এই সেই দেওয়াল লিখন। বুধবার সকালে সাঁইথিয়ায় ছবিটি তুলেছেন অনির্বাণ সেন।
দলে কোন্দল নেই— এই বার্তা দিতে এ বার মরিয়া হয়ে ভোট প্রচারের দেওয়াল লিখন করল শাসকদল তৃণমূল!
বারবার নিজেদের দলের গোষ্ঠী কোন্দলে দল যখন দিশেহারা, সর্বোচ্চ নেত্রীর নির্দেশেও যখন মেটেনি, ঠিক তখনই ভোটের মুখে সাঁইথিয়া শহরের দেওয়ালে উঠে এলো দলের গোষ্ঠী দ্বন্দের কথা। সৌজন্যে সাঁইথিয়া শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি। ‘সব বিভেদ দ্বন্দ্ব ভুলে/ ভোট দেব জোড়া ফুলে...।’— ঠিক এমন একটি ছড়া দিয়েই সাঁইথিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী নীলাবতী সাহার হয়ে ভোট প্রচারের দেওয়াল লিখন করা হয়েছে ওয়ার্ড কমিটির পক্ষ থেকে। জেলার রাজনৈতিকমহলে সে নিয়েই জোর জল্পনা শুরু হয় এ নিয়ে মঙ্গলবার। কেন না, ঘটনাচক্রে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মানস সিংহ। যিনি দলেরই অনেক নেতা-কর্মীর কথায় দলেরই অন্য আর এক গোষ্ঠী!
ঘটনা হল, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সালের লোকসভা ভোটের আগে জানুয়ারী মাস পর্যন্ত মানসবাবু সাঁইথিয়া শহরের দলীয় শহর সভাপতি হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু পরে তাকে সরিয়ে সাঁইথিয়া শহরের শহর সভাপতি হিসাবে নিযুক্ত করা হয় সাঁইথিয়ার দত্ত বাড়ির পিনাকীলাল দত্তকে। যিনি আবার সম্পর্কে সাঁইথিয়া পুরসভার পুরপিতা বিপ্লব দত্তের খুড়তুতো ভাই এবং একদা কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নীহার দত্তর ভাইপো। মানসবাবুকে শহর সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে করা হয় শহর তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান। আর এখান থেকেই নাকি দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। যদিও, বরাবরই দ্বন্দ্বের কথা অস্বীকার করে এসেছেন মানস সিংহ ও পিনাকীলাল দত্ত— দু’জনেই।
বিরোধীরা অবশ্য এই দেওয়াল-দ্বন্দ কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা সিউড়ির প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম বলেন, ‘‘ওদের নেতারা বলছেন দলে কোনও দ্বন্দ নেই। ভোটের মুখে এই দেওয়াল লিখন দ্বন্দ্বেরই একটি বিনম্র প্রতিফলন।’’ রামবাবুর কথার রেশ টেনে সাঁইথিয়া বিধানসভার বিরোধী প্রার্থী তথা বিদায়ী বিধায়ক সিপিএমের ধীরেন বাগদি বলেন, ‘‘এটা তো ওদের নতুন কথা কিছু না। দলের ভিতর যা আছে সেটাই ওদের প্রচার দেওয়ালেও প্রকাশ পাচ্ছে।’’
দ্বন্দ্বের দেওয়াল লিখন প্রসঙ্গে কী বলছেন মানসবাবু?
‘‘ব্যাপারটা আমি ঠিক জানি না। যারা লেখার দ্বায়িত্বে আছেন তাঁরা ভুল করে হয়তো লিখে ফেলেছে। ব্যাপারটা খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি।’’
কারা এই লেখার দ্বায়িত্বে ছিলেন, যাঁরা ‘ভুল করে’ দলীয় প্রার্থীর ভোট প্রচারের কথা লিখতে গিয়ে ‘বিভেদ দ্বন্দ’ লিখে বসলেন! দলীয় সূত্রের খবর, লেখার দ্বায়িত্বে যারা আছেন তাঁদের মধ্যে তৃণমূল কর্মী উজ্বল চট্টোপাধ্যায় রয়েছেন। উজ্বলবাবু তৃণমূল জেলা শিক্ষাসেলের সিউড়ি মহকুমার সাধারণ সম্পাদকও। তিনি বলেন, ‘‘ওটা একটা ছড়ার লাইন। ফেসবুক থেকে পেয়েছিলাম। আসলে ওই লেখার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের দলের কোনও দ্বন্দ্বের কথা বলিনি। সবারই সব বিভেদ দ্বন্দ্ব ভুলে তৃণমূলের প্রার্থীকে জেতানোর আহ্বান করে ছিলাম।’’
উজ্বলবাবু যাই বলুন তৃণমূল কংগ্রেসের সাঁইথিয়া শহর সভাপতি পিনাকীলাল দত্ত বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নাই। আমরা সবাই একসঙ্গেই দলের হয়ে ভোটের কাজে নেমেছি। নিজেও এখনও দেওয়াল লিখনটা দেখিনি। যে বা যারা এটা লিখেছেন তাঁরাই এ ব্যাপারে বলতে পারবেন, আমার পক্ষে দেওয়াল লিখনটা না দেখে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’
যাঁর ভোট প্রচারে এই দেওয়াল লিখন, তিনি কী বলছেন?
এলাকার প্রার্থী নীলাবতী সাহার সঙ্গে কোনও ভাবেই কথা বলা যায়নি। তবে তাঁর স্বামী তথা জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস সাহা বলেন, ‘‘আমি নিজে এরকম কোনও দেওয়াল লিখন দেখিনি। নিজে না দেখে কিছু বলতে পারব না। আর যা বলার জেলা বা শহর সভাপতিই বলবেন। আমি কিছু বলব না।’’