খন্দ-পথে জল, বিষ্ণুপুরে এসে নাকাল পর্যটকেরা

বর্ষা দাপিয়ে না এলেও সামান্য বৃষ্টিতেই মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরের রাস্তাঘাটের দৈন্য অবস্থা ফুটে উঠেছে। শহরের অলিগলি তো বটেই, পর্যটকেরা যে রাস্তাগুলি দিয়ে মন্দির দেখতে যান, সেই রাস্তাগুলিও জল-কাদায় ভরে উঠেছে। ফলে মন্দির দেখতে এসে বিষ্ণুপুরের রাস্তার হাল দেখে বিরক্ত পর্যটকেরা। যদিও রাজ্যের মন্ত্রী তথা বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় রাস্তা সংস্কার না হওয়ার জন্য এখনও বামফ্রন্ট সরকারকেই এতদিন কাজ না করার জন্য দুষেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৪ ০১:০১
Share:

জল থইথই দলমাদলের পথ। বিষ্ণুপুরের অন্য দর্শনীয় জায়গাগুলি রাস্তারও একই অবস্থা। —নিজস্ব চিত্র।

বর্ষা দাপিয়ে না এলেও সামান্য বৃষ্টিতেই মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরের রাস্তাঘাটের দৈন্য অবস্থা ফুটে উঠেছে। শহরের অলিগলি তো বটেই, পর্যটকেরা যে রাস্তাগুলি দিয়ে মন্দির দেখতে যান, সেই রাস্তাগুলিও জল-কাদায় ভরে উঠেছে। ফলে মন্দির দেখতে এসে বিষ্ণুপুরের রাস্তার হাল দেখে বিরক্ত পর্যটকেরা। যদিও রাজ্যের মন্ত্রী তথা বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় রাস্তা সংস্কার না হওয়ার জন্য এখনও বামফ্রন্ট সরকারকেই এতদিন কাজ না করার জন্য দুষেছেন।

Advertisement

ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের মহানির্দেশক ইউনেস্কো-র কাছে অসামান্য শিল্পকৃতির জন্য বিষ্ণুপুরকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য স্মারক’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। কিন্তু বিষ্ণুপুরের পর্যটনস্থল লাগোয়া বহু রাস্তারই শ্রী ফেরেনি। খানা-খন্দ তো ছিলই, এই বর্ষায় সেই সব রাস্তায় গর্তে জল জমে গিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।

বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত দলমাদল কামান দেখতে দলমাদল রোড হয়ে যেতে হয়। এখন সেই রাস্তায় জায়গায় জায়গায় ছোটখাটো ডোবার আকার নিয়েছে। রাস্তাটি বিষ্ণুপুর হাইস্কুল মোড় থেকে শুরু হয়ে দলমাদল কামান ও ছিন্নমস্তা মন্দিরের পাশ দিয়ে বাঁ দিক ঘুরে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের অফিস ছুঁয়ে লালগড় প্রকৃতি উদ্যান পর্যন্ত গিয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, “কয়েক বছর আগে রাস্তায় একবার পিচ পড়েছিল। সে সব কবেই ধুয়ে-মুছে গিয়েছে। তার উপরে রাস্তার পাশে নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষায় জল জমছে। পর্যটকেরা এখানে এসে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন, তাতে বিষ্ণুপুরবাসী হিসেবে মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে।”

Advertisement

ওই রাস্তার উপরেই রয়েছে বেশ কয়েকটি পোড়ামাটির শিল্পকাজের দোকান। সেই সব ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ, “বহু জায়গায় পিচ উঠে যাওয়ায় রাস্তাটি এখন খানা খন্দে ভরে গিয়েছে। রিকশায় চেপে ঘুরলে ঝাঁকুনিতে পর্যটকদের কোমর ভেঙে যাওয়ার জোগাড়। তাঁদের অনেকেই আমাদের কাছে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বর্ষায় নোংরা জল ছিটকে অনেকের জামা-কাপড়ও নষ্ট হয়।”

ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ অফিসের এক কর্মীর ক্ষোভ, “বিষ্ণুপুরের অনন্য শৈলির মন্দিরগুলিকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য স্মারক’ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছেন মহানির্দেশক। এ নিয়ে আলোচনাও চলছে। কিন্তু এখানকার রাস্তার শ্রী ফেরানো নিয়ে কোনও উদ্যোগ নেই প্রশাসনের।” বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শুধু দমলাদল রোডই নয়, এই শহরের চারপাশে বহু দর্শনীয় মন্দির রয়েছে। কিন্তু ওই সব জায়গায় যাওয়ার রাস্তাগুলির কমবেশি একই হাল। সাধারণ বাসিন্দাদের এতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু পুরকর্তৃপক্ষ সব দেখেও মনে হয় চোখ বন্ধ করে রয়েছে।

রামানন্দ কলেজের মোড় থেকে রাজদরবার কিংবা পাথর দরজা পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তাটিও বহু দিন সংস্কার হয়নি। ফলে গাড়ি চলে লাফিয়ে লাফিয়ে। খানা-খন্দে পড়ে রিকশার যাত্রীরাও নাকাল হন। সম্প্রতি বিষ্ণুপুরে বেড়াতে আসা কলকাতার সল্টলেকের বাসিন্দা কাজল চক্রবর্তী শ্যামরাই (পাঁচচূড়া) মন্দির দেখতে দেখতে জানান, “কী অনুপম এখানকার মন্দির শৈলি! টেরাকোটার কাজ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। কিন্তু রাস্তার এই দৈন দশা কেন, বুঝতে পারছিনা।”

এই রাস্তার পাশেই রয়েছে বিখ্যাত জোড়বাংলা, লালজিউ, রাধেশ্যাম, কৃষ্ণ-বলরাম এবং মৃন্ময়ী মন্দির। আছে মল্ল রাজাদের বীরত্বের নিদর্শন পাথর দরজা। প্রতিবছর এই রাস্তা দিয়ে দেশ বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক মন্দির দেখতে আসেন। কিন্তু রাস্তার হাল ফেরানো হয় না। মল্লরাজাদের অপূর্ব স্থাপত্যকীর্তি ১৬০০ খৃষ্টাব্দে তৈরি রাসমঞ্চ লাগোয়া রাস্তাটিরও মেরামতির দরকার বলে মনে করেন স্থানীয় মানুষজন। তাঁদের প্রশ্ন, এতে তো সবার কাছে বিষ্ণুপুরের সুনামই নষ্ট হয়। তা কি প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরা বোঝেন না?

এ বিষয়ে বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান তথা রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “৩৪ বছরের বাম জমানায় উন্নয়নের টাকা চেয়েও পাইনি। মাত্র তিন বছর আমরা রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছি। উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। একে একে বিষ্ণুপুরের সব রাস্তা সংস্কার করা হবে।” তাঁর আশ্বাস, পর্যটন দফতরের সঙ্গে এলাকার নতুন কিছু প্রকল্প নিয়েও আলোচনা এগোচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন