ব্যবসায়ী অপহরণ-কাণ্ড

টাকা নিতে এসে পুলিশের জালে যুবক

অপহরণকারীদের কথা মতো বাড়ির লোকেরা টাকা নিয়ে যেতে রাজি হননি। উল্টে বাড়ির লোকেরা বলেছিলেন, মূল রাস্তার ধারে ফাঁকা জায়গায় আসতে হবে। নতুবা তাঁরা বাড়ি ফিরে যাবেন। এতেই কাজ হয়ে গেল। মুক্তিপণের টাকা নিতে এসে সরাসরি পুলিশের জালে ধরা পড়ল এক অপহরণকারী। বৃহস্পতিবার বিকেলে পুরুলিয়ার মানবাজার থানা এলাকার ঘটনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মানবাজার শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৩
Share:

অপহরণকারীদের কথা মতো বাড়ির লোকেরা টাকা নিয়ে যেতে রাজি হননি। উল্টে বাড়ির লোকেরা বলেছিলেন, মূল রাস্তার ধারে ফাঁকা জায়গায় আসতে হবে। নতুবা তাঁরা বাড়ি ফিরে যাবেন। এতেই কাজ হয়ে গেল। মুক্তিপণের টাকা নিতে এসে সরাসরি পুলিশের জালে ধরা পড়ল এক অপহরণকারী। বৃহস্পতিবার বিকেলে পুরুলিয়ার মানবাজার থানা এলাকার ঘটনা।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, মানবাজার থানার বড়তোড় গ্রামের মহাদেব গোপ নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানার বাদুড়িয়া গ্রামের ব্যবসায়ী গোপালচন্দ্র দাঁ’কে উদ্ধারও করা সম্ভব হয়েছে। আর এক জন অপহরণকারী মানবাজার থানার বারকুড়ি গ্রামের ইন্দ্রজিৎ ওরফে মিলন ধবল পুলিশ দেখে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।

বাদুড়িয়া গ্রামের ব্যবসায়ী গোপালবাবু জানান, গ্রামের বাজারে তাঁর একটি স্টেশনারি দোকান রয়েছে। কাছেই একটি চালকলে মিলন কাজ করত। দোকান থেকে মাঝে মধ্যে জিনিস কেনার সূত্রে মিলনের সঙ্গে পরিচয় হয় গোপালবাবুর। তিনি বলেন, “আমার দোকানে কর্মচারী দরকার ছিল। মিলনকে সে কথা জানিয়েছিলাম। বলেছিল, তার গ্রাম থেকে একজন বিশ্বাসী ছেলে আমাকে দেবে। সরস্বতী পুজার সময় মিলন তার গ্রামের বাড়ি যান। বুধবার সকালে ফোনে জানায়, একটি ভাল ছেলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তবে আমাকে নিজে এসে তার সঙ্গে কথা বলতে হবে। মিলনের কথায় বিশ্বাস করে বুধবার দুপুরে মানবাজার বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছই। দেখি ওখানে এক সঙ্গী রয়েছে। তারা মোটরবাইকে করে মানবাজার-বান্দোয়ান রাস্তা ধরে যাচ্ছিলাম। কিছুটা যাওয়ার পর আমার সন্দেহ হয়। পরক্ষণেই তারা স্বমূর্তি ধরে বলে, ‘বাড়িতে ফোন করে এক লক্ষ টাকা আনতে বল। নতুবা এখানেই তোকে মেরে ফেলে রেখে দেব।”

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, ওই দিন বিকেলের দিকে গোপালবাবু ফোনে এক লক্ষ টাকা চেয়ে পাঠান। কথার অসংগতি বুঝে গোপালবাবুর শ্যালক প্রশান্ত দত্ত স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রশান্তবাবু বলেন, “আমার ভগ্নীপতিকে জিজ্ঞাসা করি হঠাৎ এত টাকা কিসের দরকার। বুঝতে পারলাম কথা বলার মাঝখানে কেউ ফোনটা কেটে দিচ্ছে। আমাদের তখনই সন্দেহ হয়েছিল।” গোপাপালবাবুর অভিযোগ, “ওঁরা দু’জনে আমাকে খানিকটা জঙ্গলে হাঁটিয়ে নিয়ে যায়। সেখানে একটি বড় পাইপের মধ্যে সারারাত আমাকে আটকে রাখে। কথা বললেই মারধর করছিল। ভোজালি ধরনের একটা অস্ত্র বুকের কাছে ধরে বলে চেঁচামেচি করলেই খতম করে দেব।”

এ দিকে, পুলিশ বুধবার সারারাত চেষ্টা করেও টাওয়ার লোকেশন ধরে গোপালবাবুর খোঁজ পায়নি। বৃহস্পতিবার পুলিশের কথা অনুযায়ী গোপালবাবুর ছেলে পল্লব, শ্যালক প্রশান্ত খণ্ডঘোষ থানার পুলিশের সঙ্গে মানবাজারে আসেন। অপহরণকারীরা গোপালবাবুর ফোনে যোগাযোগ মিলনদের সঙ্গে রেখে চলছিলেন। মিলন ফোনে প্রথমে মানবাজার বাসস্ট্যান্ড, পরে গোলকিডি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে টাকা নিয়ে আসতে বলে। পুলিশ তখন কৌশলের আশ্রয় নেয়। বাড়ির লোকদের দিয়ে বলানো হয়, টাকা নিতে গেলে মানবাজার-বান্দোয়ান রাস্তায় গ্যাস গুদামের সামনে ফাঁকা জায়গায় এসে নিয়ে যেতে হবে। নতুবা ফিরে তাঁরা বাড়ি ফিরে যাবেন। পুলিশের এই ফাঁদ বুঝতে না পেরে মহাদেব বাইকে নিয়ে টাকার জন্য দাঁড়াতেই সাদা পোশাকে লুকিয়ে থাকা পুলিশ জাপটে ধরে ফেলে। দূর থেকে বিপদের আঁচ বুঝে মিলন গোপালবাবুকে ছেড়ে জঙ্গলে ঢুকে যায়। রাতেই খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ অপহরণকারী মহাদেব গোপ-সহ বাকিদের নিয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন