তৈরি সবুজ রসগোল্লা, লাল-গেরুয়া আবির

বাঁকুড়া: রাত পোহালেই ভোটের ফল। যে দলই জয়লাভ করুক, বাঁকুড়ার মিষ্টির দোকানে তৈরি গরমাগরম সবুজ রসগোল্লা। বাজারে চলে এসেছে লাল, সবুজ, গেরুয়া আবির। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলির কাছ থেকে অনেকেই বরাত পেয়ে গিয়েছেন। অনেকে এখনও অপেক্ষায়। তবে ফুলের মালার চাহিদা কমেনি। শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমের দৌড়ে ফুল এখনও অনেকের থেকে এগিয়ে।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৪ ০০:৫১
Share:

জেতা-হারার ঠিক নেই। চাহিদা বুঝে মিষ্টি দোকানে তৈরি রয়েছে সব ধরণের মিষ্টি। রয়েছে সবুজ রসগোল্লাও। বাঁকুড়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

বাঁকুড়া: রাত পোহালেই ভোটের ফল। যে দলই জয়লাভ করুক, বাঁকুড়ার মিষ্টির দোকানে তৈরি গরমাগরম সবুজ রসগোল্লা। বাজারে চলে এসেছে লাল, সবুজ, গেরুয়া আবির। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলির কাছ থেকে অনেকেই বরাত পেয়ে গিয়েছেন। অনেকে এখনও অপেক্ষায়। তবে ফুলের মালার চাহিদা কমেনি। শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমের দৌড়ে ফুল এখনও অনেকের থেকে এগিয়ে।

Advertisement

গণনাকেন্দ্রে ইভিএম খোলার আগে রাজনৈতিক দলের নেতারা যখন আঁক কষাকষিতে ব্যস্ত, সেই সময়ে বাঁকুড়া শহরের রামপুর এলাকার একটি মিষ্টির দোকানের শো-কেসে চলে এসেছে সবুজ রসগোল্লা। রং এক্কেবারে কাঁচা আমের মতো। এমন সবুজ রঙের মিষ্টি তো সচরাচর চোখে পড়ে না! মিষ্টি ব্যবসায়ী নবকুমার নাগ বলেন, “এখন তো রাজ্যে তৃণমূলের হাওয়া। তাই রসগোল্লার সাদা রঙের বদলে সবুজ করেদিলাম।” তবে স্বাদ মার যাচ্ছে না। তাঁর দাবি, ওই রসগোল্লায় কামড় দিলে জিভে আমের স্বাদ মিলবে। তাই নাম রেখেছেন ‘ম্যাঙ্গো রসগোল্লা’। ভোট গণনার দিনে এই মিষ্টি যে ভাল ব্যবসা দেবে তা নিয়ে নিশ্চিত নবকুমারবাবু।

ময়রার হেঁসেলের খবর পৌঁছে গিয়েছে তৃণমূল শিবিরেও। যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জয়ের ব্যাপারে আমরা একশো শতাংশ নিশ্চিত। তাই আগেই ১০ বস্তা আবিরের বরাত দিয়ে ফেলেছি। সবুজ রসগোল্লার খবর পেয়ে তারও বায়না দেওয়া হয়ে গিয়েছে।” তাঁর আশা, ওই সবুজ রসগোল্লা খাইয়েই মুনমুন সেনকে (বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী) তাঁর জয়ের সুখবরটা শোনাবেন।

Advertisement

প্রচারে পদ্মফুলের মালা পরে, মিছিলে কর্মীদের মোদীর মুখোস পরিয়ে, নিজের হাতে জন্ম দেওয়া নতুন প্রজন্মের ভোটারদের চিঠিতে সভায় নিমন্ত্রণ করে সাড়া ফেলে দেওয়া বাঁকুড়া কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী চিকিৎসক সুভাষ সরকারও আশাবাদী। গণনার আগের দিন তিনি বলেন, “আমাদের ১৪ বস্তা আবিরের বরাত দেওয়া হয়েছে। সারেঙ্গা, রাইপুরে পদ্মফুলের চাষ হয়। সেখানকার কর্মীদের পদ্মফুল নিয়ে আসার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।” তবে সিপিএম সাবধানী। তাদের এই কেন্দ্রের প্রার্থী বাসুদেব আচারিয়া ন’বারের সাংসদ। তাঁর সামনে ১০ বার সাংসদ হওয়ার হাতছানি। কিন্তু এ বার লড়াইটা অন্যরকম পরিস্থিতিতে হওয়ায় সিপিএম প্রথম থেকেই চাপে রয়েছে। দলের বাঁকুড়া জোনাল সম্পাদক অশোক রায় বলেন, “এখনই আবির কেনা বা বিজয় উৎসবের তোড়জোড় নিয়ে ভাবছি না। আমাদের দল কখনই আগে থেকে ওসব নিয়ে ভাবে না। ফল ঘোষণার পরেই আমরা এ নিয়ে ভাবব। এখন শুধু পরিস্থিতির উপরে নজর রেখেছি।”

তবে বসে নেই ব্যবসায়ীরা। বাঁকুড়ার রামপুরের আবির ব্যবসায়ী সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের কাছ থেকে ১০ বস্তা আবির ও ২০০টি গাঁদা ফুলের মালার বরাত পেয়ে গিয়েছেন। তিনি জানান, অন্য দল এখনও যোগাযোগ না করলেও সব রকম আবির জোগাড় করে রেখেছেন। বড়বাজারের আবির ব্যবসায়ী কালীপদ দরিপা, বিষ্ণুপুরের মটুকগঞ্জের অনুপ হালদার আবিরের ডালি সাজিয়ে রেখেছেন দোকানে। যে দল জিতবে সেই দলের কর্মীরাই আবির কিনতে তাঁদের কাছে ছুটে আসবে বলে আশাবাদী দুই ব্যবসায়ীই।

তবে যে দলই জিতুক, গোলাপের কদর সব দলের কাছেই সমান। তাই মাচানতলার ফুল ব্যবসায়ী বরেন সরকার গোলাপের তোড়া নিয়ে প্রস্তুত। তিনি বলেন, “প্রতিবার ভোট গণনার আগে গোলাপ ফুলের তোড়ার বরাত আসে। এ বার না এলেও গোলাপের তোড়া নিয়ে এসেছি।”

আবিরের পসরা নিয়ে বিষ্ণুপুরের মটুকগঞ্জে অপেক্ষায় ব্যবসায়ী। ছবি: শুভ্র মিত্র।

ব্যবসায়ীরা যখন লাভের আশায় মশগুল, অন্য দিকে কী হয় কী হয় ভেবে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বুক দুরুদুরু করছে। বাঁকুড়া লোকসভার ভোট গণনা কেন্দ্র খ্রিস্টান কলেজের আশপাশে রাস্তার পাশে তৃণমূল, বিজেপি ও কংগ্রেসের কর্মীদের শিবির তৈরি হয়ে গিয়েছে। বিষ্ণুপুর লোকসভার গণনা কেন্দ্র কে জি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ চত্বরেও বিভিন্ন দলের শিবির তৈরি হয়েছে।

টেনশন হচ্ছে? প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে প্রথমে কিছুটা থেমে গেলেন বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বাসুদেববাবু। তারপরে বললেন, “সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভোট হয়েছে এ বার। বুথে মারধর, এজেন্টকে বের করে দেওয়া, মানুষকে ভোট দিতে না দেওয়া এসব চলেছে। মনের মধ্যে তাই সব সময় একটা যোগ বিয়োগের খেলা চলছে। তবে জয় নিয়ে আমরা আশাবাদী।” বাসুদেববাবুর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তথা এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেন বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত অবশ্য বাঁকুড়ায় ঢোকেননি। মুনমুনের জয় নিয়ে তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের যতই আত্মবিশ্বাসী দেখাক, মোদী হাওয়ায় ভোট কাটবে ধরে নিয়ে তাঁরা যে বেশ টেনশনে রয়েছেন, তা আড়ালে মেনে নিচ্ছেন। যদিও দলের জেলা কো-চেয়ারম্যান অরূপ চক্রবর্তীর দাবি, “বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর দু’টি কেন্দ্রেই আমরা বড় ব্যবধানে জিতব। বাঁকুড়া কেন্দ্রে ৭০ হাজারের ব্যবধানে জিতব।”

বাঁকুড়া কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুভাষবাবু বলেন, “জয় আমার নিশ্চিত। তাও একটা টেনশন রয়েছে। তবে টেনশনে আমার দারুন ঘুম হয়। গণনার আগের রাতটা তাই ভালই কাটবে।” পরদিন সকালে কোন রঙের আবির বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুরের আকাশে উড়বে দেখতে উন্মুখ সবাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন