অবরোধ তুলতে লাঠি। মঙ্গলবারের নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চকোট কলেজে ছাত্র সংগঠন গড়া নিয়ে কিছুদিন ধরেই তৃণমূল-বিজেপি দ্বন্দ্বে তেতে ছিল নিতুড়িয়ার সড়বড়ি এলাকা। মঙ্গলবার তা ঘোরালো হল।
বিজেপি-র ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র এক নেতা গণেশ মাজিকে সোমবার পঞ্চকোট কলেজে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। পুলিশ গিয়ে গণেশকে উদ্ধার করে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার কলেজের সামনে রাস্তা অবরোধ করেন বিজেপি ও তাদের ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা। সেই সময় লাঠিসোটা নিয়ে চড়াও হয়ে বিজেপির লোকেদের মারধর করার অভিযোগ উঠল টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। বিজেপি-র পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, মারধরে ইন্ধন জুগিয়েছেন রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি পূর্ণচন্দ্র বাউরি। পুলিশের সামনেই এই ঘটনা ঘটলেও তারা হাত গুটিয়ে ছিল বলেও বিজেপি-র দাবি।
যদিও শেষ পর্যন্ত বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেন রঘুনাথপুরের এসডিপিও পিনাকী দত্ত। রাত পর্যন্ত এলাকায় পুলিশ টহল চলেছে। কলেজের সামনে বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলেন, “নিতুড়িয়ায় পুলিশের উপস্থিতির জন্যই বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছি। এলাকায় টহল চলছে।” এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। ওই তিন জন তৃণমূলের কর্মী হিসাবেই পরিচিত।
পঞ্চকোট কলেজের ছাত্র সংসদ টিএমসিপি-র দখলে। তবে, লোকসভা নির্বাচনের পরে কলেজে সংগঠন বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। তা নিয়ে এবিভিপি এবং টিএমসিপি-র দ্বন্দ্বও শুরু হয়েছে। এ দিন সকালে সড়বড়ি মোড়ের সামনে কলেজের কাছে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন জনা পঁচিশেক বিজেপি কর্মী-সমর্থক। খবর পেয়ে আধ ঘণ্টার মধ্যেই নিতুড়িয়া থানার ওসি সাধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে থানা থেকে কয়েক জন পুলিশ পুলিশকর্মী অবরোধ তুলতে যান। বিজেপি-র অভিযোগ, তাদের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ কথা বলা শুরু করার কিছু পরেই হঠাৎ ওই কর্মীদের উপরে পাথর পড়তে শুরু করে। তার পরেই তৃণমূলের শতাধিক লোক লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন বিজেপি-র অবরোধকারীরা। লাঠির ঘায়ে তাদের কিছু কর্মী অল্পবিস্তর জখম হন বলেও বিজেপি-র দাবি। দলের নিতুড়িয়া ব্লক সভাপতি ললিত অগ্রবাল বলেন, “বিনা প্ররোচনায় তৃণমূলের ছেলেরা আমাদের উপরে চড়াও হয়ে মারধর করেছে।” সড়বড়ি এলাকায় তাদের পার্টি অফিস ও কর্মীদের মোটরবাইক ভাঙচুর করেছে তৃণমূল বলেও বিজেপি-র অভিযোগ।
আচমকা হামলায় আতঙ্কিত বিজেপি কর্মীরা সেই সময় সড়বড়ি এলাকা ছেড়ে চলে যান। পরে এ দিন দুপুরে নিতুড়িয়া যান বিজেপি-র জেলা সভাপতি বিকাশবাবু ও জেলা সম্পাদক বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী। তাঁদের উদ্যোগে এলাকায় ফেরেন দলীয় কর্মীরা। পরে সাত জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে বিজেপি। অভিযুক্তেরা সকলেই তৃণমূল কর্মী ও বিধায়ক পূর্ণচন্দ্রবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
বিকাশবাবুর আরও অভিযোগ, “পঞ্চকোট কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসাবে তৃণমূল বিধায়ক কলেজে নৈরাজের পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কলেজে বিরোধী ছাত্র সংগঠনকে দমন করতে চাইছেন বিধায়ক। তাঁর প্ররোচনাতেই আমাদের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের কলেজে আটকে রাখছে টিএমসিপি। আর তার প্রতিবাদ করতে গেলে হামলা চালাচ্ছে তৃণমূলের কর্মী ও তাদের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।”
বিধায়কের পাল্টা দাবি, এ দিন তিনি নিতুড়িয়াতেই ছিলেন না। পূর্ণচন্দ্রবাবু বলেন, “বিধানসভার কাজে কলকাতায় আছি। ঘটনার বিষয়ে শুনেছি। তবে, ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে বিজেপি। ওদের অবরোধে ব্যস্ত রাস্তায় যানজট হওয়ায় স্থানীয় লোকজনই অবরোধ তুলে দিয়েছে। এতে আমাদের কোনও কর্মীই জড়িত নন।” আর কলেজে নিয়ে বিজেপি-র তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “এলাকায় শিক্ষাক্ষেত্রে কিছু লোক রাজনীতি করে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছে। এটা কিন্তু কখনওই আমরা মেনে নেব না।”