ঘোষণার এক বছরেই পাঠ শুরু, কাজ তবু ঢের বাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার এক বছরের মধ্যেই অনুমোদন পেয়ে পঠনপাঠন শুরু করতে যাচ্ছে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়। স্নাতকোত্তর স্তরে ১১টি বিষয়ে ছাত্র ভর্তির আবেদনপত্র বিলি শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করেই আপাতত বাঁকুড়া ১ ব্লক অফিস চত্বরে আড়াইতলার একটি সরকারি ভবনেই ১২টি ঘর নিয়ে ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০১:৩২
Share:

ক্লাসঘরে ডাঁই করে রাখা বেঞ্চ।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার এক বছরের মধ্যেই অনুমোদন পেয়ে পঠনপাঠন শুরু করতে যাচ্ছে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়। স্নাতকোত্তর স্তরে ১১টি বিষয়ে ছাত্র ভর্তির আবেদনপত্র বিলি শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করেই আপাতত বাঁকুড়া ১ ব্লক অফিস চত্বরে আড়াইতলার একটি সরকারি ভবনেই ১২টি ঘর নিয়ে ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয় মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন ছিল। জেলা প্রশাসন-সহ সমস্ত স্তরের মানুষ এগিয়ে এসে তাঁর সেই স্বপ্নকে সত্যি করতে সাহায্য করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন তৈরির কাজও শুরু হয়েছে।”

Advertisement

দীর্ঘদিন ধরেই পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি ছিল। বামফ্রন্ট সরকারের শেষ পর্যায়ে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার জন্য সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন রাজ্য মন্ত্রিসভা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের জন্য জায়গা বাছাই করা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। সিপিএমের দুই জেলা নেতৃত্বের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কার্যত দড়ি টানাটানি চলে। শেষে সরে যায় বাঁকুড়া জেলা নেতৃত্ব। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় পায় পুরুলিয়া। বাঁকুড়াকে পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হবে বলে রাজ্য সরকার আশ্বাস দিলেও তা করে যেতে পারেনি। তৃণমূল সরকার কিন্তু গোড়াতেই বাঁকুড়ার শিক্ষানুরাগী মানুষের ইচ্ছাপূরণে এগিয়ে আসে।

গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে খাতড়ার একটি জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, বাঁকুড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়া হবে। সে দিনই উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে জেলায়। ঘুচে যায় বিশ্ববিদ্যালয় না পাওয়ার অভিমান। জেলা সিপিএম নেতৃত্বও সরকারের এই সিদ্ধান্ত শুনে ঢোঁক গিলে স্বাগত জানান। এতদিন কলেজের পাঠ চুকোনোর পরে উচ্চশিক্ষার জন্য কাছেপিঠের মধ্যে মেদিনীপুর বা বর্ধমান ছুটতে হত এই জেলার ছেলেমেয়েদের। তাই মুখ্যমন্ত্রীর মুখে জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার আশ্বাস পেয়ে সে দিন আশায় বুক বাঁধলেও ঠিক কবে থেকে তা চালু হবে তা নিয়ে সংশয় ছিলই।

Advertisement

তবে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কাজে দ্রুততা আনতে তৎপর হয়েছিলেন জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। তাঁর সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়েছেন জেলা শাসক বিজয় ভারতীও। অরূপবাবু নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রায় সাড়ে তিন একর জমি দান করেন। কয়েকমাস আগে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বাঁকুড়া শহর লাগোয়া মিথিলায় এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তার উদ্বোধন করে যান। কিছুদিনের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। এ বার শুরু হতে যাচ্ছে পঠনপাঠন।

এই ভবনেই শুরু হচ্ছে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়। তবে, এখনও কাজ বাকি।

উপাচার্য জানান, বাঁকুড়া শহর লাগোয়া তিলাবেদিয়া ও মিথিলা এলাকায় প্রায় ১৫ একর জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে এসেছে। আরও বহু মানুষ জমি দান করতে এগিয়ে এসেছেন। এ ছাড়াও সরকারি কিছু খাস জমিও বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়ার ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে কথা চলছে। আপাতত এই ১৫ একর জমিতেই দু’টি ক্যাম্পাস গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। অরূপবাবু বলেন, “রাজ্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন তৈরির জন্য ১৫ কোটি এবং পঠনপাঠনের সঙ্গে যুক্ত উন্নয়নমূলক কাজে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।” তাঁর মতে, এই বিশ্ববিদ্যালয় মুখ্যমন্ত্রীর তরফে জেলাবাসীর কাছে বড় উপহার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর লগ্নে অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবে পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েইছে। স্থায়ী ভাবে এখনও শিক্ষক পাওয়া যায়নি বলে আপাতত অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করে ১১টি বিষয়ে পঠনপাঠন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপাচার্য জানিয়েছেন, শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়েছে। কর্মী নিয়োগ করার বিষয়েও চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “এ বার আমরা বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত, সাঁওতালি ও ট্রাইবাল স্টাডিজ, সমাজকর্ম, ইতিহাস, দর্শন, এডুকেশন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আইন ও গণিত বিষয়ে স্নাতকোত্তরের পাঠ শুরু করছি। দু’বছরে মোট চারটি সেমেস্টারে এই বিষয়গুলিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করানো হবে।” তিনি জানান, বাঁকুড়া-সহ বিভিন্ন জেলার পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের শাখা থেকে ওই আবেদনপত্র বিলি শুরু হয়েছে। আগামী ৫ অগস্টের মধ্যে আবেদনপত্র তোলা ও জমা দিতে হবে।

শুক্রবার পোয়াবাগানের বাঁকুড়া ১ ব্লক অফিস চত্বরে গিয়ে দেখা যায় একটি ভবনের দেওয়ালে সাঁটানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লেখা বোর্ড। ক্লাসঘর-সহ ভবনের বিভিন্ন অংশে মেরামতির কাজ চলছে। ছাত্রছাত্রীদের বেঞ্চ, টেবিল বিভিন্ন ঘরে ডাঁই করে রাখা আছে। উপাচার্য জানান, আপাতত অস্থায়ী ভাবেই এই সরকারি ভবনে পঠনপাঠন শুরু করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গড়ার কাজ শেষ হলে সেখানেই ক্লাস শুরু হবে।”

পঠনপাঠন শুরু হলেও এখনও জেলার কোনও কলেজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আসেনি। এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, “আমাদের পরিকাঠামো গড়ার কাজ সবে শুরু হয়েছে। আগামী দেড় বছরের মধ্যেই জেলার কলেজগুলি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় এসে পড়বে বলেই আমি আশাবাদী।”

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্জিকিউটিভ কমিটির অন্যতম সদস্য তথা বাঁকুড়া সারদামণি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থ গুপ্ত বলেন, “জেলায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় একদিকে যেমন ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা হল, তেমনই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর থেকে চাপও অনেকটা কমবে। এতে শিক্ষার পরিবেশ আরও ভাল হবে বলেই মনে করছি।’’

ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন