গ্যালারি ভেঙে মৃত্যু বালকের

বিরতির পরে সবে মাঠে বল পড়েছে। আচমকাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল ভিড়ে ঠাসা বাঁশের গ্যালারি। বাবার সঙ্গে গ্যালারির পাশে খেলা দেখছিল প্রসেনজিৎ মাহাতো (১০)। ভেঙে পড়া গ্যালারির বাঁশ ও লোকজনের চাপে ঘটনাস্থলেই মারা গেল সে। রবিবার দুপুরে পুরুলিয়ার মানবাজার থানার মাকড়কেন্দি গ্রামের ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৯ জন। দুর্ঘটনার পরেই খেপে গিয়ে দর্শকরা গ্যালারিতে আগুন লাগিয়ে দেন। ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজক সংগঠন ‘মানভূম খেড়িয়া কল্যাণ সমিতি’-র ক্যাম্প অফিসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

সমীর দত্ত

মানবাজার শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২৭
Share:

গ্যালারি ভাঙার পরে। বালকের মৃত্যু ঘিরে ছড়ায় রোষ।—নিজস্ব চিত্র।

বিরতির পরে সবে মাঠে বল পড়েছে। আচমকাই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল ভিড়ে ঠাসা বাঁশের গ্যালারি। বাবার সঙ্গে গ্যালারির পাশে খেলা দেখছিল প্রসেনজিৎ মাহাতো (১০)। ভেঙে পড়া গ্যালারির বাঁশ ও লোকজনের চাপে ঘটনাস্থলেই মারা গেল সে।

Advertisement

রবিবার দুপুরে পুরুলিয়ার মানবাজার থানার মাকড়কেন্দি গ্রামের ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৯ জন। দুর্ঘটনার পরেই খেপে গিয়ে দর্শকরা গ্যালারিতে আগুন লাগিয়ে দেন। ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজক সংগঠন ‘মানভূম খেড়িয়া কল্যাণ সমিতি’-র ক্যাম্প অফিসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

কয়েক জন উদ্যোক্তাকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। খবর পেয়ে পুলিশ ও দমকল কর্মীরা গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। পরে স্থানীয় এক বাসিন্দার অভিযোগে পুলিশ সম্পাদক পরশুরাম মাহাতোকে গ্রেফতার করে। আহতদের মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতাল ও পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

Advertisement

ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা ওই গ্রামে প্রায় ২০০ ফুট দীর্ঘ বাঁশের গ্যালারি বেঁধে খেলা দেখার আয়োজন করা হয়েছিল। গ্যালারির টিকিট ৫০ টাকা এবং সামনে চেয়ারের টিকিট ১০০ টাকা করা হয়েছিল। মানবাজারের বিডিও সায়ক দেব বলেন, “উদ্যোক্তারা প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই গ্যালারি তৈরি করে ও টিকিট বিক্রি করে নিয়ম ভেঙেছেন।”

জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, “ওঁরা পুলিশেরও অনুমতি নেননি। গাফিলতির বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।” এ দিকে পুলিশের এই অভিযোগ অর্থাৎ অনুমতি না নেওয়ার কথা পুরোপুরি স্বীকার করেছেন ধৃত পরশুরাম মাহাতোও। তাঁর দাবি, “আসলে এর আগে কখনও অনুমতির প্রয়োজন হয়নি। এ বারও তাই ও দিকটা নিয়ে খুব একটা ভাবিনি। টিকিট না কেটেও অনেক লোক গ্যালারিতে খেলা দেখতে উঠে পড়াতেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে।”

কলকাতা, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা থেকে ১৬টি দল এনে শনিবার থেকে দু’দিনের এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। গত বছর এই খেলাকে কেন্দ্র করে ভিড় বেশি হওয়ায় এ বার আয়োজক সংগঠনের সদস্যেরাই বাঁশ ও কাঠ দিয়ে প্রায় ৫০ ফুট উঁচু ওই গ্যালারি তৈরি করেছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মাঠের অন্য অংশের মতো গ্যালারিতেও ঠাসা ভিড় হয়েছিল। বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ হঠাৎ গ্যালারি দুলতে শুরু করে। তার পরেই মাচা ভেঙে গিয়ে দর্শকরা নীচে বাঁশের খুঁটির উপর পড়ে যান। অনেকে মাটিতে আছড়ে পড়েন। ভেঙে পড়া গ্যালারির বাঁশ-কাঠের নীচে কয়েক জন চাপা পড়েন।

সেখান থেকেই স্থানীয় কাশিডি গ্রামের বাসিন্দা প্রসেনজিতের দেহ উদ্ধার করা হয়। তার বাবা রোহিণী মাহাতো বলেন, “ছেলেকে পাশে নিয়েই বসেছিলাম। গ্যালারি ভাঙতেই ও কোথায় যে ছিটকে গেল! পরে দেখি একগাদা বাঁশের নীচে ছেলেটার নিথর দেহ পড়ে রয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন