কর্তাদের আরও ভাল কাজ করার পরামর্শ দিলেন মমতা

বড় কোনও শিল্প নয়। শিল্পতালুকের জন্য শিবপুর মৌজার অধিগৃহীত ৩০০ একরের অর্ধেক জমিতেই টাউনশিপ গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার দুপুরে বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠের প্রশাসনিক জনসভায় এ কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি জমিদাতাদের চুক্তি অনুযায়ী জমির দাম মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন।

Advertisement

অরুণ মুখোপাধ্যায় ও মহেন্দ্র জেনা

বোলপুর শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৪ ০০:২৬
Share:

শিক্ষাশ্রী প্রকল্পে এক পড়ুয়াকে আর্থিক সাহায্য করছেন মুখ্যমন্ত্রী। ডাকবাংলো মাঠে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

বড় কোনও শিল্প নয়। শিল্পতালুকের জন্য শিবপুর মৌজার অধিগৃহীত ৩০০ একরের অর্ধেক জমিতেই টাউনশিপ গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার দুপুরে বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠের প্রশাসনিক জনসভায় এ কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি জমিদাতাদের চুক্তি অনুযায়ী জমির দাম মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বোলপুরে একটা জায়গা আছে। সেখানে ৫০ একর জমিতে বিশ্ব ক্ষুদ্র বাজার গড়ব বলে ঠিক করেছি। শিবপুরে ১৫০ একর জমিতে আমরা একটি নতুন টাউনশিপ করে দেব।” এক দশক ধরে পড়ে থাকার পরে ইতিমধ্যেই ওই অধিগৃহীত জমির প্রায় পাঁচ একর জমিতে একটি আইটি পার্ক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

Advertisement

এ দিন অবশ্য জেলার জন্য একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা ঘোষণার আগেই প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন মমতা। সেখানে রাজ্যের পাশাপাশি জেলার প্রশাসনিক কর্তারা হাজির ছিলেন। বেলা ১টা থেকে আড়াইটে পর্যন্ত বোলপুরের গীতাঞ্জলি পেক্ষাগৃহে ওই বৈঠক চলে। জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন নিয়ে যেমন আলোচনা হয়, তেমনই কিছু ক্ষেত্রে কাজ নিয়ে অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী কর্তাদের ধমকও দেন বলে খবর। প্রশাসন সূত্রের খবর, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী তারাপীঠ-সহ অন্য পাঁচটি (৫১ পীঠের পাঁচটি) ধর্মীয় পর্যটনকেন্দ্রে আরও উন্নয়নের কাজ করার কথা জানিয়েছেন। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ‘প্যাকেজ ট্যুর’ গড়ে তোলার নির্দেশ দেন তিনি। ইলামবাজার ব্লকের জয়দেবে প্রস্তাবিত ফিল্মসিটিও বাতিল হয়েছে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী সেখানে একটি ইকো-ট্যুরিজম পার্ক করার কথা ঘোষণা করেন। জেলায় বেশ কিছু নতুন রুটে বাস চালুর কথাও বলেন।

এর আগে মুখ্যমন্ত্রী লাভপুরে একটি ফুড প্রসেসিং ইউনিট খোলার কথা জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু সেখানেও একচুলোও কাজ এগোয়নি। তা নিয়ে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ধমকের সুরেই মমতা সংশ্লিষ্ট সচিবকে জানিয়ে দেন, ওই ইউনিট গড়ার কাজ যেন তাড়াতাড়ি শুরু হয়ে যায়। অন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজও ঠিকমতো না এগোনোয় মুখ্যমন্ত্রীর ধমক খেয়েছেন আরও কয়েক জন সচিব। তবে, মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সব থেকে বেশি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের কাজ নিয়ে। দ্রুত সমস্যা মেটানোর নির্দেশও দেন। বৈঠকে বিশেষ করে জেলার বিভিন্ন ব্লকের বিডিওদের কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজে বেশ কিছু পরামর্শও দেন। সেই সঙ্গে গীতাঞ্জলি প্রকল্প, স্কুলের মিড-ডে মিলের মান, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কাজ খতিয়ে দেখার নির্দেশও তিনি বিডিওদের দেন। প্রত্যেকটি ব্লকের বিডিওকে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সামনে উঠে দাঁড়িয়ে ব্লকের নানা উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরতে হয়। কাজ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও মুখ্যমন্ত্রী শেষে তাঁদের আরও ভাল ভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন।

Advertisement

প্রচণ্ড রোদের কারণে জনসভা অনেকটাই এগিয়ে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠক সেরে দুপুর ২টো ১৫ মিনিট নাগাদ তিনি বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠে পৌঁছে যান। মঞ্চে তখন ছিলেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, ডাব্লবিএসআরডিএ চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডল, জেলার শাসক দলের সমস্ত বিধায়কেরা। শুরুতেই মমতা বলেন, “আমার তিনটের সময়ে মিটিং করার কথা ছিল। প্রচণ্ড রোদ। এই গরমের মধ্যে মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই এক ঘণ্টা আগে এসেছি।” এর পরেই জেলার জন্য নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের লম্বা ফিরিস্তি দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নতুন রুটের বাস, ২০০টি নো-রিফিউজাল ট্যাক্সি, রাজনগর ও খয়রাশোলে পানীয় জলের প্রকল্প, ন্যায্য মূল্যের ডায়াগোনস্টিক সেন্টার, পাঁচামিতে কয়লা উৎপাদন কেন্দ্র, প্রতিটি ব্লকে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট প্রভৃতি।

বেলা ৩টে ১৫ নাগাদ সভা শেষ করে জেলার মানুষকে একগুচ্ছ আশ্বাস দিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রীর উবাচ
১০ জুলাই, ২০১৪, বোলপুরের জনসভায়

• আমরা জেলায় জেলায় মিটিম করছি। জেলার মানুষকে আর কলকাতায় যেতে হয় না। আমরাই চলে আসি। ডিএম, এসপি সবাইকে নিয়ে বৈঠক করছি।

• প্রান্তিক নষ্ট হবে না। শান্তিনিকেতন, শ্রীনিকেতন নষ্ট হবে না। এই জমিটা (শিবপুর) আমাদের ডব্লিউবিআইডিআইসি-র জমি। যে টাকা কৃষকদের দেওয়ার কথা পার্থ (চট্টোপাধ্যায়) চুক্তি করে গিয়েছিলেন। আগের সরকার দেয়নি। সে টাকা আমরা দিয়ে দেব।

• এক মাসের মধ্যেই সিউড়ি থেকে হাওড়া, বক্রেশ্বর, শিলিগুড়ি, বহরমপুর বাস দেওয়া হচ্ছে। ২০০ নন রিফিউজাল ট্যাক্সি দেওয়া হচ্ছে। আর যদি আপনারা কেউ গাড়ি দিতে চান, তা হলে জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন