দশ কাউন্সিলরের ভোটে সরতে হল পুরপ্রধানকে

নিজের কুর্সি বাঁচিয়ে রাখতে পারলেন না ঝালদার তৃণমূলের পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার। বিক্ষুব্ধদের ডাকা আস্থা ভোটে সোমবার তিনি পরাজিতই হলেন। তৃণমূল, কংগ্রেস ও সিপিএমের কাউন্সিলরা একযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মত দিয়ে পুরপ্রধানের পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দিলেন। ১২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১০ জনই প্রদীপবাবুর বিপক্ষে মত দেন। লক্ষ্যণীয় ভাবে প্রদীপবাবু ও তাঁর পছন্দের উপ-পুরপ্রধান উত্তম চন্দ্র অবশ্য এ দিন পুরভবনে আসেননি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝালদা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৪ ০৫:২০
Share:

অপসারিত পুরপ্রধান।

নিজের কুর্সি বাঁচিয়ে রাখতে পারলেন না ঝালদার তৃণমূলের পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার। বিক্ষুব্ধদের ডাকা আস্থা ভোটে সোমবার তিনি পরাজিতই হলেন।

Advertisement

তৃণমূল, কংগ্রেস ও সিপিএমের কাউন্সিলরা একযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মত দিয়ে পুরপ্রধানের পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দিলেন। ১২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১০ জনই প্রদীপবাবুর বিপক্ষে মত দেন। লক্ষ্যণীয় ভাবে প্রদীপবাবু ও তাঁর পছন্দের উপ-পুরপ্রধান উত্তম চন্দ্র অবশ্য এ দিন পুরভবনে আসেননি। ঝালদা পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার তাপস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “১০ জন কাউন্সিলরই প্রদীপবাবুকে পুরপ্রধানের পদ থেকে সরানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। এ নিয়ে মহকুমাশাসককে রিপোর্ট পাঠাব।”

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রদীপবাবু একতরফা ভাবে পুরসভা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলে ছয় কাউন্সিলর জেলা প্রশাসনকে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থার চিঠি দেন। এই চিঠিতে বামফ্রন্ট ও নির্দল কাউন্সিলরদের সঙ্গে তৃণমূলের দুই কাউন্সিলরও স্বাক্ষর করেন। ওই কাউন্সিলরদের বক্তব্য, বিধি অনুযায়ী তাঁরা চিঠি দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আস্থা প্রমাণের জন্য পুরপ্রধানের বৈঠক ডাকার কথা। কিন্তু তিনি বৈঠক ডাকেননি। সদ্য নিযুক্ত উপ-পুরপ্রধানও সময় মতো সেই বৈঠক ডাকেননি। এর পরেই বিধি অনুযায়ী ওই ছ’জনের মধ্যে তিন জন এ দিন বৈঠক ডেকেছিলেন। তার ভিত্তিতেই এ দিন আস্থা ভোট হয়।

Advertisement

এ দিনের বৈঠকে পুরসভার মোট ১২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১০ জন উপস্থিত ছিলেন। পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার ও উপ-পুরপ্রধান উত্তম চন্দ্র গরহাজির ছিলেন। উপস্থিত কাউন্সিলদের মধ্যে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন নির্দলের সুরেশ অগ্রবাল। তিনি কাউন্সিলদের জানান, কেন তাঁরা এ দিনের বৈঠক আহ্বান করেছেন। উল্লেখ্য নির্দলের সুরেশ অগ্রবাল নিজেও পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থার চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। তিনি কাউন্সিলদের পুরপ্রধানের উপর আস্থা রয়েছে কি না তা নিয়ে মত প্রকাশ করতে বলেন। পরে তিনি বলেন, “১০ জন কাউন্সিলরই প্রদীপবাবুর বিরুদ্ধে মত দেন।” উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস কাউন্সিলর রঘুনন্দন দাস। তিনি বলেন, “সবাই পুরপ্রধানের অপসারণের পক্ষে মত দিয়েছেন।”

প্রদীপ কর্মকার গত ডিসেম্বরে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল ভবনে গিয়ে দলের সবর্ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের কাছে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এরপরে কংগ্রেস থেকে আরও দুই কাউন্সিলর মনোজ সাউ ও মায়া চন্দ্রও কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। এই পুরসভায় কংগ্রেস কাউন্সিলর ছিলেন চারজন। তাঁদের মধ্যে তিনজনই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় প্রদীপবাবুই পুরপ্রধানের পদে বহাল থেকে যান।

সমস্যার সূত্রপাত হয় তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য বরাদ্দ ঋণ নিয়ে। অভিযোগ, প্রদীপবাবু কোনও কাউন্সিলরকে না জানিয়ে শুধুমাত্র নিজের ওয়ার্ড থেকে উপভোক্তা বেছে ঋণ বরাদ্দ করেন। এই বিষয়টি নিয়ে সরব হন বেশির ভাগ কাউন্সিলর। যদিও এই অভিযোগ প্রদীপবাবু মানতে চাননি। প্রদীপবাবুর সঙ্গে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসা মনোজ সাউ ও মায়া চন্দ্ররা অভিযোগ করেন, “উনি নিজে দলের কোনও নীতি মানেন না। কয়েকদিন আগে সিপিএমের একজনকে উপ পুরপ্রধান পদে নিযুক্ত করলেন। দলের কাউকে পেলেন না। সবাই ওঁর স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছেন।”

প্রাক্তন পুরপ্রধান সিপিএমের পঙ্কজ মণ্ডল বলেন, “আমরাও প্রদীপবাবুকে পুরপ্রধানের পদ থেকে অপসারণের পক্ষে ভোট দিয়েছি।” যদিও তাঁদের দল থেকেই ভোটে জিতে সম্প্রতি উপ-পুরপ্রধানের পদ পাওয়া উত্তম চন্দ্র এ দিন গরহাজির থাকলেন। পঙ্কজবাবু বলেন, “এ নিয়ে আমি কী বলব? পুরপ্রধান ওঁকে উপ-পুরপ্রধান হিসেবে কাজ করতে বলেছিলেন। পুরো বিষয়টি দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি।” ঝালদার দায়িত্বে থাকা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ ইব্রাহিম বলেন, “ঝালদায় কা হয়েছে জানার পরই বলতে পারব।”

উপ-পুরপ্রধান উত্তম চন্দ্রের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে বারবার তাঁর মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেন নি। নিজের অপসারণের বিষয়ে প্রদীপবাবু বলেন, “আমি কলকাতায় রয়েছি। শুনেছি পুরসভায় বৈঠক হয়েছে। কী হয়েছে জেনে পরে জানাব।” তৃণমূলের পুরপ্রধানের অপসারণের বিষয়ে জেলা তৃণমূল নেতা নবেন্দু মাহালি বলেন, “ঝালদার বিষয়টি নিয়ে দলে আলোচনা হবে। তারপরেই এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাব।” পুরুলিয়ার মহকুমাশাসক (পশ্চিম) নিমাইচাঁদ হালদার বলেন, “রিপোর্ট পেলে পুর দফতরে পাঠিয়ে নির্দেশ মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন