তিন মেয়ের জন্ম দেওয়ায় বিষ খাইয়ে বধূ খুনের নালিশ

প্রথমেই যমজ মেয়ের জন্ম। বছর দুয়েক পরে ফের আরও এক মেয়ের জন্ম দেন বধূটি। পর পর মেয়ের জন্ম দেওয়ার ‘অপরাধে’ বুধবার দুপুরে পুরুলিয়ার বরাবাজারের এক বধূকে মারধর করে মুখ কীটনাশক ঢেলে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। মৃত বধূর নাম প্রিয়াঙ্কা মাহাতো (২২)। বরাবাজার থানার গুড়দা গ্রামে তাঁর বাড়ি। বৃহস্পতিবার বধূর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁর স্বামী বিশ্বনাথ মাহাতো ও শাশুড়ি গোলাপি মাহাতোকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের বিরুদ্ধে খুন ও বধূ নির্যাতনের মামলা রুজু করা হয়েছে। মৃত্যুর কারণ জানতে দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বরাবাজার শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৪ ০০:২৯
Share:

প্রথমেই যমজ মেয়ের জন্ম। বছর দুয়েক পরে ফের আরও এক মেয়ের জন্ম দেন বধূটি। পর পর মেয়ের জন্ম দেওয়ার ‘অপরাধে’ বুধবার দুপুরে পুরুলিয়ার বরাবাজারের এক বধূকে মারধর করে মুখ কীটনাশক ঢেলে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। মৃত বধূর নাম প্রিয়াঙ্কা মাহাতো (২২)। বরাবাজার থানার গুড়দা গ্রামে তাঁর বাড়ি। বৃহস্পতিবার বধূর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁর স্বামী বিশ্বনাথ মাহাতো ও শাশুড়ি গোলাপি মাহাতোকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের বিরুদ্ধে খুন ও বধূ নির্যাতনের মামলা রুজু করা হয়েছে। মৃত্যুর কারণ জানতে দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়।

Advertisement

প্রিয়াঙ্কার বাবা নরোত্তম মাহাতোর অভিযোগ, “তিনটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়াতেই মেয়ের উপরে জামাই ও বেয়ান অত্যাচার করত। বুধবার দুপুরে লোকমুখে খবর পেয়ে আমরা মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখি সে মেঝেতে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে। তাঁকে বরাবাজার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, আগেই মেয়ে মারা গিয়েছে। জামাই ও বেয়ান আমার মেয়েকে মারধর করে ওর মুখে কীটনাশক ঢেলে খুন করেছে।” নরোত্তমবাবুর ভাইপো কৈলাস মাহাতো বলেন, “প্রিয়াঙ্কাকে ওরা যে মেরে ফেলবে ভাবতে পারিনি।” এ দিন দুপুরে নরোত্তমবাবু বরাবাজার থানায় ওই দু’জনের বিরুদ্ধে তাঁর মেয়েকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।

নরোত্তমবাবুর বাড়ি বরাবাজার থানার হেরবনা গ্রামে। তাঁর মেয়ে প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে ২০১০ সালে স্থানীয় গুড়দা গ্রামের বিশ্বনাথ মাহাতোর বিয়ে হয়। বিশ্বনাথের অল্পস্বল্প চাষ রয়েছে। নরোত্তমবাবুর দাবি, বিয়ের পরে কোনও গোলমাল ছিল না। কিন্তু বছর দুয়েক পরে মেয়ের যমজ সন্তান হওয়ার পর থেকেই স্বামী ও শাশুড়ির ব্যবহার পাল্টে যায়। নানা অজুহাতে মেয়ের উপরে শারীরিক অত্যাচার শুরু হয়। কয়েকবার প্রিয়াঙ্কা বাপের বাড়িতেও পালিয়ে আসেন। নরোত্তমবাবুও কয়েকবার মেয়ের শাশুড়িকে বোঝাতে গিয়েছেন, যমজ মেয়ের জন্ম দেওয়ার পিছনে তাঁর মেয়ের কোনও হাত নেই। কিন্তু গোলাপিদেবী দাবি করতে থাকেন, ওই মেয়েদের বড় করা ও বিয়ে দেওয়ার খরচ অনেক। মাঝেমধ্যেই তাঁরা প্রিয়াঙ্কাকে বাপের বাড়িতে টাকা আনতে পাঠাত। কিন্তু নরোত্তমবাবুর আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় তিনিও মেয়ের শ্বাশুরবাড়ির লোকেদের দাবি মেটাতে পারতেন না। তিনি জানান, গত বছরে তাঁর দুই নাতনি অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাদের চিকিৎসার জন্য বাড়ির লোকজন কিছুই করছিল না। তিনিই দুই নাতনিকে টাটায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। বেয়ানের কাছে চিকিৎসার কিছু খরচ চেয়েও পাওয়া যায়নি বলে তাঁর অভিযোগ। পরে এক নাতনি অসুখে মারা যায়। অভিযুক্তদের পরিবারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Advertisement

পুরুলিয়ার জেলা ওমেন প্রটেকশন আধিকারিক সোমা ঘোষ বলেন, “কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার মায়েদের উপর অত্যাচারের কথা শুনেছি। কিন্তু মেরে ফেলার ঘটনা এই জেলায় প্রথম পেলাম। তবে এই ধরনের ঘটনায় প্রথমেই আমাদের কাছে এলে গাহর্স্থ্য হিংসা আইনের সহায়তা ওই বধূ পেতেন। ঘটনাটি বিশদে খোঁজ নেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন