পুকুর সাফাইয়ে নামলেন শহরবাসী

এলাকার পুকুরের জল রান্নার কাজে ব্যবহার হত। সেই পুকুরের জল এখন ব্যবহারের অনুপযুক্ত। পুকুরের জল দূষণে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এ ছাড়া প্লাস্টিক-সহ নানা রকম নোংরা আর্বজনা পুকুরপাড়ে পড়ে থাকায় সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। তাই দুর্গাপুজো এবং লক্ষ্মী পুজো রাক হতেই স্থানীয় ক্লাবের সদস্যদের ডাকে হাত মিলিয়ে রামপুরহাটের চালধোয়ানি পুকুর এবং পাড় থেকে নোংরা-আবর্জনা তুলে পরিষ্কার করলেন এলাকাবাসী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১
Share:

চলছে চালধোয়ানি পুকুরপাড় সাফাই। —নিজস্ব চিত্র

এলাকার পুকুরের জল রান্নার কাজে ব্যবহার হত। সেই পুকুরের জল এখন ব্যবহারের অনুপযুক্ত। পুকুরের জল দূষণে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এ ছাড়া প্লাস্টিক-সহ নানা রকম নোংরা আর্বজনা পুকুরপাড়ে পড়ে থাকায় সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। তাই দুর্গাপুজো এবং লক্ষ্মী পুজো রাক হতেই স্থানীয় ক্লাবের সদস্যদের ডাকে হাত মিলিয়ে রামপুরহাটের চালধোয়ানি পুকুর এবং পাড় থেকে নোংরা-আবর্জনা তুলে পরিষ্কার করলেন এলাকাবাসী। তাঁদের উদ্যোগে সাড়া দিয়ে বুধবার স্বয়ং মন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক, মহকুমাশাসক, পুরপ্রধান, উপপুরপ্রধান, বাড়ির বধূ, কলেজ এবং স্কুলপড়ুয়া, অফিস কর্মী, ব্যবসাদার-সহ আরও অনেকে ঝাড়ু হাতে সাফাই অভিযানে নেমে পড়লেন। উদ্দেশ্য নির্মল ভারত গড়া।

Advertisement

এ দিন সকালে এই ভাবেই ঐতিহ্যবাহী পুকুর ‘চালধোয়ানি’ এবং পুকুরপাড় সংলগ্ন এলাকা পরিষ্কার করতে দেখা গেল তাঁদের। প্রথম দিকে স্থানীয় দীনবন্ধু ক্লাবের উদ্যোগে সকাল সাতটা থেকে ক্লাবের ছেলেরা ঝাড়ু হাতে ক্লাব প্রাঙ্গণ এবং পুকুরপাড়ে উপস্থিত হন। কেউ কেউ হাতে ‘এ শহর আপনার, একে পরিষ্কার ও সুন্দর রাখার দায়িত্ব আপনার’, ‘চালধোয়ানি পুকুরে কোনও প্রকার আবর্জনা ফেলিবেন না, প্লাস্টিক বর্জন করুন’ এই ধরণের লেখা ফেস্টুন দড়িতে বেঁধে পুকুরপাড়ের চারিদিকে টাঙিয়ে দেন। ক্লাবের দুর্গাপুজা কমিটির সম্পাদক বাদশা পোদ্দার বলেন, “এই সমস্ত ফেস্টুনগুলো স্থায়ী ভাবে টাঙানো থাকবে। পাশাপাশি পুকুরের জলে এবং পুকুরপাড়ে পড়ে থাকা প্লাস্টিক ও নোংরা-আবর্জনা যাতে কেউ না ফেলে তার জন্য ক্লাবের সদস্যরা নজরদারি চালাবেন। এ ছাড়া প্রতি মাসে একবার করে এই ধরনের সাফাই অভিযান চালানো হবে। কারণ, আমরা চালধোয়ানি পুকুরপাড় ও পুকুরের জল পরিষ্কার রেখে স্বচ্ছ এবং নির্মল ভারত গড়ে তোলার দৃষ্টান্ত করতে চাই।”

পুকুরপাড়ে গিয়ে দেখা গেল, দীনবন্ধু ক্লাবের সদস্যরা যেমন পুকুরের জল থেকে থেকে নোংরা তুলছেন, পুকুরের পাড়ে ঝাড়ু মারছেন, তেমনি পুকুরের পাড়ে অবস্থিত বটতলা ক্লাব, ষষ্ঠীতলা ক্লাবের সদস্যরাও ঝাড়ু হাতে নোংরা সাফাই করছেন। মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস দমকল কর্মীদের কাছে দাঁড়িয়ে থেকে প্লাস্টিক পুড়িয়ে ফেলার কাজ দেখছেন। এলাকার বাসিন্দা তথা কলেজ পড়ুয়া শুভঙ্কর লালা, গৌর মণ্ডল, ছোটন মণ্ডল, পুজা মণ্ডল, স্কুলপড়ুয়া অঞ্জন সেন, সঞ্জু সরকাররা ঝাড়ু হাতে তাদের স্কুল কলেজ ছুটির অবসরে পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে নেমে পড়েছেন। এলাকার বসিন্দা তথা সরকারি কর্মী অপূরঞ্জন দাসকে দেখা গেল খালি গায়ে ঝাড়ু হাতে পুকুরপাড় সাফাইয়ের কাজ করতে। বললেন, “পাড়ার ছেলেরা একটা ভাল কাজ করছে দেখে অফিস যাওয়ার আগে নিজে ওদের সঙ্গে সাফাই এর কাজে লেগে পড়লাম।” প্রবীণ বাসিন্দা নবকুমার মণ্ডল, মহামায়া মণ্ডলরা জানানেল, আগে আমরা দেখেছি পুকুরের স্বচ্ছ জল বাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হত। দিনের পর দিন সেই জল খারাপ হতে হতে কিছু দিন আগে এমন হয়ে গিয়েছিল পুকুরের পচা জলে বিষক্রিয়ায় মাছ মরে যাচ্ছিল। গন্ধে এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে যাচ্ছিল। এলাকার বধূ সোমা মাহান্ত, প্রনমিতা নাগ, শবরী ঘোষ বললেন, “স্থায়ী ভাবে পুকুরের জল দূষণ রক্ষা করে আমরা চাই পুকুর পাড় বাঁধিয়ে চারপাশ ঘিরে দিয়ে শিশুদের জন্য একটা পার্ক গড়ে তোলা হোক। সে জন্য আমরা এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে ঝাড়ু হাতে সাফাই কাজে যোগ দিয়েছি।”

Advertisement

বিধায়ক তথা প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “চালধোয়ানি পুকুর ও পাড় সংস্কার করার জন্য এলাকা উন্নয়ন খাতে টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও সাহায্য দেওয়া হবে।” পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি বলেন, “ঘাট বাঁধানো থেকে পুকুর সংস্কার করা হয়েছে। সৌন্দর্যায়নের জন্য ৬৭ লক্ষের বেশি টাকার কাজ শীঘ্রই শুরু হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন