গাড়ি থামিয়ে বাসিন্দাদের আর্জি, ‘মুখ্যমন্ত্রী সমস্যা এখনও আছে’

কয়েক বছর আগে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে তিনি গ্রামবাসীর অভাব অভিযোগ শুনেছিলেন, ফের সেখানে দাঁড়িয়েই একই অভিযোগ শুনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকেই প্রশাসনকে সমস্যাগুলি সমাধানে তৎপর হতে তিনি নির্দেশ দিয়ে গেলেন। গ্রামবাসীদের ফোন নম্বরও চেয়ে নিলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হুড়া শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৪ ০১:৪৯
Share:

কয়েক বছর পরে ফের বৃহস্পতিবার মমতার গাড়ি থামান হুড়ার শিয়ারা গ্রামের বাসিন্দারা। ঝাঁপি মান্ডি, চাঁদমণি মুর্মুরা অভিযোগ করেন, এখনও বার্ধক্যভাতা পাননি। শুক্রবার প্রদীপ মাহাতোর তোলা ছবি।

কয়েক বছর আগে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে তিনি গ্রামবাসীর অভাব অভিযোগ শুনেছিলেন, ফের সেখানে দাঁড়িয়েই একই অভিযোগ শুনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকেই প্রশাসনকে সমস্যাগুলি সমাধানে তৎপর হতে তিনি নির্দেশ দিয়ে গেলেন। গ্রামবাসীদের ফোন নম্বরও চেয়ে নিলেন তিনি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিকেলে হুড়ার লালপুর টেলিকম ময়দানের প্রশাসনিক সভা শেষে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় বাঁকুড়ার দিকে যাওয়ার সময় হুড়ার শিয়ারায় গ্রামবাসী রাস্তার পাশে হাত দেখিয়ে তাঁর গাড়ি থামাতে অনুরোধ জানান। রাস্তার ধারে আদিবাসী বৃদ্ধ-প্রৌঢ়দের দেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে কাছে পেয়ে গ্রামের বাসিন্দারা মনে করিয়ে দেন, কয়েক বছর আগে প্রশাসনিক বৈঠক সেরে পুরুলিয়া থেকে তিনি বাঁকুড়ায় যাওয়ার সময় এই গ্রামেই নেমেছিলেন। সে দিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গ্রামবাসীরা যে সব সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন, তার কিছু মিটলেও এখনও এলাকার অনেক সমস্যা রয়ে গিয়েছে।

সে বার মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁরা পানীয় জলের সমস্যা, কুয়ো ও জলাশয় সংস্কারের দাবি জানিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার ফের সে কথা মনে করিয়ে দিতেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের কাছে জানতে চান পানীয় জলের অভাব মিটেছে কি না। বাসিন্দারা জানান, গ্রামটি জাতীয় সড়কের দু’পাশে। গ্রামের একাংশে অর্থাৎ রাস্তার একদিকে একটি মাত্র নলকূপ বসেছে। অন্য দিকে নলকূপ বসেনি। ফলে ওই এলাকার বাসিন্দাদের ঝুঁকি নিয়ে ব্যস্ত রাস্তা পেরিয়ে অন্য প্রান্তে নলকূপ থেকে জল আনতে যেতে হয়। একশো দিনের প্রকল্পের কাজও তেমন পাওয়া যায় না। পেলেও মজুরি পেতে অনেক দেরি হচ্ছে বলে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুযোগ করেন।

Advertisement

ললিত মান্ডি নামে এক যুবকের কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান তিনি কী কাজ করেন। ললিত বলেন, “গ্রামে গোরু চরাই। কিন্তু বার্ধক্যভাতা পাচ্ছে না। পঞ্চায়েত থেকে যাতে ওই ভাতা পাওয়া যায়, আপনি একটু দেখবেন?” মুখ্যমন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন, পঞ্চায়েতে তাঁরা দরখাস্ত করেছেন কি না। পঞ্চায়েতে তা জমা দেওয়া আছে বলে তিনি জানান। প্রৌঢ় হরিপদ হেমব্রম মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, এলাকার বাসিন্দারা অত্যন্ত গরিব। বেশির ভাগ মানুষেরই দিনমজুরি করে সংসার চলে। অনেকেই দু’টাকা কেজি চাল পায় না। ঠিক মতো ঘরও নেই। শুক্রবার শিয়ারা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ-পর্ব নিয়েই আলোচনা চলছে। বৃদ্ধা চাঁদমণি মুর্মু বলেন, “আমরা গরিব মানুষ বার্ধক্যভাতা পাই না। সে কথাই মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি।” প্রশাসন সূত্রের খবর, গ্রামবাসীর কাছে অভাব-অভিযোগের কথা শুনে মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী এবং এলাকার বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়াকে দ্রুত সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন।


বড়জোড়ায় একটি কারখানার নতুন ইউনিটের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।

হুড়ার বিডিও সুব্রত পালিত বলেন, “গ্রামে একটা নলকূপ হয়েছে। তা ছাড়া যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন তাঁদের বিপিএল কার্ড নেই। বিপিএল কার্ড ছাড়া তো বার্ধক্যভাতা দেওয়া যাবে না।” কাশীপুরের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া বলেন, “ওই গ্রামে নলকূপের পাশাপাশি কুয়ো সংস্কার করা হয়েছে। সরকারি নানা প্রকল্প থেকে ঘর বা বার্ধক্যভাতা কী ভাবে দেওয়া যায় তা আমরা দেখছি।”

গ্রামের বাসিন্দারা অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন, একটি পরিবারে একজনের বিপিএল কার্ড রয়েছে। তার ভিত্তিতেই তো এ ধরনের প্রকল্পগুলি থেকে সুবিধে দেওয়ার কথা। এই গ্রাম যে পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সেই রখেড়া-বিসপুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান বৈশাখী মাহাতোও বলেছেন, “সবার যে বিপিএল কার্ড নেই এমনটা নয়। বেশ কয়েকজনের বিপিএল কার্ড রয়েছে। তাঁরা বার্ধক্যভাতার জন্য আবেদন করেছেন। ক্রম অনুসারে তাঁদের ওই প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।” তিনি জানান, পুকুরটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। সংস্কারের ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে।

জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “গ্রামবাসী তাঁদের কিছু অভাব-অভিযোগের কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। তাঁদের কারও কারও বিপিএল কার্ড নেই। তবু আমরা দেখছি যাতে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা যায়।” হরিপদ হেমব্রম বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের টেলিফোন নম্বর আমাদের দিয়ে গিয়েছেন। আমাদের ফোন নম্বরও তিনি নিয়ে গিয়েছেন। কাজগুলো কেমন হচ্ছে, তিনি আমাদের ওই নম্বরে জানাতে বলেছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন