দুই পাড়ার বিবাদ, বোমাবাজিতে মৃত্যু

পিকনিককে কেন্দ্র করে দুই পাড়ার বিবাদ, সংঘর্ষ, বোমাবাজি এবং বোমার আঘাতে মৃত্যুও হয়েছে। জখম হয়েছেন এক বধূ। বৃহস্পতিবার রাতে খয়রাশোলের আমাজোলা গ্রামের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম অমিত্র জামাদার (৩৮)। বাড়ি ওই গ্রামেই। আহত ওই গ্রামের বধূ মঞ্জুরি বাউড়ি বর্তমানে সিউড়ি সদর হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খয়রাশোল শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৪
Share:

সংঘর্ষের পরে কুয়োয় বোমার চিহ্ন, চলছে টহল। ইনসেটে, নিহত যুবক অমিত্র জমাদার। —নিজস্ব চিত্র।

পিকনিককে কেন্দ্র করে দুই পাড়ার বিবাদ, সংঘর্ষ, বোমাবাজি এবং বোমার আঘাতে মৃত্যুও হয়েছে। জখম হয়েছেন এক বধূ। বৃহস্পতিবার রাতে খয়রাশোলের আমাজোলা গ্রামের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম অমিত্র জামাদার (৩৮)। বাড়ি ওই গ্রামেই। আহত ওই গ্রামের বধূ মঞ্জুরি বাউড়ি বর্তমানে সিউড়ি সদর হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন।

Advertisement

বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায় সব ঘটনার মতোই এক্ষেত্রেও লেগেছে রাজনৈতিক রং। এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পুলিশ মোতায়েন রয়েছে গ্রামে। শুক্রবার বিকেলে অমিত্রবাবুর পরিবারের তরফে ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আমাজোলা গ্রামে বাউড়ি পড়ার বেশ কিছু পরিবার (৩০-৩৫টি) বৃহস্পতিবার রাতে পিকনিক করছিল ওই পাড়ার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কাছে। সেই সময় পাশের গোয়ালা পাড়ার এক ইটভাটা মালিক মোটরবাইক নিয়ে বারবার ওই রাস্তা ধারে যাতায়াত করতে থাকায় মহিলারা প্রথমে প্রতিবাদ করেন। কিন্তু সে কথা না শুনে আবার ওই রাস্তা ব্যবহার করলে ওই ইটভাটা মালিককে মহিলারা মারধর করেন বলে অভিযোগ। তার পরেই গোয়ালাপাড়া লোকজন জুটিয়ে বাউড়ি পাড়ায় এসে বোমা ফাটায়। তাতেই জখম হন মঞ্জুরি। এর পরই পাল্টা আক্রমণ হয় বাউড়ি পাড়ার তরফে। তখনই বোমার ঘায়ে মারত্মক জখম হন অমিত্রবাবু। তাঁকে সিউড়ি হাসপাতলে ভর্তি করার কিছুক্ষণ পরেই মৃত্যু হয়।

Advertisement

প্রসঙ্গত, গোয়ালাপাড়া তৃণমূল প্রধান এবং বাউড়ি পাড়ায় যাঁরা এ দিন পিকনিক করছিলেন তাঁরা বিজেপি সমর্থক। তাই স্বাভাবিক ভাবেই রাজনীতি এসে পড়েছে। তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপাতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাত এগারোটা নাগাদ পিকনিক করার সময় প্রচন্ড শব্দে মাইক বাজানোর প্রতিবাদ করায় বিজেপির লোকেরা হামালা চালায়। আর তাতেই মত্যু হয় অমিত্রবাবুর।” নিহতের ভাইজি সোনালী বক্সী খয়রাশোলের পাঁচড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান। তাঁর স্বামী চন্দন বক্সীর দাবি, “এটা বিজেপির কাজ।” কিন্তু হঠাত্‌ কিসের আক্রোশে বিজেপি এমনটা করল? সেটা জানাতে পারেননি চন্দনবাবু। নিহতের স্ত্রী করবী জমাদার অবশ্য জানাচ্ছেন, রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে উঠে বাইরে গিয়েই বোমার আঘাত লাগে তাঁর স্বামীর। অন্য দিকে, বাউড়ি পাড়ায় বাসিন্দা সরস্বতী বাউড়ি, বুলু বাউড়ি, পালান বাউড়ি, নিয়তি বাউড়িরা পাল্টা অভিযোগ করছেন, “দল করার জন্য নয়, রাতে খাবার সময় বারবার মোটরবাইক নিয়ে পারাপার করার জন্য গোয়ালাপাড়ার ওই যুবককে বাধা দিলে ওঁরা বোমা নিয়ে আমাদের উপরে আক্রমণ করে। কেউ রাতে খাবার খেতে পারিনি।” তা হলে অমিত্রবাবু মারা গেলেন কী করে? তাঁদের দাবি, নিজেদের আনা বোমা ফেটে নিজেই মরেছেন। তাঁদের কেউ ওখানে যায়নি। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রামকৃষ্ণ রায় বলেন, “ওখানে আমাদের কিছু সমর্থক রয়েছেন ঠিকই। কিন্তু এর মধ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই কাজ করছে। বিজেপির কোনও ভূমিকা নেই। তবে গন্ডগোলের সূত্র পিকনিক থেকেই এটুকু জানি।”

জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তের পরে যে টুকু জানা গিয়েছে, পিকনিককে কেন্দ্র করে এটা পাড়ায় পাড়ায় বিবাদ, সংঘর্ষ। এর মধ্যে রাজনীতির যোগ তেমন নেই। শুক্রবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, তেঁতুল গড়ে (পুকুর) সংলগ্ন বাড়ির পাশে রাখা খড়ের পালুইয়ের গা ঘেসে রক্তের দাগ। অদূরে বোমার চিহ্ন। বোমার চিহ্ন বাউড়িপাড়ায় কুয়োর গায়েও। যেখানে পিকনিক হয়েছিল বলে বাসিন্দার জানাচ্ছিলেন, সেই উনুনের তাপ তখনও অবশিষ্ট। গ্রামে তদন্তে এসেছেন ডেপুটি পুলিশ সুপার পার্থসারথী ঘোষ (সিউড়ি সদর)। ঘটনার পরে বাউড়ি পাড়া কার্যত পুরুষ শূন্য।

অন্য দিকে, ইলামবাজার থানার ডোমনপুর গ্রামে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে বোমাবাজির ঘটনায় এক বিজেপি সমর্থক আহতের অভিযোগ উঠেছে। মাস খানেক আগে এই গ্রামে ঢুকে এক বিজেপি সমর্থক শেখ এনামুলকে গুলিতে ঝাঁঝরা করার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ফের ওই গ্রামে উভয় পক্ষের মধ্যে বোমাবাজিকে কেন্দ্র করে আবার উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে জেলা রাজনৈতিক মহল। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় ডোমনপুর গ্রামে বিজেপির কয়েক জন কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে কটূ কথা বলে তৃণমূলের লোকেরা। এর পরেই উভয় দলের মধ্যে ঝামেলা বাধে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন