রামপুরহাট পুরসভা

তৃণমূলের বাধায় কাজ বন্ধ জলাধারের

পুরসভায় ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। অথচ অনিয়মের অভিযোগ তুলে দলীয় পতাকা নিয়ে পুরসভারই কাজে বাধা দিলেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। আপাতত বন্ধ হয়ে গেল জলাধার তৈরির কাজ। শুক্রবার রামপুরহাট পুরসভার ঘটনা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য একটি অতিরিক্ত জলাধার তৈরি করতে সরকার থেকে ৮৯ লক্ষাধিক টাকা অনুমোদিত হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫৫
Share:

পুরসভায় ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। অথচ অনিয়মের অভিযোগ তুলে দলীয় পতাকা নিয়ে পুরসভারই কাজে বাধা দিলেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। আপাতত বন্ধ হয়ে গেল জলাধার তৈরির কাজ। শুক্রবার রামপুরহাট পুরসভার ঘটনা।

Advertisement

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য একটি অতিরিক্ত জলাধার তৈরি করতে সরকার থেকে ৮৯ লক্ষাধিক টাকা অনুমোদিত হয়েছে। সেই রিজার্ভার তৈরির কাজ ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে চলছে। এ দিন কাজের সিডিউল ডাঙানোর দাবিতে কাজে বাধা দেওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠছে। এর পিছনে কি তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে? না কি এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএম হওয়ায় পরিকল্পিত ভাবে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হল? নাম প্রকশে অনিচ্ছুক এলাকার বাসিন্দারা অবশ্য দাবি করেছেন, “এখানে সিপিএম কাউন্সিলর আছেন। মূলত তাঁরই যোগসাজসে সিডিউল টাঙানো হচ্ছে না। তবে কাজ বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি।”

আন্দোলনে সামিল ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি তৃণমূলের আব্দুর রহিম বলেন, “পাঁচ মাস ধরে এলাকায় পুরসভার উদ্যোগে একটি জলাধার তৈরির কাজ চলছে। অথচ কাজটি কত টাকার, কী কাজ হচ্ছে এই সম্পর্কিত কাজের কোনও সিডিউল টাঙানো হয়নি। এ ব্যাপারে কাজের সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদার বা কাজের এজেন্সির লোকজনকে একাধিকবার বলা হয়েছে। এমনকী পুরসভাতেও কাজের সিডিউল সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ কোনও কিছু জানাচ্ছে না।” তাঁর দাবি, এর ফলে এলাকাবাসীর সন্দেহ কাজে কিছু অনিয়ম আছে এবং এই অনিয়মের সঙ্গে পুরসভা বা এলাকার বিরোধী কাউন্সিলর যুক্ত থাকতে পারে। সে জন্য এলাকাবাসী কাজের সিডিউল টাঙানোর দাবিতে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।

Advertisement

উপপুরপ্রধান অনিন্দ্যকুমার সাহা বলেন, “রামপুরহাট পুর-এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য এই জলাধার তৈরি করা হচ্ছে। জলাধার তৈরি করার পর নিশ্চিন্তপুর এলাকায় থাকা রিজার্ভারটি সংস্কার করা হবে। নির্মীয়মাণ জলাধারটি তৈরির কাজ পুর-দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার দেখভাল করছেন। এলাকাবাসী এর আগে কাজের সিডিউল টাঙানোর দাবিতে পুরসভায় এসেছিলেন। যতদূর জানি সিডিউল টাঙিয়েই কাজটি চালু আছে। কিন্তু এ দিন এলাকার বাসিন্দারা দাবি করেছেন, এখনও কাজের সিডিউল না টাঙিয়ে কাজ চলছে। আমরাও চাই সরকারি কাজে সরকারি বিধি মেনে করা হোক। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে বলে কাজের সিডিউল টাঙিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”

কাজ বন্ধ। বসে রয়েছেন শ্রমিকেরা।

এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, দশ পনেরো জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক নির্মীয়মাণ জলাধারটির গায়ে দলীয় পতাকা জড়িয়ে দিয়েছেন। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য ১১ জন মিস্ত্রি বসে আছেন। কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। কাজ বন্ধ করে দেওয়ার পিছনে সিপিএম অবশ্য তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই দায়ী করেছে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর সঞ্জীব মল্লিক দাবি করেন, “পুরসভা নিজেদের দায়িত্ব নিয়ে কাজটি করছে। এর আগেও কাজ বন্ধ হয়েছিল। যতদূর জানি যে ঠিকাদার কাজ করছে তিনি সাংসদ গোষ্ঠীর। এখানে তৃণমূলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কাজ করছে। এই ভাবে বার বার কাজ বন্ধ হচ্ছে। তার মনেই বুঝতে হবে পুরসভায় দুর্নীতিমূলক কাজ নিয়ে আমাদের যে অভিযোগ সেটা দেরিতে হলেও তৃণমূলের এক গোষ্ঠী বুঝতে পেরেছে।” কাজ বন্ধ করে দেওয়া যুক্তি সঙ্গত নয় দাবি করে উপপুরপ্রধান বলেন, “এখানে কোনও প্রকার গোষ্ঠী কাজ করছে না বলে আমি মনে করি। বরঞ্চ দলের কাজকর্ম নিয়ে দলের কর্মীরা যে আরও বেশি করে সজাগ হচ্ছে এটা জেনে ভাল লাগছে। তবুও খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। যদি দাবি যুক্ত সঙ্গত হয়, তা হলে পুরসভার তরফ থেকে দাবির বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে।”

কাজে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে কী করছেন রামপুরহাটের বিধায়ক তথা প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ ঠিক নয়। দলীয় শৃঙ্খলা মেলে কর্মীদের কাজ করা উচিত। তবে সিডিউল টাঙানোর দাবি অন্যায় নয়, তেমনি কাজ বন্ধ করে দেওয়াও ঠিক হয়নি।”

ছবি: অনির্বাণ সেন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন