কমিটি হল না কেন, প্রশ্ন তৃণমূলে

দলনেত্রীর নির্দেশে পুরনো কমিটি ভেঙে দেওয়ার পরে পেরিয়ে গিয়েছে চার মাস। অথচ, শাসক দলের নতুন কমিটি এখনও গঠন হয়নি পুরুলিয়ায়। আর এই নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে তৃণমূলেরই অন্দরে। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের একাংশের অভিযোগ, দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো জেলা কমিটি গঠন করার ক্ষেত্রে গড়িমসি করায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দলের সাংগঠনিক কাজকর্মে।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

আদ্রা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০৮
Share:

দলনেত্রীর নির্দেশে পুরনো কমিটি ভেঙে দেওয়ার পরে পেরিয়ে গিয়েছে চার মাস। অথচ, শাসক দলের নতুন কমিটি এখনও গঠন হয়নি পুরুলিয়ায়। আর এই নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে তৃণমূলেরই অন্দরে।

Advertisement

তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের একাংশের অভিযোগ, দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো জেলা কমিটি গঠন করার ক্ষেত্রে গড়িমসি করায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দলের সাংগঠনিক কাজকর্মে। পাশাপাশি ছড়াচ্ছে গোষ্ঠীকোন্দল। সে জন্যই জেলার তৃণমূল পরিচালিত বিভিন্ন পঞ্চায়েতে প্রধানদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনছেন দলেরই সদস্যেরা। অনাস্থায় সমর্থন জানিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলছে সিপিএম-সহ বিরোধী দলগুলি। জেলায় দলেরই ঢিলেঢালা অবস্থার জন্য অনাস্থা আনা সদস্যদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। শান্তিরামবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, “নতুন কমিটি গঠিত না হওয়ার নেতিবাচক প্রভাব দলের সংগঠনে পড়েনি।”

তৃণমূল সূত্রের খবর, গত ৩০ মার্চ কলকাতায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সভায় পুরুলিয়া-সহ বিভিন্ন জেলার পুরনো কমিটিগুলি ভেঙে দিয়েছিলেন দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়। জেলা সভাপতি হিসাবে শুধু শান্তিরাম মাহাতোকে পুনর্নির্বাচিত করা হয়েছিল। দলের জেলা যুব ও ছাত্র, এই দুই শাখা সংগঠনের সভাপতিও নির্বাচিত হন সেই সভায়। যত দ্রুত সম্ভব নতুন কমিটি গঠন করার নির্দেশ শান্তিরামবাবুকে দিয়েছিলেন দলনেত্রী। কিন্তু, চার মাস পরেও নতুন জেলা কমিটি গঠন হয়নি। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা সভাপতি জেলা কমিটির নতুন সদস্যদের পাশাপাশি ব্লক কমিটির সভাপতিদের নির্বাচন করবেন। পরে ব্লক সভাপতিরা ব্লক কমিটি ও অঞ্চল কমিটিগুলি গঠন করবেন। কিন্তু, ব্লক সভাপতিদের নির্বাচনের কাজও করে উঠতে পারেননি শান্তিরামবাবু। ফলে, পুরুলিয়ায় দলের মধ্যে ত্রিস্তরীয় একটি কমিটিও গঠিত হয়নি।

Advertisement

দলের নিচুতলার কর্মীদের একটা বড় অংশের প্রশ্ন, কেন কমিটিগুলি গঠনে গড়িমসি করা হচ্ছে। দল সূত্রেই জানা যাচ্ছে, এর পিছনে মূলত দু’টি কারণ রয়েছে। প্রথমত, পুরনো জেলা কমিটিতে কার্যকরী সভাপতি হিসাবে থাকা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং চেয়ারম্যান কে পি সিংহদেও-এর স্থান নতুন কমিটিতে কী হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি শান্তিরামবাবু। দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর দাবি, নতুন কমিটির দু’টি খসড়া প্রস্তাব প্রদেশ নেতৃত্বের কাছে জমা দিয়েছিলেন শান্তিরামবাবু। তাতে তিনি সুজয়বাবু এবং কে পি সিংহদেওকে রাজ্যের কোর কমিটিতে রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই প্রস্তাবের বিরোধিতা হওয়ায় পরে সুজয়বাবুর সঙ্গে নবেন্দু মাহালিকে যৌথ ভাবে কার্যকরী সভাপতি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, দলের মধ্যে নবেন্দুবাবু শান্তিরামবাবুর অনুগামী বলেই পরিচিত। কিন্তু, এ ক্ষেত্রেও এখনও প্রদেশের তরফে সবুজ সঙ্কেত শান্তিরামবাবুকে দেওয়া হয়নি।

দ্বিতীয়ত, জেলার ২০টির মধ্যে দশটি ব্লকের সভাপতি নির্বাচন নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট হয়েছে। এই ব্লকগুলির পুরনো সভাপতিদের কাজকর্ম নিয়ে ব্লকের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর বিস্তর অভিযোগ থাকায় শান্তিরামবাবু চেয়েছিলেন, ওই ব্লকগুলির সভাপতি বদল করতে। কিন্তু, তাতে পুরনো সভাপতিদের অনুগামীরা তুমুল আপত্তি তোলায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চূড়ান্ত আকার নিতে পারে, সেই আশঙ্কায় ব্লক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তও কার্যকর করতে পারেননি জেলা সভাপতি। সরাসরি জেলা সভাপতির নাম না নিয়েও সুজয়বাবুর তীর্যক মন্তব্য, “সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার জন্যই নতুন কমিটি গঠন হচ্ছে না বলে আমার ধারণা!”

বস্তুত, জেলা কমিটি গঠন ও ব্লক সভাপতিদের নির্বাচন প্রক্রিয়া ঝুলে থাকায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও এখনও বিভিন্ন স্তরে মনিটারিং কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি পুরুলিয়া জেলায়। কয়েক মাস আগে কলকাতায় দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায় পুরুলিয়ার নেতাদের নিয়ে সভা করে পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে ব্লক স্তরের কাজকর্ম পরিচালনা করার জন্য মনিটারিং কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। জেলা তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ অংশের বক্তব্য, পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সমিতির কাজকর্ম দেখভাল করার জন্য এই ধরনের মনিটারিং কমিটির যথেষ্টই গুরুত্ব রয়েছে। অথচ শান্তিরামবাবু সেই কমিটি গঠনেও গড়িমসি করছেন বলে দলের ওই অংশের অভিযোগ।

সুজয়বাবুর কথায় “জেলার সংখ্যাগরিষ্ঠ পঞ্চায়েত সমিতি ও বেশির ভাগ পঞ্চায়েতই আমাদের দখলে রয়েছে। ফলে, দলেরই স্বার্থে সেখানে উন্নয়নমূলক কাজকর্ম স্বচ্ছতার সাথে পরিচালনা করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে এই মনিটারিং কমিটি দ্রুত গড়া দরকার। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে দলের শীর্ষ নেতৃত্বর নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সেই কমিটি গঠন হয়নি। যার প্রভাব পড়ছে দলের সংগঠনে।”

এখানেই শেষ নয়। কমিটি গঠন নিয়ে এই দেরির মধ্যে দলের বিক্ষুব্ধদের একাংশ জেলা সভাপতির পদেও ‘সর্বক্ষণের সভাপতি’-র দাবি তুলতে শুরু করেছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বান্দোয়ান, বাঘমুণ্ডি, ঝালদা থেকে দলের কিছু নেতা-কর্মী কলকাতায় গিয়ে তৃণমূল ভবনে দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে সর্বক্ষণের সভাপতি হিসাবে কাউকে পুরুলিয়ায় দলের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। ওই অংশের বক্তব্য, শান্তিরামবাবু গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী হওয়ায় তাঁর পক্ষে জেলায় দল ও সাংগঠনিক কাজকর্মে সময় দেওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

তবে, এই দাবি ওঠার পিছনে মন্ত্রীর বিরুদ্ধ-গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে বলেই অভিযোগ করছেন শান্তিরামবাবুর অনুগামীরা। তাঁদের দাবি, মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি দলের সংগঠন ভালভাবেই সামলাচ্ছেন শান্তিরামবাবু। মন্ত্রী নিজেও এই সব সমালোচনাকে বিশেষ আমল দিচ্ছেন না। শান্তিরামবাবু বলেছেন, “দলের মধ্যে কোনও সমস্যা নেই। নতুন কমিটি দ্রুত গঠন করা হবে। তার প্রক্রিয়াও চলছে।” তাঁর আরও দাবি, কমিটি না থাকার প্রভাব সংগঠনে পড়ছে না। কারণ, পুরনো ব্লক সভাপতিদেরই আপাতত কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন