গাঁয়ের প্রাচীন পুজো, এককাট্টা সবাই

জমিদারি গিয়েছে। জমিদারও নেই। কিন্তু জমিদারবাড়ি প্রচলিত কালীপুজো আজও চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রামের মানুষ। শুধু ‘নমোঃ নমোঃ’ করে দায় সারা নয়, শতাব্দী প্রাচীন জমিদারি পুজোর হৃতগৌরব ফেরাতে রীতিমতো এককাট্টা হয়েছেন তাঁরা। ময়ূরেশ্বর থানার একটি ছোট্ট গ্রাম গোপীনাথপুর। অধিকাংশের জীবিকাই চাষবাস। প্রচলিত রয়েছে, একসময় ওই গ্রামে আমোদপুর লাগোয়া সাংড়ার সত্যেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমিদারি ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০১:১৯
Share:

গোপীনাথপুরে তৈরি হচ্ছে ৪৫ ফুট উচু কালীমূর্তি। ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।

জমিদারি গিয়েছে। জমিদারও নেই। কিন্তু জমিদারবাড়ি প্রচলিত কালীপুজো আজও চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রামের মানুষ। শুধু ‘নমোঃ নমোঃ’ করে দায় সারা নয়, শতাব্দী প্রাচীন জমিদারি পুজোর হৃতগৌরব ফেরাতে রীতিমতো এককাট্টা হয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

ময়ূরেশ্বর থানার একটি ছোট্ট গ্রাম গোপীনাথপুর। অধিকাংশের জীবিকাই চাষবাস। প্রচলিত রয়েছে, একসময় ওই গ্রামে আমোদপুর লাগোয়া সাংড়ার সত্যেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমিদারি ছিল। প্রায় দেড়শো বছর আগে তিনি-ই ওই গ্রামে মহা ধুমধাম করে অগ্রহায়ণ মাসে কালীপুজোর প্রচলন করেন। পুজো চালানোর জন্য কিছু জমিও বরাদ্দ করেন। ক্রমে জমিদারি যায়। পুজোয় উত্‌সাহ হারান জমিদারের পরবর্তী প্রজন্ম। বরাদ্দ জমি নিয়ে সমস্যায় পড়েন পুরোহিত। জমির আয়ে নিত্য পুজোর ব্যবস্থা করতেই হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। পুজো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তখন এগিয়ে আসেন গ্রামবাসীরাই। চাঁদা তুলে পুজোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তাঁদের মনের মধ্যে কোথাও একটা খুঁত তখনও থেকে গিয়েছিল। কারণ, নিজেদের সামর্থ্যের মধ্যে যে পুজোর আয়োজন করা হতো, তা ছিল নিতান্তই নিয়মরক্ষার মতো। এ বারে সেই আক্ষেপ ঘুচতে চলেছে গ্রামবাসীদের। দয়াময়ীতলা সংলগ্ন মাঠে তৈরি হচ্ছে ৪৫ ফুট উচ্চতার কালী এবং ৩৫ ফুট লম্বা শিবমূর্তি। উদ্যোক্তাদের দাবি, জেলায় এর আগে এত বৃহদাকার মূর্তি হয়নি। নির্মীয়মাণ ওই মূর্তি দেখতেই এখন থেকে ভিড় জমছে। আগামী ২১ নভেম্বর গোটা গ্রাম মাতবে পুজোয়।

শুধু মূর্তিতেই থেমে নেই আড়ম্বর। বসছে দশ দিন ব্যাপী মেলাও। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বাউল, পঞ্চরস-সহ থাকছে নানা অনুষ্ঠানও। তাই সাজো সাজো রব পড়ে গিয়েছে গ্রামজুড়ে। বধূ শম্পা মণ্ডল, অম্বিকা মণ্ডলরা বলেন, “কালীপুজো উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনরা আসবেন। তাই দুর্গাপুজোর মতোই নবান্নের জোগাড়ের পাশাপাশি নাড়ু-মুরকি তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছি!” ব্যস্ত ছোটরাও। নবম শ্রেণির নয়ন মণ্ডল, অষ্টম শ্রেণির রিম্পা মণ্ডলরা জানায়, “দুর্গাপুজোয় গ্রামের দোকানে তবু বাজি-পটকা পাওয়া যায়। কালীপুজোর জন্য শহরের দাদা-দিদিদের আনতে বলেছি। এ ছাড়া তো কালীপুজো জমবে না।”

Advertisement

এ দিকে, ওই গ্রামেরই বাসিন্দা সুধীর মণ্ডল, রেণুপদ মণ্ডলরা জানান, ছোটবেলায় বাপ-ঠাকুরদার মুখে জমিদারের পুজোর নানা রমরমার কথা শুনেছেন। বর্তমান প্রজন্ম সেই রমরমা ফিরিয়ে তাঁদের গৌরব বৃদ্ধি করছে। আয়োজক সংস্থা গোপীনাথপুর যুব গোষ্ঠীর পক্ষে নিখিল মণ্ডল, রাকেশ মণ্ডলরা আবার বলছেন, “বছর কুড়ি আগেও একবার মিহির মণ্ডল, অরুণ মন্দল, উত্তম মণ্ডল, তামাল মণ্ডল প্রমুখের নেতৃত্বে এই ধরনের আয়োজন হয়েছিল। নানা সমস্যায় তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি। এ বার থেকে কোনও প্রতিকূলতাই আমাদের গ্রামকে দমাতে পারবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন