ছেদ পড়ল ৪০ বছরের ইতিহাসে

দক্ষিণেশ্বরের মতো তারাপীঠেও এক ছাদের তলায় স্টল

এক, দুই করে করে প্রায় ৩২টি স্টল বসেছিল। বাড়তে বাড়তে মূল মন্দিরের গেট, শ্মশান লাগোয়া এলাকায় চলে এসেছিল স্টলগুলি। এর ফলে তারাপীঠ মন্দিরে যাওয়া-আসার রাস্তা যেমন সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছিল, তেমনি নোংরা হচ্ছিল মন্দির এলাকা। প্রায় ৪০ বছরের ব্যবধানে ওই স্টলগুলিকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। শুধু তাই নয়, এক ছাদের তলায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৩০
Share:

(বাঁ দিকে) নতুন জায়গায় বসেছে স্টল। (ডান দিকে) মন্দির চত্বর থেকে সরানো হচ্ছে আবর্জনা। ছবি: অনির্বাণ সেন

এক, দুই করে করে প্রায় ৩২টি স্টল বসেছিল। বাড়তে বাড়তে মূল মন্দিরের গেট, শ্মশান লাগোয়া এলাকায় চলে এসেছিল স্টলগুলি। এর ফলে তারাপীঠ মন্দিরে যাওয়া-আসার রাস্তা যেমন সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছিল, তেমনি নোংরা হচ্ছিল মন্দির এলাকা। প্রায় ৪০ বছরের ব্যবধানে ওই স্টলগুলিকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। শুধু তাই নয়, এক ছাদের তলায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সোমবার ওই স্টলগুলি সরিয়ে দেওয়ায় তারাপীঠের ইতিহাসে একটি নতুন দিক উন্মোচন হল বলে মনে করেছেন এলাকাবাসী, তারামাতা মন্দির সেবাইত সমিতি থেকে শুরু করে মা তারার কাছে পুজো দিতে আসা দর্শনার্থীরা।

Advertisement

মঙ্গলবার তারাপীঠে গিয়ে দেখা গেল, মন্দির চত্বরের মধ্যে কোথাও বড় বড় প্লাস্টিক ছেঁড়া পড়ে আছে। কোথাও বা স্তূপীকৃত আকারে পড়ে আছে খালি সিঁদুর, আলতা, ধূপ কাঠির কাগজের প্যাকেট। মন্দির চত্বরের মধ্যে গণেশ, নারায়ণ, শিব, বামাক্ষ্যাপা মন্দির এবং নাট মন্দিরে বলিদানের জায়গা এখন ভাল ভাবে দেখা যাচ্ছে। ওই সমস্ত জায়গাগুলি ঘিরে আগে চৌকি পেতে অস্থায়ী ভাবে গড়ে উঠেছিল গুমটিগুলি। পরে সেখান থেকে ছোটখাটো ৩২টি স্টল গজিয়ে উঠেছিল। ওই সমস্ত স্টল থেকে পুজোর ডালি বিক্রি হওয়ার জন্য বড় বড় জবা ফুলের মালা টাঙানো থাকত। দোকান ঘিরে উঁচু ভাবে প্লাস্টিকের ছাউনি টাঙানো থাকায় মন্দির চত্বরে থাকা শিব, নারায়ণ বামাক্ষ্যাপার মন্দির কিংবা অন্য মন্দিরগুলি দূর থেকে দেখতে পাওয়া যেত না। দোকানের সামনে ভিড় ঠেলে গাদাগাদি করে ওই সমস্ত মন্দিরগুলিতে দর্শনার্থীদের পুজো দিতে যেতে হত। খুবই অসুবিধার মধ্যে পড়তে হত সকলকে। ঠিক আগে যেমনটা সমস্যায় পড়তে হত দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়া দর্শনার্থীদের। সকলের সমস্যার কথা ভেবে সেখানও স্টলগুলিতে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণেশ্বরের মতো দীর্ঘ ৪০ বছরের ইতিহাসে তারাপীঠেও পরিবর্তন আনা হয়। তারামাতা সেবাইত সমিতির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায়, সম্পাদক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তারাপীঠে দর্শনার্থীদের সংখ্যা আগের থেকে অনেক বেড়ে গিয়েছে। তারাপীঠ এখন আন্তর্জাতিক তীর্থস্থান। কিন্তু সেই তীর্থস্থানে পুজো দিতে এসে দর্শনার্থীরা মন্দির চত্বরে থাকা দোকান নিয়ে নানান অসুবিধার জন্য অনেকেই আমাদের কাছে দীর্ঘদিন থেকে অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদের কথা ভেবে মন্দির চত্বর থেকে দোকানগুলি সরানো হয়েছে।” তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, “এর আগে মন্দির চত্বর থেকে দোকান তোলার ব্যাপারে চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ। দীর্ঘ পাঁচ বছর থেকে তারামাতা সেবাইত সমিতি জীবিতকুণ্ড পারে জায়গা দেখে সেখানে বসবাসকারী এক সেবাইতকে তারাপীঠ এলাকায় একটি থাকার জায়গা করে দেওয়া হয়। তার পর থেকেই মন্দির চত্বর থেকে দোকান সরানোর ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়।” তারাপীঠ মন্দির সেবাইত সমিতির উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সুকুমার মুখোপাধ্যায় জানান, আজ যেখানে দোকানদের সরানো হয়েছে এবং দোকান করে দেওয়া হয়েছে, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী এবং সাংসদ শতাব্দী রায় সহযোগিতা করেছেন। তাঁদের সহযোগিতা এবং মন্দির কমিটির উদ্যোগে এত বড় কাজ করতে পারা গিয়েছে বলে দাবি সুকুমারবাবুর।

Advertisement

এ দিকে, স্থায়ী দোকান পেয়ে খুশি সেবাইত কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপদতারণ চক্রবর্তী, সূর্যকান্ত চট্টোপাধ্যায়, প্রণব চট্টোপাধ্যায়, উপল চক্রবর্তীরা। তাঁদের কথায়, “এক বছর আগে মন্দির কমিটি আমাদেরকে মন্দির চত্বর থেকে সরে যাওয়ার জন্য বলেছিল। কিন্তু দোকান বিলি-বণ্টন নিয়ে লটারি হওয়ার পর সেগুলি সুষ্ঠুভাবে বিলি হয়েছে। তারপর সোমবার থেকে ৩২ জন দোকানের মালিক এক জায়গায় তাঁদের দোকান সরিয়ে নিয়ে আসতে পেরেছেন।” তাঁদের দাবি, এর জন্য মন্দির কমিটিকে কোনও টাকা দিতে হয়নি। দোকান পাওয়ার পর সেগুলি নিজেদের মতো করে আলাদা আলাদা ভাবে সাজানোর দায়িত্ব দোকানের মালিকের। কী বলছেন দর্শনার্থীরা? তারাপীঠে পুজো দিতে এসে মন্দির চত্বর থেকে দোকান সরে গিয়েছে দেখে দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়লেন উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া থেকে আসা জয়দেব বিশ্বাস। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “বছরে একবার তারাপীঠ আসি। মন্দির চত্বরে স্টল থাকার ডালা কেনার জন্য টানাটানি পড়ে যেত। এখন আর সেটা হবে না। চলাফেরা করতে সমস্যা হত।” আর এক দর্শনার্থী রুপক সরকার বললেন, “দক্ষিণেশ্বরের মতো দোকান সরে যাওয়ার জন্য একটি সিস্টেম মেনে দর্শনার্থীরা এ বার পুজো দিতে পারবেন এখানে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন