কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল আঠারো মাসেই। কিন্তু জমিজটকে কেন্দ্র করে বাসিন্দাদের একাংশের বার বার বাধায় ৫ বছরেও শেষ করা যায়নি। মঙ্গলবার ফের চাকরির দাবিতে আটকে গেল নলহাটি থানার জগধারী গ্রাম সংলগ্ন ব্রাহ্মণী নদীর উপর নির্মিত রেল সেতুর কাজ। প্রায় শেষের মুখে রেল লাইন সংযোগের কাজ। কিন্তু শেষ হওয়ার মুখে আবারও কাজে বাধা পেয়ে চিন্তায় পড়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
এর আগে একই দাবিতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আন্দোলনের সময় রেলের আধিকারিকেরা জানিয়েছিলেন, প্রায় নব্বই শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। আন্দোলন না হলে ছ’মাসের মধ্যে নতুন রেললাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। কিন্তু ছ’মাসের জায়গায় এগারো মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও কাজ শেষ হয়নি। এরই মধ্যে নভেম্বর মাসের ২১ তারিখ থেকে স্থানীয় জগধারী, পানিটা, করিমপুর গ্রামের জমিদাতারা (যাঁরা এতদিন ‘কৃষি জমি রক্ষা কমিটি’ করে আন্দোলন চালিয়ে এসেছেন) বৈঠকের পরে তাঁরা জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ চেক চেক নিলেও চাকরির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন। আন্দোলনকারী প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, কৈলাশ কেশরী, শৈলজা দত্ত বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন ক্ষতিপূরণ হিসেবে রেলে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখনও সেই চাকরি দেওয়ার জন্য রেল দফতর থেকে কোনও কাগজ আমাদের হাতে দেওয়া হয়নি। অথচ রেলসেতু নির্মাণ ও রেল লাইন বসানোর কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। কেবলমাত্র রেললাইনের সংযোগের কাজ বাকি আছে। এই অবস্থায় আমাদেরকে দেওয়া চাকরির প্রতিশ্রুতি যদি কার্যকর করা না হয়, তা হলে আমরা নতুন রেল লাইনে ট্রেন চলাতে করতে দেব না।”
আন্দোলনকারীদের দাবি, ১১ ডিসেম্বর রামপুরহাট মহকুমাশাসক আমাদের নিয়ে বৈঠকে জানিয়েছিলেন, রেল কর্তৃপক্ষ আমাদের দেওয়া জমা কাগজপত্র খতিয়ে দেখছেন। আন্দোলন থেকে আমাদের বিরত থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু কোনও ফল না মেলায় আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। মঙ্গলবার সকালে রেলের আধিকারিকেরা এলাকায় আসার পর মহিলাদের নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়। তাঁরা চাকরির দাবিতে অনড় থাকেন। এ দিকে গন্ডগোলের আশঙ্কায় রেলপুলিশ এবং নলহাটি থানার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে ১১ জুলাই বন্যার সময় ব্রাহ্মণী নদীর সেতুটির স্তম্ভ জলের তোড়ে হেলে যায়। এর ফলে রেল লাইন বেঁকে যায়। প্রাথমিক ভাবে রেল লাইন ঠিক করার পর সেতুটি নতুন ভাবে নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০০৮ সাল থেকে কাজ শুরু হয়। বেসরকারি জমি রেল সরকার থেকে ২০১১ সালের মার্চে পেয়ে যায়। ইতিমধ্যে রেলের কাছে ৩০-৩৫ জন চাকরির জন্য আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন বলে আন্দোলনকারীদের দাবি। নলহাটি ১ ব্লকের বিডিও তাপস বিশ্বাস বলেন, “অনেকের আবেদনপত্রে নানান রকম ভুল আছে। রেলের আধিকারিকরা সেগুলো খতিয়ে দেখছেন।”
এ দিন ঘটনাস্থলে আসা পূর্বরেলের হাওড়া ডিভিশনের বিভাগীয় বাস্তুকাররা কোনও কথা বলতে চাননি। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “চাকরির দাবিতে কাজ বন্ধ আছে শুনেছি। ক্ষতিগ্রস্ত জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা দেওয়া হয়েছে। চাকরির জন্য কতজন আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন বা কী হয়ে আছে সেটা খোঁজখবর না নিয়ে এখনই বলতে পারব না।” রামপুরহাটের এসডিপিও কোটেশ্বর রাও বলেন, “চাকরির দাবিতে নলহাটিতে রেলের কাজ বন্ধ আছে। এলাকায় রেলের আধিকারিকেরা আছেন। কোনও রকম আইন শৃঙ্খলা অবনতি যাতে না ঘটে তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”