নিয়ন্ত্রণ নেই ভারী যানে, সেতু ভাঙল শ্যামবাটিতে

প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়েই নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে দিনের পর দিন ওই সেতুর উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করেছে। বুধবার গভীর রাতে শান্তিনিকেতনে শ্যামবাটি ক্যানাল মোড়ে সেচ দফতরের ওই সেতুটিই বসে গেল। যার জেরে মূল শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার মানুষ। বেশ কয়েক কিলোমিটার ঘুরে বোলপুরে ঢুকতে পারছেন তাঁরা। আবার খোয়াইয়ে প্রতি শনিবার বসা ‘অন্য হাট’ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকেরা ওই সেতু দিয়েই যাতায়াত করেন। সেটি বসে যাওয়ায় তাঁরাও মুশকিলে পড়বেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৩৭
Share:

বুধবার গভীর রাতে শান্তনিকেতনে সেচ দফতরের এই সেতুটিই ভেঙে পড়েছে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়েই নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে দিনের পর দিন ওই সেতুর উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করেছে। বুধবার গভীর রাতে শান্তিনিকেতনে শ্যামবাটি ক্যানাল মোড়ে সেচ দফতরের ওই সেতুটিই বসে গেল। যার জেরে মূল শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার মানুষ। বেশ কয়েক কিলোমিটার ঘুরে বোলপুরে ঢুকতে পারছেন তাঁরা। আবার খোয়াইয়ে প্রতি শনিবার বসা ‘অন্য হাট’ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকেরা ওই সেতু দিয়েই যাতায়াত করেন। সেটি বসে যাওয়ায় তাঁরাও মুশকিলে পড়বেন।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই রাস্তা দিয়ে সর্বোচ্চ ১৩ টন ওজনের যানবাহন যাতায়াতের কথা। কিন্তু বোলপুর-পাড়ুই রাস্তার উপরে থাকা ওই সেতুর বহনক্ষমতা মেরেকেটে ৩০ টন। তা সত্ত্বেও দীর্ঘ দিন ধরে সেখান দিয়ে ৫০ টন এবং তারও বেশি মালবাহী গাড়ি চলাচল করে। ফলে ওই সেতু আগেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বুধবার রাতে পাথর বোঝাই ট্রাক যাওয়ার পরে সেতুটি বসে যায়। এ ব্যাপারে প্রশাসনিক নজরদারির অভাবকেই দুষছেন বাসিন্দারা। ভারী যান চলাচলের বিষয়টি পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ জানিয়েও কোনও ফল মেলেনি বলে তাঁদের দাবি। এ দিন সেতু বসে এক রকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয় ফুলডাঙার মুন্নি হেমব্রম, উত্তরপল্লির তাপস সাহা, সঙ্গীতভবনের অধ্যাপক সুমিত বসুরো মতো অসংখ্য মানুষ।

সেচ দফতরের ময়ূরাক্ষী সাউথ ক্যানাল ডিভিশনের অন্তর্গত ওই সেতুটি পঞ্চাশের দশকে তৈরি হয়েছিল। সেখানে জল ধরে রাখা ও ছাড়ার জন্য স্লুইস গেটের ব্যবস্থাও রয়েছে। ময়ূরাক্ষীর জল ওই ক্যানাল দিয়ে মুর্শিদাবাদের কান্দি অবধি সেচের জল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অভিযোগ, বোলপুর-সিউড়ি রাস্তায়, বল্লভপুরের কাছে শাল নদীর উপর থাকা সেতু তৈরির কাজ চলার জন্য বেশির ভাগ মালবাহী যান এই ছোট সেতুর উপর দিয়েই চলাচল করছে। ফলে দিনের পর দিন নিজের বহনক্ষমতার বাইরে মালবাহী, পাথর বোঝাই ট্রাক আসা-যাওয়া করে শান্তিনিকেতন-সিউড়ি ভায়া কসবা রাস্তার হাল খারাপ হচ্ছিলই। মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তাতে নয়া সংযোজন হল, শ্যামবাটি ক্যানালের এই স্লুইস গেটের সেতু বসে যাওয়া। অতীতে সম্পূর্ণ সেচের কাজের জন্য ব্যবহৃত হলেও ক্রমে বসতি বাড়ায় বহু দিন ধরেই বোলপুর, শান্তিনিকেতন, প্রান্তিক, গোয়ালপাড়া, তালতোড়, বনেরপুকুর ডাঙা প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দারা এই সেতুকেই যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। এমনকী, বোলপুর-সিউড়ি রাস্তায় ওঠার জন্য অনেকেই ওই পথকে কাজে লাগান। কিন্তু কালভার্ট ভেঙে পড়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ওই রাস্তার উপর যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এলাকার বহু সাধারণ বাসিন্দা, সরকারি কর্মী থেকে স্কুলপড়ুয়া প্রত্যেকেই সমস্যায় পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বোলপুর যাতায়াতের জন্য বোলপুর-সিউড়ি মূল সড়কটি ব্যবহার করছেন। আবার কেউ কেউ প্রান্তিক স্টেশন দিয়ে বোলপুর-লাভপুর সড়ক ধরছেন। দু’টি ক্ষেত্রেই বাসিন্দাদের প্রায় কয়েক কিলোমিটার বেশি ঘুরে যেতে হচ্ছে।

Advertisement

এ দিকে, সেতু বসে যাওয়ায় গাড়ি চালকেরা ঘুরে গিয়ে শ্যামবাটী এলাকার একটি পাড়ার ভিতরের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে শুরু করায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের একাংশ। এ দিন অনেকেই গাড়ি চালকদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। এই পরিস্থিতিতে ওই বাসিন্দারা, ঘুরপথে ৭ কিলোমিটার না গিয়ে শ্যামবাটি বাজারের পাশে সেচ দফতরের রাস্তা দিয়ে অস্থায়ী ভাবে যাতায়াত করতে দেওয়ার দাবিও তোলেন। খবর পেয়ে শান্তিনিকেতন তদন্ত কেন্দ্রের আইসি অশোক সিংহ মহাপাত্র ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সেচ দফতরের এলাকার দায়িত্বে থাকা অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অমিতাভ চৌধুরীকে এ দিন তাঁর দফতরে পাওয়া যায়নি। কয়েক বার ফোন করা হলে তিনি ‘ব্যস্ত আছি, পরে করুন’ বলে ফোন কেটে দেন। অন্য দিকে, এসডিও (বোলপুর) মলয় হালদার বলেন, “জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” যদিও প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, ওই সেতু নিয়ে দফতর প্রায় দেড় কোটি টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাব জমা পড়েছে। অনুমোদন মিললে শ্যামবাটি ক্যানালের ডাউন স্ট্রিমে গাড়ি চলাচলের জন্য সেতুর ব্যবস্থা হবে। তার আগেই এই দুর্ঘটনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন