টিএমসিপি’র দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত পাত্রসায়র

কলেজের ছাত্র সংসদে কার প্রভাব থাকবে তা নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের টিএমসিপি-র দু’টি গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বাঁকুড়ার পাত্রসায়র। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেলুট বাজারে গোলমালের শুরু। শুক্রবার দুপুরে তাই ছড়িয়ে পড়ে পাত্রসায়র সদরে। বাড়ি ভাঙচুর থেকে শুরু করে এক তৃণমূল নেতার দাদাকে মারধর করে টাকা লুঠেরও অভিযোগ উঠল। যার জেরে আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দিলেন ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি সামলাতে পথে নামতে হল কমব্যাট ফোর্সকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০২
Share:

সংঘর্ষের পরে থমথমে পাত্রসায়রে পুলিশি টহল। শুক্রবারের নিজস্ব চিত্র।

কলেজের ছাত্র সংসদে কার প্রভাব থাকবে তা নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের টিএমসিপি-র দু’টি গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বাঁকুড়ার পাত্রসায়র। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেলুট বাজারে গোলমালের শুরু। শুক্রবার দুপুরে তাই ছড়িয়ে পড়ে পাত্রসায়র সদরে। বাড়ি ভাঙচুর থেকে শুরু করে এক তৃণমূল নেতার দাদাকে মারধর করে টাকা লুঠেরও অভিযোগ উঠল। যার জেরে আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দিলেন ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি সামলাতে পথে নামতে হল কমব্যাট ফোর্সকে।

Advertisement

বাঁকুড়ায় বিশেষ করে পাত্রসায়রে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন নয়। এর আগে শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে পাত্রসায়র বারবার অশান্ত হয়েছে। পার্টি অফিস ভাঙচুর থেকে নেতা-কর্মীদের মারধর--কিছুই বাদ যায়নি। এখন সেই রোগ ছড়িয়েছে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনেও! তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীদের একাংশের আশঙ্কা, দলীয় নেতৃত্ব এখনই কড়া হাতে রাশ না টানলে অবস্থা আরও ঘোরালো হবে।

টিএমসিপি-র প্রাক্তন জেলা সহ-সভাপতি সুব্রত দত্ত ওরফে গোপের সঙ্গে পাত্রসায়র কলেজের সাধারণ সম্পাদক জিয়ারুল ইসলামের বিরোধ সম্প্রতি মাত্রাছাড়া রূপ নিয়েছে। ছাত্র সংসদের এজিএস দীনবন্ধু কারক গোপের বিরুদ্ধে ছাত্র সংসদের টাকা নেওয়ার জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া এবং তা না পেয়ে ঘরছাড়া করার অভিযোগ জানিয়েছেন দলের জেলা নেতৃত্বের কাছে। জিয়ারুল হুমকি দিয়েছিলেন, দল ব্যবস্থা না নিলে গোপের বিরুদ্ধে তাঁরাই যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবেন।

Advertisement

তার মধ্যেই এই গোলমাল। পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেলুট বাজারে স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিজয় দাস-সহ দলের কয়েকজনকে মারধর করা নিয়ে গোলমালের সূত্রপাত। দলের ব্লক নেতা স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের অনুগামী বিজয়বাবুর অভিযোগ, “আমরা কয়েকজন গল্প করছিলাম। হঠাৎ দু’টি গাড়িতে করে ১৪-১৫ জনকে নিয়ে দলের এক কর্মী তাপস বারি এসে আমাদের উপর চড়াও হয়। লোহার রড, লাঠি নিয়ে তাঁরা আমাদের মারধর করে। বাঁচাতে এসে দুই সিভিক ভল্যান্টিয়ারও আহত হন।” অন্যদিকে গোপের অনুগামী তাপসবাবুর দাবি, “আমাদের গ্রামের এক কলেজ পড়ুয়া পাত্রসায়র কলেজ ভোটে প্রার্থী হতে চায়। কিন্তু ওরাই উল্টে সেই ছেলেটিকে মারতে এলে দু’পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়েছে। আমি অবশ্য সেখানে ছিলাম না।”

ঘটনা অবশ্য থামেনি। রাতে গোপের ঘনিষ্ঠ পাত্রসায়রে তুলসী কর্মকারের বাড়িতে জিয়ারুলের লোকেরা পাল্টা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। শুক্রবার দুপুরে আবার জিয়ারুলের দাদা মনিরুল ইসলাম ও ব্যবসায়ী শেখ মনিরুলকে থানার সামনে আটকে মারধরের চেষ্টা চলে। তাঁদের কাছ থেকে টাকা লুঠেরও অভিযোগও ওঠে। পুরো ঘটনায় গোপে ও তার দলবলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি সামলায়। মনিরুলের অভিযোগ, “এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা নিয়ে ফিরছিলাম। থানার সামনে গোপের নেতৃত্বে দুষ্কৃতীরা লাঠি নিয়ে আমাদের উপরে হামলা চালায়। টাকা ভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছে ওরা। বরাত জোরে প্রাণে বেঁচেছি।” এর পাল্টা জিয়ারুলের লোকেরা গোপের বাড়ি আক্রমণ করে বলে অভিযোগ।

সংঘর্ষের জেরে নিমেষের মধ্যে পাত্রসায়রের বাসস্ট্যান্ড ও বাজার এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সুনশান হয়ে যায় রাস্তাঘাট। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। মাঝে মধ্যেই গোলমাল চলতে থাকায় বাসিন্দারা তো বটেই ব্যবসায়ীরাও তৃণমূলের বিবাদমান দুই গোষ্ঠীর নেতা ও কর্মীদের উপরে বিরক্ত। যদিও জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দু’পক্ষের তরফে একাধিক অভিযোগ জমা পড়লেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

গোপের অভিযোগ, “মনিরুলরাই পথে-ঘাটে আমাদের নামে কুকথা বলে বেরায়। এ নিয়ে আমাদের লোকেরা ওদের উপর চটে ছিল। এ দিন ওরা মনিরুলকে শুধু রাস্তায় আটকেছিল। আর কিছুই করেনি। কিন্তু জিয়ারুলের নেতৃত্বে দুষ্কৃতীরা বৃহস্পতিবার রাতে তুলসী কর্মকারের বাড়ি ও এ দিন আমার বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এমনকী মাকেও ওরা মারধর করে। পরে ডাকবাংলো এলাকায় সুভাষ শিকদারের বাড়িতেও হামলা হয়েছে।”

অভিযোগ উড়িয়ে জিয়ারুলের পাল্টা দাবি, “গায়ের জোরে কলেজ দখল করতেই গোপে এলাকায় তাণ্ডব শুরু করেছে। এলাকায় অশান্তি জিইয়ে রাখার জন্যই গোপে একের পর এক কুকর্ম করে যাচ্ছে। তুলসী ও গোপে নিজেরাই নিজেদের বাড়িতে ভাঙচুর করে এখন দৃষ্টি অন্য দিকে ঘোরাতে আমাদের উপরে দোষ চাপাচ্ছে।” চেষ্টা করেও এ দিন স্নেহেশবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে তাঁদের সতর্ক করা হচ্ছে, দলে এ সব জিনিস চলবে না। খারাপ কাজ করলে কেউ রেহাই পাবে না। গোঁয়ার্তুমি যারাই করবে তারাই ফল ভুগবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন