খাতড়ায় চালককে মার, বাস বন্ধে দুর্ভোগ

প্রথম বাসটি দেরিতে ছাড়ায় দ্বিতীয় বাসের কর্মীরা চটে গিয়েছিলেন। দু’পক্ষের কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি ও বচসাতেই তখন বিষয়টি মিটে গিয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সকালের সেই ঘটনাই বিকেলে খাতড়া বাসস্ট্যান্ডে রক্তারক্তি কাণ্ড বাঁধিয়ে দিল। দেরি করে বাস ছাড়ার প্রতিবাদ করা দ্বিতীয় বাসটি দিনের শেষে যখন বাসস্ট্যান্ডে ঢুকল তখনই বড় গোলমাল শুরু হয়। অভিযোগ, এলাকার কিছু লোকজনকে নিয়ে সেই বাসের চালককে বেধড়ক মারধর করল প্রথম বাসটির হেল্পার। পুলিশ পরে অভিযুক্তদের একজনকে গ্রেফতার করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খাতড়া শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ০১:১৭
Share:

ভরসা ছোট গাড়ি। খাতডা-সিমলাপালের পথে বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

প্রথম বাসটি দেরিতে ছাড়ায় দ্বিতীয় বাসের কর্মীরা চটে গিয়েছিলেন। দু’পক্ষের কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি ও বচসাতেই তখন বিষয়টি মিটে গিয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সকালের সেই ঘটনাই বিকেলে খাতড়া বাসস্ট্যান্ডে রক্তারক্তি কাণ্ড বাঁধিয়ে দিল। দেরি করে বাস ছাড়ার প্রতিবাদ করা দ্বিতীয় বাসটি দিনের শেষে যখন বাসস্ট্যান্ডে ঢুকল তখনই বড় গোলমাল শুরু হয়। অভিযোগ, এলাকার কিছু লোকজনকে নিয়ে সেই বাসের চালককে বেধড়ক মারধর করল প্রথম বাসটির হেল্পার। পুলিশ পরে অভিযুক্তদের একজনকে গ্রেফতার করে।

Advertisement

মঙ্গলবার বিকেলে খাতড়া বাসস্ট্যান্ডের এই ঘটনার জেরে বুধবার দিনভর জেলা থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে রইল দক্ষিণ বাঁকুড়ার মহকুমা শহর খাতড়া। বাসচালককে মারধর করায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বাস কর্মীরা এ দিন খাতড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস বের করেননি। ফলে জেলার অন্যান্য রুটে বাস চললেও খাতড়ায় কোনও বাসই এ দিন ঢোকেনি। এ দিকে, বিএ (পার্ট ২)-এর এ দিন বাংলা পরীক্ষা ছিল। কিন্তু বাস না চলায় ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন পরীক্ষার্থীরা। সর্বস্তরের মানুষই এই ঘটনায় সমস্যায় পড়েছেন।

রানিবাঁধ–বর্ধমান ও রাইপুর–কলকাতাগামী দু’টি বাসের মধ্যে গণ্ডগোল বাধে মঙ্গলবার সকালে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতাগামী বাসটি খাতড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ছাড়ার সময় সকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ। তার ঠিক ১৫ মিনিট পরেই খাতড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বের হয় বর্ধমান যাওয়ার বাসটিও। দু’টি বাসই বাঁকুড়া ও দুর্গাপুর হয়ে যায়। তবে কলকাতাগামী বাসটি খাতড়া থেকে বেরিয়ে সাহেববাঁধ হয়ে বাঁকুড়া যায়। অন্যদিকে বর্ধমানগামী বাসটি মুকুটমণিপুর হয়ে বাঁকুড়ার রাস্তা ধরে। কিন্তু সম্প্রতি কংসাবতী ড্যাম থেকে জল ছাড়ায় কেচোন্দাঘাট জলের তলায় চলে যাওয়ার ফলে কলকাতাগামী বাসটিও ইদানীং মুকুটমণিপুর হয়েই বাঁকুড়ার রাস্তা ধরছে। এতে দু’টি বাসের রুট একই হয়ে পড়ছে। তাই ব্যবসায়ীক কারণে এই দু’টি বাসের রেষারেষি চলছিল কয়েক দিন ধরেই। এই পরিস্থিতিতেই গোলমাল পাকে।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে কলকাতাগামী বাসটি খাতড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মিনিট ১৫ পরে ছাড়ে। বিষয়টি নিয়ে বচসা বাধে বর্ধমানগামী বাসের কর্মীদের সঙ্গে। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রথম দফায় দু’পক্ষের বাস কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি ও বচসা হলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। অন্যান্য বাসকর্মীদের মধ্যস্থতায় ঝামেলা মিটে যায়। তবে বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি কলকাতাগামী বাসটির হেল্পার খাতড়ার স্থানীয় ছেলে ধনঞ্জয় কুণ্ডু। বচসার পরেই সে বাস থেকে নেমে যায়। সে দিন আর কাজে যোগ না দিয়ে সোজা বাড়ি ফিরে আসে। এরপর বিকেল প্রায় সাড়ে ৪টা নাগাদ বাসস্ট্যান্ডে ফেরে রানিবাঁধ-বর্ধমান বাসটি।

বাসটি স্ট্যান্ডে ঢোকার অপেক্ষায় আগে থেকেই এলাকার কিছু লোকজন এনে অপেক্ষা করছিল ধনঞ্জয়। বাস ঢোকার পরেই বাসের চালক বর্ধমানের পুড়ষা এলাকার বাসিন্দা শেখ আনিসুর রহমানকে নামিয়ে ধনঞ্জয় ও তার সঙ্গীরা ঘেরাও করে মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ। রড দিয়ে আনিসুরের মাথায় আঘাত করা হয়। অন্য বাসকর্মীরা ওই চালককে উদ্ধার করতে ছুটে এলে হামলাকারীরা পালায়। আনিসুরকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে খাতড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চোট গুরুতর হওয়ায় বিকেলেই তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে জখম চালককে কলকাতায় স্থানান্তর করা হয়েছে বলে বাঁকুড়া মেডিক্যাল সূত্রে জানা গিয়েছে।

অন্যদিকে ওই হেল্পার ধনঞ্জয়-সহ জয়দেব কুণ্ডু, গনেশ কুণ্ডু ও পার্থ বাউরির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার বিকেলেই খাতড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রানিবাঁধ-বর্ধমান রুটের বাসকর্মীরা। অভিযুক্তেরা সকলেই খাতড়া শহরের বাসিন্দা। কিন্তু রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার না করায় বুধবার সকাল থেকেই খাতড়া বাসস্ট্যান্ডে কর্মবিরতি শুরু করেন বাসকর্মীরা। কর্মবিরতি তুলতে খাতড়ার বাসকর্মী সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসেন খাতড়া মহকুমা শাসক অভিষেক তিওয়ারি। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও সমাধান সূত্রে বেরিয়ে আসেনি। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “বাসকর্মী সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন খাতড়ার মহকুমা শাসক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেই আমি আশাবাদী।’’

খাতড়ার মোটর মজদুর সংগঠনের সম্পাদক শেখ আবদুল ওদুদ বলেন, “সময় সূচী নিয়ে বাসকর্মীদের মধ্যে ঝামেলা হয়। তবে খাতড়ায় যা হল তা নজির বিহীন। ওই বাস চালককে এক দল লোক মিলে বাসস্ট্যান্ডে ফেলে রড দিয়ে মারধর করল। দোষীদের কড়া শাস্তি না হলে এই ঘটনা অন্যত্রও ঘটতে পারে।” জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক দীপক সুকুল বলেন, “বিষয়টি পুরোপুরি শ্রমিকদের। ওরা নিজে থেকে আন্দোলন না তুললে আমরা চাপ দিতে পারব না।”

অন্যদিকে, দিনভর খাতড়া রুটে বাস না চলায় ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। এ দিন পার্ট ২-এর বাংলা পরীক্ষা ছিল। ইঁদপুরের শালডিহা কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল খাতড়া কলেজে। খাতড়া আসার বাস না পাওয়ায় ছোট গাড়ি ও ট্রেকারে করে ওই ছাত্রছাত্রীদের আসতে হয়েছে। শালডিহা কলেজের ছাত্রী তরুলতা লায়েক, শুভ চক্রবর্তীদের ক্ষোভ, “বাস যে পাব না তা রাতেও জানতে পারিনি। সকালে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে জানতে পারলাম খাতড়ায় কোনও বাস যাবে না। মাথায় যেন বাজ পড়ল। অনেক্ষণ অপেক্ষার পরে একটি ট্রেকারে চড়ে বাদুড় ঝোলা হয়ে কোনও মতে খাতড়ায় পৌঁছালাম।” বাঁকুড়ার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক কল্যাণপ্রসাদ ষন্নিগ্রহী বলেন, “আমি খাতড়ার নিত্য যাত্রী। বাসে প্রতিদিন স্কুলে যাই। এ দিন বাস না চলায় খুবই সমস্যায় পড়তে হল।”

তবে আজ বৃহস্পতিবার বাস চলাচল স্বাভাবিক হয় কি না রাত পর্যন্ত তা খোলসা করেননি কেউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন