রঘুনাথপুরের তাপবিদ্যুত্ প্রকল্প ডিভিসিকেই রূপায়িত করতে হবে, এই দাবিতে এ বার অন্দোলনে নামল সিটু। সিপিএমের ওই শ্রমিক সংগঠন শনিবার রঘুনাথপুরে প্রকল্পের গেটের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ করে। ছিলেন বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা বাসুদেব আচারিয়াও।
এমনতিই জমিহারাদের আন্দোলনে ডিভিসির ওই সর্ববৃহত্ তাপবিদ্যুত্ প্রকল্প নির্মাণের কাজ বারবার ব্যাহত হয়েছে। চালু করার লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে যাওয়ায় নির্মাণ খরচও বেড়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় ডিভিসির একটি অংশ সূত্রে জানা যায়, তারা সরকারি বা কোনও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে ওই প্রকল্প নির্মাণ করতে চাইছে। ডিভিসির আধিকারিকদের অনেকেই এর প্রতিবাদ জানান। এখনও পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে ডিভিসি কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে ভবিষ্যতে যাতে এ রকম কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া হয়, সেই দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নামল সিটু।
সিটুর সর্বভারতীয় নেতা বাসুদেব আচারিয়া দাবি করেছেন, “আর্থিক সঙ্কটের কারণ দেখিয়ে ডিভিসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রঘুনাথপুরে তাদের তাপবিদ্যুত্ প্রকল্পের বেসরকারীকরণ করতে উদ্যোগী হয়েছে। অথচ এলাকার মানুষ ডিভিসিকে দেখেই তাঁদের জমি দিয়েছেন। ফলে কোনও মতেই এই প্রকল্পের বেসরকারীকরণ করা চলবে না।” তাঁর সংযোজন “মনে রাখতে হবে সিঙ্গুরে টাটাদের গাড়ি কারখানার জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা তৈরি হলেও প্রায় একই সময়ে রঘুনাথপুরে ডিভিসির তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের জন্য জমি অধিগ্রহণ নির্বিঘ্নেই হয়েছিল। কারণ এলাকার বাসিন্দারা ডিভিসির প্রকল্পের জন্যই জমি দিয়েছিলেন”
গত বছরের নভেম্বর মাসে সংস্থার পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আলোচনা হয়নি। পরে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুত্ উত্পাদনকারী সংস্থার সাথে কেন্দ্রীয় বিদ্যুত্ মন্ত্রকের বৈঠকে ডিভিসি জানিয়েছিল, আর্থিক সঙ্কটের কারণে রঘুনাথপুরের প্রকল্পটি তারা একক ভাবে রূপায়িত করতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে সরকারি বা বেসরকারি ক্ষেত্রের সাথে যৌথ ভাবে রঘুনাথপুরের প্রকল্প রূপায়ণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল ডিভিসি। কিন্তু কেন্দ্রীয় বিদ্যুত্ মন্ত্রকের পরামর্শ ছিল, আপতত এনটিপিসির মতো কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সাথে রঘুনাথপুরের প্রকল্প রূপায়ণ নিয়ে আলোচনা করুক ডিভিসি।
সূত্রের খবর, আজ মঙ্গলবার কলকাতায় ডিভিসির সদর দফতরে পরিচালন পর্ষদের বৈঠক রয়েছে। সেখানে রঘুনাথপুরের প্রকল্প রূপায়ণের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। আর এই প্রেক্ষিতেই শনিবার রঘুনাথপুরে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে অবস্থান করল সিটু।
বাসুদেববাবু বলেন। “ডিভিসির পরিচালন পর্ষদের বৈঠকের আগেই আমরা মাঠে নেমে আন্দোলন সংগঠিত করে ডিভিসিকে একটা বার্তা দিতে চেয়েছি।” পাশপাশি সিটু চাইছে এই দাবিতে অন্য শ্রমিক সংগঠনগুলিকেও পাশে পেতে। সিটুর পুরুলিয়া জেলা সভাপতি নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই অন্য শ্রমিক সংগঠনগুলির সাথে যোগাযোগ করেছি। আমরা ডিভিসির প্রকল্পের বেসরকারীকরণ রুখতে যৌথ ভাবে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে চাইছি। কারণ এই প্রকল্পের উপরে শুধু রঘুনাথপুর মহকুমাই নয়, জেলার আর্থিক উন্নয়নের প্রশ্নও জড়িয়ে।”
তবে শুধু বেসরকারীকরণই নয়, এই প্রকল্পে স্থানীয় জমিহারাদের কর্মসংস্থানের দাবিও তুলেছে সিটু। তাদের দাবি, রঘুনাথপুরের এই প্রকল্পে যে সংখ্যায় জমিহারাদের কর্মসংস্থান হওয়া উচিত ছিল, তটা হয়নি। এর উপরে যাঁরা কাজ পেয়েছেন, তাঁদের অনেককেই ছাঁটাই করছে প্রকল্পে কর্মরত বিভিন্ন ঠিকা সংস্থা। তবে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ ছাঁটাইয়ের অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁদের ব্যাখ্যা, প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষের দিকে চলে আসায় কাজ গুটিয়ে নিচ্ছে সংস্থাগুলি। তাই শ্রমিকের চাহিদা আগের তুলনায় এখন কম।