গর্তে ডাম্পার, ১২ ঘণ্টা বন্ধ যান চলাচল

বেহাল রাস্তার খানাখন্দে পড়ে প্রায় বারো ঘণ্টা ধরে আটকে রইল দু’টি পাথর ভর্তি ডাম্পার। গোটা সময়টা জুড়ে পুরোপুরো যান চলাচল বন্ধ থাকল সাঁইথিয়া-বহরমপুর রাস্তায়। এমনকী, আটকা পড়ে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের গাড়িও। শেষমেশ পুলিশের উপস্থিতিতে এলাকার মানুষই হাত লাগিয়ে ডাম্পার সরিয়ে রাস্তা যানজট মুক্ত করল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৪ ০১:০৫
Share:

সাঁইথিয়া-বহরমপুর রাস্তায় এমনই বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।

বেহাল রাস্তার খানাখন্দে পড়ে প্রায় বারো ঘণ্টা ধরে আটকে রইল দু’টি পাথর ভর্তি ডাম্পার। গোটা সময়টা জুড়ে পুরোপুরো যান চলাচল বন্ধ থাকল সাঁইথিয়া-বহরমপুর রাস্তায়। এমনকী, আটকা পড়ে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের গাড়িও। শেষমেশ পুলিশের উপস্থিতিতে এলাকার মানুষই হাত লাগিয়ে ডাম্পার সরিয়ে রাস্তা যানজট মুক্ত করল।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ সাঁইথিয়ায় লাউতোড় মোড়ের কাছে ঘটনাটি ঘটে। তার জেরে রাত থেকে ওই রাস্তা দিয়ে আর কোনও গাড়ি যাতায়াত করতে পারেনি। আটকে পড়ে রাস্তার দু’ধারে গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে যায়। দু’টি গাড়ি এমন আড়াআড়ি ভাবে আটকে পড়ে, যার জেরে মোটর বাইকের পাশ করার জায়গাও ছিল না। মৎস্যমন্ত্রী অন্য রাস্তা ধরে গন্তব্যস্থলের দিকে চলে গেলেও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ এত সহজে মেটেনি। দুপুরে একটি ডাম্পারকে সরানো গেলে মানুষের সাময়িক দুর্ভোগ মেটে। তখন রাস্তার একপাশ দিয়ে আটকে পড়া গাড়িগুলিকে পাস করানো হয়। যন্ত্রাংশ ভেঙে যাওয়ায় অন্য ডাম্পারটিকে সন্ধ্যা অবধি সরানো যায়নি।

স্থানীয় সূত্রের খবর, সাঁইথিয়া ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কার্যালয় থেকে বাসস্ট্যান্ডের দিকে কিছুটা যেতেই বাঁ দিকে পড়ে নতুন ব্রিজের রাস্তা। এলাকার মানুষের অভিযোগ, ঠিকমতো সংস্কার না হওয়ায় দীর্ঘ দিন ধরে রাস্তাটি বেহাল হয়ে পড়ে রয়েছে। মাঝে মধ্যেই তার হাঁটু সমান গর্ত। যে কোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। অথচ এই রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে গণ্যবাহী গাড়ি, বিভিন্ন রুটের বাস যাতায়াত করছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রাস্তার ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করেন না। তার উপরে রয়েছে নিয়মিত ভাবে অতিরিক্ত বালি ও পাথর বোঝাই ভারি গাড়ির জুলুম। সব মিলিয়ে যত দিন গিয়েছে রাস্তার হাল তত খারাপের দিকে গিয়েছে।

Advertisement

এ দিন যে জায়গায় ডাম্পার দু’টি খারাপ হয়ে পড়ে তার সামনেই স্থানীয় স্বপন মণ্ডলের গাড়ি সারানোর গ্যারেজ। স্বপনবাবু বলেন, “রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে দু’টি পাথর ভর্তি ডাম্পার রাস্তার গর্তে পড়ে আর উঠতে পারেনি। নানা রকম চেষ্টা করেও গাড়ি দু’টি ওঠানো যায়নি।” সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পৌছয়। শেষমেশ বেশ কিছুটা পাথর নামিয়ে ফেলে গাড়ি দু’টি তোলার চেষ্টা শুরু হয়। এলাকার মানুষের চেষ্টায় দুপুর ১২টা নাগাদ একটি ডাম্পারকে তোলা সম্ভব হয়। কিন্তু অপর ডাম্পারটি এমন ভাবে গর্তে পড়ে গিয়েছিল যে উঠতে গিয়ে তার যন্ত্রাংশ ভেঙে যায়। অবশ্য তত ক্ষণে একপাশ দিয়ে যান চলাচল শুরু করা হয়।

রাস্তা বন্ধ থাকায় এ দিন ওই পথ দিয়ে যাওয়া বিভিন্ন রুটের বাস চলেনি। ওই রাস্তা দিয়েই স্কুলের গাড়ি চালান ইসমাইল শেখ, পলাশ মণ্ডল, বাসচালক সোনা মণ্ডল, ট্রাক চালক রফিক খানরা বলেন, “আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাই। রাস্তার অবস্থা ভয়ঙ্কর। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তখন সব দোষ গাড়ি চালকের উপরে পড়বে।” বাসমালিক ষষ্ঠী ঘোষ, পতিতপাবন দে-রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রাস্তাটি নিয়ে প্রশাসন একে বারেই চিন্তিত নন, তা এ দিনের ঘটনাতেই প্রমাণিত হয়।” রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা পিডব্লিউডি-র গরহাজিরা নিয়েই এলাকায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় বিজেপি নেতা জয়দেব পাল বলেন, “ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কিছু ক্ষণ পথ অবরোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবে তা আর করিনি।” তবে, খুব শীঘ্রই দলের তরফে ওই রাস্তা সারানোর দাবিতে আন্দোলনে নামা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

প্রশাসনিক গাফিলতির কথা স্বীকার করে নিয়েছে খোদ সাঁইথিয়ার পুরপ্রধান তৃণমূলের বিপ্লব দত্ত বলেন, “রাস্তাটি দীর্ঘ দিন ধরে খানাখন্দে ভর্ত। রাস্তা সারানোর ব্যাপারে একাধিক বার পূর্ত দফতরকে বলেও কোন কাজ হয়নি।” তিনি জানান, পুরসভার উদ্যোগে ওই রাস্তা সারানোর প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। কিন্তু বর্ষা শুরু হয়ে যাওয়ায় তা আর করা সম্ভব হয়নি। তবে, বৃষ্টি থামলেই কাজ শুরু হবে বলে তাঁর আশ্বাস। অন্য দিকে, ব্রিজের অপর প্রান্তের রাস্তাটি স্থানীয় হরিসড়া পঞ্চায়েতের এলাকায় পড়ে। প্রধান বেদন ঘোষের দাবি, “রাস্তা সারানোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহুবার আবেদন করা হয়েছে, তারা কিছুই করেনি। এ বার জেলা পরিষদের দ্বারস্থ হব।” তবে, প্রাথমিক ভাবে রাস্তার গর্তগুলি বুজিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করার আশ্বাস তিনি দিয়েছেন। জেলার পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস সরকার বলেন, “রাস্তাটি সংস্কারের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হয়ে গিয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ শুরু করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন