চড়ুইভাতির মেজাজে শেষ জপেশ্বর মেলা

পসরা নিয়ে অনেক মেলাতেই ঘুরেছেন ওঁরা। ভালরকম লাভের মুখও দেখেছেন। কিন্তু জুবুটিয়ার জপেশ্বর মেলার ডাক পেলে লাভের তোয়াক্কা না করে হাজির হয়ে যান মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের খাবারের দোকানদার দিলীপ দাস, বর্ধমানের রাজুর গ্রামের খেলনা ব্যবসায়ী বৃন্দাবন দাস। কারণ, লাভ-লোকসানের বাইরে উপরি পাওনা হিসেবে মেলা শেষের দিনে মেলে এক অন্যরকম ভাললাগা। এ বারও তার অন্যথা হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নানুর শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫০
Share:

চলছে ভোজের রান্না। নানুরে ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।

পসরা নিয়ে অনেক মেলাতেই ঘুরেছেন ওঁরা। ভালরকম লাভের মুখও দেখেছেন। কিন্তু জুবুটিয়ার জপেশ্বর মেলার ডাক পেলে লাভের তোয়াক্কা না করে হাজির হয়ে যান মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের খাবারের দোকানদার দিলীপ দাস, বর্ধমানের রাজুর গ্রামের খেলনা ব্যবসায়ী বৃন্দাবন দাস। কারণ, লাভ-লোকসানের বাইরে উপরি পাওনা হিসেবে মেলা শেষের দিনে মেলে এক অন্যরকম ভাললাগা। এ বারও তার অন্যথা হয়নি।

Advertisement

উদ্যোগটা শুরু হয়েছিল দীর্ঘদিন আগে। শিবরাত্রি উপলক্ষে নানুরের জুবুটিয়ার জপেশ্বর মেলায় পসরা নিয়ে হাজির হতেন দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা। এক সময় মেলার শেষ দিনে ওইসব ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তাদের নিয়ে পঙ্ক্তিভোজের আয়োজন করা হয়। এলাকার ১৫-২০টি গ্রামের মানুষ সামিল হন এই পঙ্ক্তিভোজে। সেই রীতি আজও চলছে। বৃহস্পতিবার তাই চড়ুইভাতির মেজাজে পঙ্ক্তিভোজের মাধ্যমে শেষ হল জপেশ্বর মেলা। এ দিন সকাল থেকেই ছিল তাই সাজো সাজো রব। বিক্রিবাটা সামলে কখনও উনুনে কাঠ দিয়ে আসছেন বর্ধমানের কান্দরার মিষ্টির দোকানদার হারাধন দাস বৈরাগ্য, কখনও বা সব্জি কাটায় হাত লাগিয়েছেন স্থানীয় ব্রাহ্মণপাড়ার মোগলাই দোকানদার বংশী মণ্ডল। তারপর নানুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মধুসূদন পাল, সংশ্লিষ্ট দাসকলগ্রাম-কড়েয়া ১ নম্বর পঞ্চায়েত প্রধান সরবী দাসের পাশাপাশি একাসনে বসেছেন তাঁরা। মেনুতে ছিল খিচুড়ি, টক আর পায়েস। আবেগ আপ্লুত গলায় তাঁরা বললেন, “এই মেলার পঙ্ক্তিভোজে আমরা পিকনিকের স্বাদ পাই। তাই বিক্রিবাটা যাই হোক না কেন, এই মেলায় আসা চাই-ই চাই।”

মেলা কমিটির সভাপতি দিলীপ দাস এবং সম্পাদক জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, “মেলায় আসা ওই দোকানদারদের প্রতিদিন রান্না করে খেতে দেখতাম। অথচ তোলা বাবদ দেওয়া ওদের টাকায় মেলার খরচের একাংশ সংকুলান হয়। অথচ ওঁদের জন্য আমরা কিছুই করতে পারি না। তাই মেলা ভাঙার দিন ওঁদের নিয়ে পঙ্ক্তিভোজের সিদ্ধান্ত নিই।” এই পঙ্ক্তিভোজ ঘিরে এ দিন সংলগ্ন গ্রামের অধিকাংশ পরিবারে কার্যত অরন্ধনব্রত পালিত হয়। শ্রীপুরের শৈবা চট্টোপাধ্যায়, নানুরের জয়ন্তী কৈবর্ত্যরা বলেন, “এ দিন আমাদের বাড়িতে উনুন জ্বলে না। সপরিবারে পঙ্ক্তিভোজে যোগ দিই।” পঙ্ক্তিভোজের জন্য অবশ্য মাস খানেক আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। স্থানীয় মালঞ্চ ক্লাবের সদস্যরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে সংগ্রহ করেন চাল, ডাল, আলু, মুলো। ক্লাবের সম্পাদক দেবনারায়ণ চট্টরাজ, অন্যতম সদস্য বিপ্লব মাঝিরা বলেন, “এলাকার মানুষজন ওই পঙ্ক্তিভোজকে নিজেদের চড়ুইভাতি মনে করেন। তাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সাধ্যমতো ওই সব সামগ্রী তুলে দেন।”

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন