়ছেন। ওই ভাঙা সেতুর ওপর দিয়ে বিপজ্জনক ভাবে পারাপার করছেন পথ চলতি মানুষ থেকে সাইকেল এবং মোটরবাইক-সহ দু’চাকার গাড়ির আরোহীরা। অবিলম্বে ওই সেতু সংস্কারের দাবি তুলছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

বহন ক্ষমতার বাইরে দিনের পর দিন শান্তিনিকেতন লাগোয়া শ্যামবাটি এলাকায় থাকা স্লুইস গেটের সেচ সেতু দিয়ে বেআইনি ভাবে ভারী যান চলাচল করছিল। ময়ূরাক্ষী সাউথ ক্যানাল ডিভিশনের ওই সেতুটি গত ১১ সেপ্টেম্বর ভেঙে যায়। ওই সেতু ভেঙে যাওয়ার কারণে, শান্তিনিকেতন-সিউড়ি ভায়া কসবা রুটের যান চলাচল বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। ওই রাস্তার ওপর নির্ভরশীল মানুষদের ঘুর পথে প্রায় সাত কিলোমিটার পেরোতে হয়। যদিও, ময়ূরাক্ষী সাউথ ক্যানেল ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়রের দফতর এবং লাগোয়া সেচ কলোনির রাস্তা দিয়ে সকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিন্তু চার চাকার যান এবং ভারী যান চলাচলের ক্ষেত্রে চরম সমস্যায় পড়ছেন স্থানীয়রা। আশপাশের বাসিন্দারা এবং স্কুল পড়ুয়ারা চরম হেনস্থার সম্মুখীন হচ্ছেন। দ্রুত সেচ বিভাগের ওই স্লুইস গেটের সেতু সংস্কারের দাবি তুলছেন স্থানীয়রা।

শ্যামবাটি এলাকার ওই সেতুটি বেশি বড় নয়। কয়েক দশকের পুরনো ওই সেতু দিয়ে জল ধরে রাখা এবং ছাড়ার জন্য রয়েছে স্লুইস গেটের ব্যবস্থাও। এই স্লুইস গেটের মাধ্যমে ময়ূরাক্ষীর জল ওই ক্যানেল দিয়ে সেচের জন্য মুর্শিদাবাদের কান্দি পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সম্পূর্ণ সেচের কাজের জন্য ব্যবহার হলেও, ঘন জনবসতি গড়ে ওঠার কারণে দীর্ঘ দিন থেকে এই সেতুকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন এলাকার বাসিন্দারা। প্রায় দু’মাস হয়ে গেল। অথচ সেতু সংস্কার না হওয়ার কারণে, ওই রাস্তার ওপর নির্ভরশীল এলাকার শতাধিক মানুষ, স্কুল পড়ুয়াদের চরম হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। বোলপুর যাওয়া বা ফেরার জন্য কেউ কেউ আমার কুটির আগের রাস্তা ধরে সোনাঝুরির জঙ্গলের ওপর দিয়ে, আবার কেউ বোলপুর-লালপুল হয়ে প্রান্তিক স্টেশনের রাস্তা ধরে আসা যাওয়া করেন। উভয়ের ক্ষেত্রে প্রায় সাত কিলোমিটারের পথ অতিরিক্ত পার হতে হয়। রাজ্য পূর্ত এবং সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সড়ক বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী ওই রাস্তার ওপর খুব করে ১৩ টন ওজনের যানবাহন যাতায়াত করার কথা। আবার ওই রাস্তার ওপর থাকা ময়ূরাক্ষী সাউথ ক্যানাল ডিভিশনের সেতুর ভারবাহী ক্ষমতাও মেরেকেটে ৩০ টন। তা সত্ত্বেও দিনের পর দিন ওই স্লুইস গেটের সেতু দিয়ে ৫০ টন এবং তার থেকে বেশি শতাধিক মালবাহী গাড়ি চলাচল করায় এমন অবস্থা হয়েছে ওই সেতুর।

Advertisement

অন্য দিকে, স্থানীয় মানুষ এবং পঞ্চায়েতের দাবি মেনে, সেচ সেতু ভাঙার তিন দিন পরে সেচ কলোনির রাস্তা সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য অনুমতি দিয়েছেন ময়ূরাক্ষী সাউথ ক্যানেল ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সঞ্জয় সিংহ। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই ভাঙা সেতুর ওপর দিয়ে বিপজ্জনক ভাবে পারাপার করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় রূপপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের ইন্দ্রজিত্‌ মিত্র বলেন, “সংশ্লিষ্ট দফতরে আমরা পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে অবিলম্বে সেতু সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। অনেক দিন হয়ে গেল। কিন্তু ওই সেতু সংস্কার না হওয়ার ফলে স্থানীয়দের চরম হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে। সেচ কলোনির মধ্য দিয়ে যাতায়তের অনুমতি সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু পথ চলতি মানুষ থেকে শুরু করে মোটরবাইক আরোহীরা কেউ কেউ আবার ওই ভাঙা সেতু দিয়ে পারাপার করছেন।” তিনি জানান, ওই সেতুর ওপর চলাচল বন্ধ রাখার জন্য বালির বস্তা এবং বাঁশের ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছিল।

স্থানীয় সুরশ্রী পল্লির বাসিন্দা সুমনা হাজরা, প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য তথা শ্যামবাটির বাসিন্দা ব্রিজকান্ত ঝা, অমর ঝা, প্রান্তিকের বাসিন্দা চিকিত্‌সক প্রণবকুমার সরকার, গাড়ি চালক বিশ্বজিত্‌ ঘোষ, স্কুল পড়ুয়া শুভজিত্‌ ধারা বলেন, “দ্রুত সেচ সেতু সংস্কার না হওয়ায় খুবই অসুবিধের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত ওই সেচ কলোনি মধ্য দিয়ে পারাপারের অনুমতি আছে ঠিকই, কিন্তু গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে এবং রিকশা বা অটো নিয়ে যেতে সমস্যা হয়। আবার ওই ভাঙা সেতুর ওপর দিয়ে স্থানীয়রা পারাপার করছেন। যে কোনও সময়ে বড়সড় বিপদ হতে পারে। দ্রুত সেতু সংস্কার হলে কোনও সমস্যাই থাকবে না। আপাতত ওই রাস্তার ওপর চলাচলের জন্য অস্থায়ী ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি ‘বেইলি’ সেতুর ব্যবস্থা করুক।”

সংশ্লিষ্ট দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সঞ্জয় সিংহ বলেন, “সেচ দফতরের কলোনির মধ্য দিয়ে অস্থায়ী ভাবে স্থানীয়রা যাতায়তের আর্জি জানিয়েছিলেন। চার চাকা এবং ভারী যান ছাড়া পথ চলতি মানুষ সাইকেল, মোটরবাইক নিয়ে যাতায়াত করার আর্জি দফতর মঞ্জুর করেছে। তবে ওই সেতু সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যেই ই-টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ কাজকর্ম শুরু করার কথা আছে। আমরা দ্রুত সেতু সংস্কারের ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন