তিনটি মাত্র ঘরে চলছে দু’টি স্কুল

একচিলতে বারান্দা লাগোয়া তিনটি ঘর, তিন শিক্ষক আর সাকুল্যে ১০৭ পড়ুয়াকে নিয়ে দিব্যি চলছিল পুঞ্চার বারমেশিয়া গ্রামের প্রাথমিক স্কুল। ১০ মাস হতে চলল, সেই স্কুল চত্বরের একটি ঘরে ঢুকে পড়েছে বারমেশিয়া জুনিয়র হাইস্কুল!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুঞ্চা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০০:৪২
Share:

একচিলতে বারান্দা লাগোয়া তিনটি ঘর, তিন শিক্ষক আর সাকুল্যে ১০৭ পড়ুয়াকে নিয়ে দিব্যি চলছিল পুঞ্চার বারমেশিয়া গ্রামের প্রাথমিক স্কুল। ১০ মাস হতে চলল, সেই স্কুল চত্বরের একটি ঘরে ঢুকে পড়েছে বারমেশিয়া জুনিয়র হাইস্কুল!

Advertisement

পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে স্কুল না ‘হট্টবাজার’ বোঝা দায়। এখন পঠনপাঠনের মান নিয়েই চিন্তিত দুটি স্কুলের শিক্ষক থেকে অভিভাবক সকলেই। পুঞ্চার অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক গৌতম মণ্ডলের ব্যাখ্যা, “নির্মাণের টাকা পড়ে আছে। গ্রামে কেউ জমি দিতে চায়নি, সেই কারণে ভবন নির্মাণ শুরু করা যায়নি।” জুনিয়র হাই-এর দুই ছাত্রের অভিভাবক সমর রায়, যুগল বাউরির অভিযোগ, “কিভাবে যে ওই হট্টগোলে ক্লাস হয়। তিনটে ঘরে কোনও দিনই দুটো স্কুল চলতে পারে না। প্রাথমিকের তো একই ঘরে দুটো করে ক্লাস বসে এক সঙ্গে।”

পুঞ্চার এই প্রাথমিকে পা রাখলে প্রাথমিকের পরিকাঠামোই সকলের নজরে পড়ে। কিন্তু, প্রাথমিক এবং জুনিয়র হাইস্কুল, এই দুটি স্কুলের শিক্ষক ও পড়ুয়ারা এখানেই মিলেমিশে স্কুল করেন রোজ। প্রায় ১০মাস ধরে একই ছাদের তলায় এভাবেই চলছে দুটি স্কুল। জুনিয়র হাইস্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা ৭, দু’ই শিক্ষকের একজন বাঁকুড়ার অভিজিৎ গোস্বামী ২০১৩ সালের নভেম্বরে জুনিয়ার হাইস্কুলে যোগ দেন। তিনি বলেন, “প্রথম দিন গ্রামে এসে জুনিয়র হাইস্কুলের সন্ধান চাইলে কেউ দিতে পারেননি। অথচ নিয়োগপত্রে বারমেশিয়া জুনিয়র হাইস্কুল বলে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে। বাধ্য হয়ে স্কুল কমিটির সম্পাদক পুঞ্চার অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের দ্বারস্থ হই। তিনি জানান, আপাতত প্রাথমিক স্কুলের একটি ঘরে জুনিয়র হাইস্কুলের পঠনপাঠন চালান।” ওই বছরই ডিসেম্বরে, বীরভূমের কাঁকরতলার বাসিন্দা শ্যামল গঁরাই দ্বিতীয় শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন স্কুলে। তার অভিজ্ঞতাও প্রায় এক। শ্যামলবাবু বলেন, “আদতে স্কুলই নেই অথচ আমাদের নিয়োগ হয়ে গেল।”

Advertisement

ইতিমধ্যে ২০১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে পাঠ চালু করার নির্দেশ থাকায় স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ৭ জন ভর্তি হয়। স্কুলের নিজস্ব ভবন নেই, চেয়ার টেবিল নেই, স্কুল সংক্রান্ত খাতাপত্র রাখার জায়গা নেই। এই অবস্থায় স্কুল চলছে। অভিজিৎবাবুর দাবি, স্কুলের পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেকবার বিদ্যালয় পরিদর্শক ও জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে (মাধ্যমিক) জানিয়েছেন। নিয়োগের পর দশ মাস কেটে গেলেও তবু পরিস্থিতির বদল হয়নি। স্কুল সংক্রান্ত নথিপত্র প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যাগে ভরে আনতে হয় তাঁদের। পড়ানোর বোর্ড নেই, ডাস্টার চক নিজেদের পয়সায় কিনতে হয়। পড়ুয়াদের বই অবশ্য মিলেছে। তাঁরা জানান, স্কুলের ভবন নির্মাণের জন্য টাকা পড়ে থাকলেও জমি না মেলায় স্কুল নির্মাণ হচ্ছে না।

কি বলছেন নিজেদের একটি ঘর ছেড়ে দিয়ে প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ? প্রাথমিকের প্রধানশিক্ষক শান্তিপূর্ন পাল বলেন, “জুনিয়ার হাইস্কুলের পড়ুয়ারা আমাদের স্কুলের রান্না করা খাবার খায়। একই চত্বরে রয়েছে ওদের তো না খাইয়ে রাখা যায় না। এই রান্নাতেই ওদের কুলিয়ে যায়।” অভিজিৎবাবু বলেন, “ওরা আমাদের বসার চেয়ার না দিলে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হত।”

স্কুল কমিটির সম্পাদক এবং মানবাজার ১ ব্লকের যুগ্ম বিডিও শ্রীকুমার ভট্টাচার্য বলেন, “ব্লকের উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রচুর কাজ দেখতে হয়, ফলে বারমেশিয়া জুনিয়ার হাইস্কুল সম্পর্কে আমার বিশেষ কিছু জানা নেই। এ সম্পর্কে পুঞ্চার এসআই ভাল বলতে পারবেন।”

গৌতমবাবু বলেন, “জেলায় এই রকম কিছু প্রাইমারি স্কুলেই জুনিয়র হাই-এর পঠনপাঠন শুরু হয়েছিল। পরে নিজস্ব ভবন তৈরি হওয়ার পর স্কুলগুলি ওখানে উঠে যায়। সাধারণত দানের জমিতেই এ ধরনের স্কুল গড়ে ওঠে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন