দায়িত্ব নিয়ে অচলাবস্থা, মিড-ডে মিল বন্ধ

দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের মিড-ডে মিল রান্নার দায়িত্বে থাকা মহিলা পাচকদের হঠিয়ে এলাকার অন্য মহিলা স্বনির্ভর সদস্যদের রান্না করার নির্দেশকে ঘিরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে হুড়ার খৈরি-পিহিড়া এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সোমবার পঞ্চায়েত থেকে খৈরি-পিহিড়া নিম্ন বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি নির্দেশ পাঠানো হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হুড়া শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০৩
Share:

হুড়ার স্কুলে স্বনির্ভর দলের মহিলাদের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ।

দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের মিড-ডে মিল রান্নার দায়িত্বে থাকা মহিলা পাচকদের হঠিয়ে এলাকার অন্য মহিলা স্বনির্ভর সদস্যদের রান্না করার নির্দেশকে ঘিরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে হুড়ার খৈরি-পিহিড়া এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সোমবার পঞ্চায়েত থেকে খৈরি-পিহিড়া নিম্ন বুনিয়াদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি নির্দেশ পাঠানো হয়। ওই নির্দেশে বলা হয়, এবার থেকে এলাকার মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরাই ম়িড-ডে মিল রান্নার কাজ করবেন। নির্দেশ পাওয়ার পরেই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক এতদিন যাঁরা মিড-ডে মিল রান্নার কাজে যুক্ত ছিলেন তাঁদের ডেকে জানানোর পরেই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

Advertisement

বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েতের এই নয়া নির্দেশ যাঁরা এতদিন রান্নার দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরা মানতে রাজি নন। এদিকে পঞ্চায়েতের নির্দেশে পেয়ে এলাকার দশটি স্বনির্ভর মহিলা গোষ্ঠীর সদস্যেরা রান্না করার জন্য বিদ্যালয়ে গেলে তাঁদের সঙ্গে পুরনোদের বিরোধ বাধে। এই বিরোধের জেরে গত ২৮ অক্টোবর থেকে টানা সাতদিন রান্না বন্ধ রয়েছে বিদ্যালয়ে। অভুক্ত থাকতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। এই ডামাডোলের জেরেই টিফিনের পরে প্রতিদিনই ছুটি হয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়। এ দিন উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় বিদ্যালয়ে পৌঁছল পুলিশও।

এলাকার স্বনির্ভর মহিলা গোষ্ঠীর সদস্য প্রতিমা পরামাণিক, রেখা গঁরাই, শকুন্তলা মাহাতোরা অবশ্য বলেন, “আমরা অনেকদিনই দল গড়েছি. পঞ্চায়েতে গেছি, বিডিওর কাছেও গিয়েছি, বিধায়ককেও বলেছি। পঞ্চায়েত আমাদের রান্না করতে বলেছে কিন্তু আমাদের রান্না করতে দেওয়া হচ্ছে না।” তাঁরা জানান, মজুত ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে যাঁরা এতদিন রান্না করছে। এই বিদ্যালয়ে যাঁরা রান্নার কাজ করেন সেই রীতা চট্টোপাধ্যায় ও চায়না গঁরাইয়ের দাবি, “২০০৩ থেকে এই বিদ্যালয়ে রান্নার কাজ করে আসছি। আগে মাসে একশো টাকা, দেড়শো টাকা মাইনেতে আমরা রান্নার কাজ করেছি। এখন রান্নার কাজে মজুরি বাড়ায় সকলে এসে দাবি করছেন।” চায়নাদেবীর কথায়, “রান্নার কাজ করছি দীর্ঘ দিন। এই কাজ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে আমাদের সেই মর্মে লিখিত দেওয়া হোক। কেন আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে. তাছাড়া আমাদের বকেয়া টাকা মেটাতে হবে।”

Advertisement

ঘটনা হল, রাজনৈতিক রঙও লেগেছে। এতদিন যাঁরা এই বিদ্যালয়ে রান্নার দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে বামফ্রন্টের আমলে। রীতাদেবী বলেন, “আমাদের নিয়োগ সিপিএমের সময় হয়েছে বলে কি আমরা সিপিএম? আমরা তো রাঁধুনি। কিন্তু আমাদের সিপিএম বলে তকমা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।” বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র মাহাতো বলেন, “আমি এই সমস্যার কথা প্রশাসনের সকলকেই জানিয়েছি। সবাই বলছেন আপনি সমাধান করুন। আমি কিভাবে সমাধান করব বলুন? এই তো আজও তালা বন্ধ!”

লক্ষণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দিলীপ রায় বলেন, “আগে যাঁরা রান্নার দায়িত্ব পালন করতেন তাঁদের নিয়োগ হয়েছিল বামফ্রন্টের আমলে বলেই তাঁদের বঞ্চিত করা হচ্ছে তা নয়। এখন স্বনির্ভর মহিলা গোষ্ঠীর সদস্যেরা রান্না করার কাজ করবেন। ওনারা দল গড়লে ওনারাও রান্না করতে পারবেন।” হুড়ার যুগ্ম বিডিও অশোক কুমার রক্ষিত বলেন, “এলাকার কয়েকটি বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল নিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেখছি কীভাবে সমস্যার সমাধান হয়।”

—নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন