লিজ ক্লাবের পার্কে ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
সন্ধ্যা নামলেই জমজমাট থাকত ক্লাব। এক দল সদস্য ব্যাডমিন্টন খেলতেন। কয়েক জন টেবিল টেনিস ও বিলিয়ার্ড খেলতেন। চলত তাস খেলাও। আবার অনেকে ওই ক্লাবে আসতে শুধুই আড্ডা দেওয়ার জন্য। পাঁচ বছর আগের এই দৃশ্যটা দেখা যেত সিউড়ির ‘লিজ ক্লাবে’। সময়ের সঙ্গে সব কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। সেই রকম জমজমাট দৃশ্য বর্তমানে দেখা যায় না।
১৯১৬ সালে তৎকালীন জেলাশাসক সমাজসেবী গুরুসদয় দত্তের অনুরোধে হেতমপুরের মহারাজা রামরঞ্জন চক্রবর্তীর পুত্র সদানিরঞ্জন চক্রবর্তীর বসত বাড়িটি দান করেন। সর্বসাকুল্যে ৩ পয়েন্ট ১৬ একর জায়গা (বাড়ি সহ) তিনি দান করেন। জেলা গ্রন্থাগারের পিছনে ওই বাড়িটি রূপান্তরিত হয় ‘লিজ ক্লাব’ নামে। মূলত সরকারি আমলা এবং শহরের প্রতিষ্ঠিত মানুষজনদের আড্ডাস্থল হিসেবে ওই ক্লাব গড়ে ওঠে। বর্ধমান বিভাগের তৎকালিন কমিশনার ডি.এইচ.লিজ (আইসিএস) নামে ক্লাবের নামকরণ হয়। ক্লাব উদ্বোধনের আগে ওই ক্লাবের পক্ষ থেকে লিজ সাহেবকে একটি সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওই ক্লাবের স্থায়ী সভাপতি জেলাশাসক। সদস্যও নেওয়া হয়েছে এবং এখনও নেওয়া হয় শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের।
কিন্তু বর্তমানে ওই ক্লাবে সন্ধ্যায় গুটি কয়েক মানুষ যান সময় কাটানোর জন্য। খেলাধুলো প্রায় উঠেই গিয়েছে। তবু ওই ক্লাবের সদস্যরা বুক চিতিয়ে গর্বের সঙ্গে বলেন, ‘আমি লিজ ক্লাবের সদস্য।’ ইন্ডোরে খেলাধুলো বন্ধ হলেও বিকেল হলেই প্রচুর কচিকাঁচার দল খেলাধুলো করতে আসে ওই ক্লাবের শিশু উদ্যানে। প্রাক্তন সরকারি আধিকারিক সুকুমার সিংহ বলেন, “ইন্ডোর খেলাধুলো ছাড়াও, আভিজাত্যের অঙ্গ হিসেবে মদ্যপানও চালু ছিল।” তাঁর দাবি, ১৯২৫ সালের নভেম্বর মাসে লর্ড লিটন সিউড়িতে সরকারি কাজে আসেন। সেই সময়ে তিনি লিজ ক্লাব পরিদর্শন করেন এবং তাতে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। লিজ ক্লাবের জায়গার মধ্যে রয়েছে দীননাথ দাস মেমোরিয়াল হল। সেটি এখন একটি সিনেমা হল-এ পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে অবশ্য মোটা অঙ্কের ভাড়া পায় ক্লাব। ক্লাবের মধ্যে শিশু ছাড়াও প্রবীণদের জন্য একটি মনোরম পার্কও গড়ে তোলা হয়েছে। রয়েছে একটি অত্যাধুনিক জিম। তবে ওই জিম শুধুমাত্র সদস্যরাই ব্যবহার করতে পারবেন। ক্লাবের সহ-সভাপতি শৈলেন ঘোষ বলেন, “কর্মব্যবস্তার জীবনে সেই জৌলুস নেই। তবে ক্লাবের আয়ের একটা অংশ গরিব এবং মেধাবী পড়ুয়াদের জন্য ব্যয় করা হয় প্রতি বছর। ক্লাবের একটা তো ঐতিহ্য রয়েছে।”