তিন বছরেও চালু হয়নি প্রকল্প, জল কষ্টে ময়ূরেশ্বরের গ্রাম

একে একে বিকল হয়ে পড়েছে সরকারি নলকূপ। দীর্ঘদিন ধরে ওইসব নলকূপ মেরামতের কোনও উদ্যোগ নেই। তার উপরে তিন বছর ধরে অসম্পূর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে বিধায়কের বরাদ্দ টাকার পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প। আর তাতেই, চরম জল কষ্ট দেখা দিয়েছে ময়ূরেশ্বরের তিলপাড়া গ্রামে। গ্রামবাসীদের দাবি, বার বার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনও লাভ হয়নি। তাতে, এলাকায় নিত্য বাড়ছে ক্ষোভ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৪ ০১:০৪
Share:

ময়ূরেশ্বরের তিলপাড়া গ্রামে বিকল নলকূপ ও পাম্প সেট (ইনসেটে)। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

একে একে বিকল হয়ে পড়েছে সরকারি নলকূপ। দীর্ঘদিন ধরে ওইসব নলকূপ মেরামতের কোনও উদ্যোগ নেই। তার উপরে তিন বছর ধরে অসম্পূর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে বিধায়কের বরাদ্দ টাকার পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প। আর তাতেই, চরম জল কষ্ট দেখা দিয়েছে ময়ূরেশ্বরের তিলপাড়া গ্রামে। গ্রামবাসীদের দাবি, বার বার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনও লাভ হয়নি। তাতে, এলাকায় নিত্য বাড়ছে ক্ষোভ।

Advertisement

প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১-১২ সালের জনগণনা অনুসারে তিলপাড়া গ্রামে ৫২৩ টি পরিবারের বাস। তাঁদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে পঞ্চায়েতের ৭ এবং পঞ্চায়েত সমিতির ২ টি নলকূপ। কিন্তু তার মধ্যে ৫ টি’ই দীর্ঘদিন ধরে অচল। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওইসব নলকূপ মেরামতের কোনও উদ্যোগ নেই। এমন কি জল সংকট দূর করার জন্য বিধায়কের বরাদ্দ টাকায় জল সরবরাহ প্রকল্পও প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতায় থমকে রয়েছে।

প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, তিলপাড়া গ্রামে পানীয় জলের সংকট দূর করার জন্য স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক অশোক রায় তাঁর এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে ২০১১-১২ বছরে দু’দফায় মোট ৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেন। প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ২নং ব্লক প্রশাসনকে। প্রকল্প অনুযায়ী পাম্প বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে পাড়ায় পাড়ায় পানীয় জল সরবরাহ করার কথা সেই লক্ষ্যে বছর দেড়েক আগে স্থানীয় ১৩৫ নং অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রে একটি পাম্প বসানো হয়। সেখান থেকে তিলপাড়া এবং কাজীপুর মৌজায় পাইপ বসিয়ে কিছু ‘ট্যাপ’ কলও লাগানো হয়। কিন্তু সেইসব কল থেকে এক ফোঁটা জল মেলেনি বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ।

Advertisement

স্থানীয় সিপিএম নেতা তথা সংশ্লিষ্ট দাসপলশা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান মহঃ মকরম আলি জানান, পাম্পটি পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করার সময়ই তা বসানোর পদ্ধতিগত ত্রুটি ধরা পড়ে। কিছুক্ষণ জল ওঠার পর বন্ধও হয়ে যায়। সেইসময় গ্রামবাসীদের ক্ষোভ সামাল দিতে ব্লক প্রশাসন ওই পাম্পটি মেরামতের পাশাপাশি আরও একটি পাম্প বসিয়ে জল সরবরাহ প্রকল্প চালু করার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে বার বার আবেদন জানিয়ে শুধু ‘হচ্ছে-হবে’ আশ্বাস শুনতে হয়েছে।

পরিস্থিতি এমনই, গ্রামবাসীরা পড়েছেন মহা বিপাকে। কেন্দ্রীয় সমীক্ষা অনুযায়ী ব্লকের অন্যতম পিছিয়ে পড়া গ্রাম হিসাবে চিহ্নিত তিলপাড়ার অধিকাংশই দিনমজুর। নিজেদের খরচে বাড়িতে নলকূপ বসানোর সঙ্গতি নেই নুরজাহান বিবি, হাসিনা বিবিদের। তাঁরা বলেন, “জল কষ্টে জেরবার আমাদের গ্রাম। বেশিরভাগ নলকূপ হামেশাই বিকল থাকে। ভেবেছিলাম প্রকল্পটি চালু হলে জল কষ্ট ঘুচবে। কিন্তু এখন দূর থেকে জল এনে কৃপণের মতো মেপে জল খরচ করতে হচ্ছে। এভাবে কতদিন?”

লাগোয়া ছোট তুড়িগ্রামে বাড়ি স্থানীয় দাশপলসা পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের আসিয়া বিবির। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েতের নলকূপগুলি ধারাবাহিক ভাবে মেরামত হয়। তবে একই সঙ্গে একাধিক জায়গায় নলকূপ খারাপ হলে, মিস্ত্রীর অভাবে তা সারাতে সাময়িক দেরি হয়। এক্ষেত্রে কি হয়েছে জেনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি। জল সরবরাহ প্রকল্পটির ব্যাপারেও ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।” পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের কল্যাণী দাস বলেন, “ওই গ্রামে নলকূপ বিকল হয়ে পড়ে থাকা কিংবা জল সরবরাহ প্রকল্পটির বিষয়ে কিছু জানা নেই আমার। খোঁজ নিয়ে কি করা যায় দেখছি।”

প্রশাসনের এই টালবাহানায় চরম ক্ষুব্ধ এবং বিরক্ত বিধায়ক আশোক রায়। তিনি বলেন, “অর্থাভাবে বহু সরকারি প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে না। অথচ তিন বছর আগে চাহিদা অনুযায়ী টাকা বরাদ্দ করা সত্ত্বেও পানীয় জল সরবরাহের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ সস্পূর্ণ হল না। প্রশাসনিক গাফিলতি ছাড়া একে কি-ই বা বলা যায়?” বিডিও সৈয়দ মাসুদুর রহমান বলেন, “ওই জল প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের মুখে। বিদ্যুতের অভাবে এত দিন তা চালু করা যায়নি। পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শীঘ্রই বিদ্যুৎ সংযোগ করে প্রকল্প চালু করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন