দুর্নীতির দায়ে পুরুলিয়ার শিক্ষিকার জেল-জরিমানা

ভুয়ো বিল জমা দিয়ে হস্টেলের আবাসিক ছাত্রীদের মাছ, মাংস ও শাক-সব্জির বাবদ বরাদ্দ সরকারি অর্থ নয়ছয়ের চেষ্টার দায়ে কারাদণ্ড হল এক শিক্ষিকার। শুক্রবার এই রায় ঘোষণা করেন পুরুলিয়া জেলা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক (বিশেষ আদালত) পার্থ লাহিড়ী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০৫
Share:

ভুয়ো বিল জমা দিয়ে হস্টেলের আবাসিক ছাত্রীদের মাছ, মাংস ও শাক-সব্জির বাবদ বরাদ্দ সরকারি অর্থ নয়ছয়ের চেষ্টার দায়ে কারাদণ্ড হল এক শিক্ষিকার। শুক্রবার এই রায় ঘোষণা করেন পুরুলিয়া জেলা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক (বিশেষ আদালত) পার্থ লাহিড়ী।

Advertisement

মামলার সরকারি আইনজীবী সুবোধ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কেন্দা আশ্রমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা উষা সিংহের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ উঠেছিল। ২০০৩ সালে উষাদেবী এই বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষিকার পাশাপাশি ছাত্রী হস্টেলের দায়িত্বেও ছিলেন। স্থানীয় মানুষজন ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে তত্‌কালীন শিক্ষামন্ত্রী কান্তি বিশ্বাসের কাছে হস্টেল পরিচালনা সংক্রান্ত নানা অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে রাজ্য শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক কেন্দা আশ্রমিক বালিকা বিদ্যালয়ে সরেজমিন তদন্তে আসেন। সেই তদন্তে হস্টেলের ছাত্রীদের মাছ, মাংস, শাক-সব্জি ও মুদিখানার একাধিক বিল ভুয়ো বলে সন্দেহ হয়। সন্দেহের তালিকায় থাকা বিলগুলি সত্যিই ভুয়ো বলে প্রমাণিত হওয়ার পরে পুরুলিয়ার তত্‌কালীন স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) খগেন্দ্রনাথ সাহু উষাদেবীরর বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের ২৭ মে কেন্দা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

সরকারি আইনজীবী সুবোধবাবু বলেন, “২৯টি ভাউচার বা বিল প্রাথমিক ভাবে ভুয়ো বলে সন্দেহের তালিকায় ছিল। ওই বিলগুলি যাঁদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল, তাঁদেরও আদালতে তলব করা হয়েছিল। তদন্ত চলাকালীন তাঁদের ফের ওই বিলের প্রতিলিপি লিখে দিতে বলা হয়। তাঁরা তা লিখে দিলে কলকাতার ভবানী ভবনে প্রাথমিক ভাবে ভুয়ো বলে সন্দেহ করা বিল এবং নতুন করে লেখা বিল হাতের লেখা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। হাতের লেখা বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষায় বিলগুলি ভুয়ো বলেই প্রমাণিত হয়।” তিনি জানান, এই বিলগুলিতে টাকার অঙ্কের পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ২২৬ টাকা। এর পরেই রাজ্য শিক্ষা দফতর জেলা স্কুল পরিদর্শককে অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। তার পরেই স্কুল পরিদর্শক পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন।

Advertisement

তদন্ত শেষে পুলিশ ২০০৬ সালের এপ্রিলে অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে। মামলার চার্জ গঠন হয় ২০১৩ সালের এপ্রিলে। বিচার শুরু হয় চলতি বছর মে মাসে। এই মামলায় ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন বলে সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন। শুক্রবার বিচারক অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে জাল নথি দাখিল করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের চেষ্টার জন্য সাড়ে তিন বছর জেল এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। অনাদায়ে আরও এক মাস কারাবাস। আর জাল নথি আসল বলে চালানোর চেষ্টার দায়ে এক বছর কারাবাস ও এক হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন বিচারক। দু’টি সাজাই একই সঙ্গে চলবে। এ দিন পুলিশ ওই শিক্ষিকাকে এজলাসে নিয়ে আসার পথে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এজলাসেও মাথা নিচু করেই বেশি সময় কাটিয়েছেন। সাজা শুনে কোনও কথাই বলতে চাননি উষাদেবী। পুলিশের গাড়িতে ওঠার আগে শুধু বলেছেন, “আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন