মুগ্ধ দৃষ্টিতে। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন, সম্পূর্ণ তান্ত্রিক মতে নানুর থানার বঙ্গছত্র গ্রামে পূজিত হন দেবী কালী।
বঙ্গছত্র যা চলতি কথায় ব্যাঙচাতরা বলেই জেলায় খ্যাত। কথিত আছে, এই গ্রামে প্রায় তিনশো বছর আগেই চক্রবর্তী পরিবার কালীপুজো করতেন। বঙ্গছত্র সর্বজনীন মহাকালীমাতা পুজা কমিটি সুত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে উলোসোনা নামে এক পুকুর পাড়ে গিরিলাল চক্রবর্তীর কন্যা চন্দ্রমুখী দেবী ওই পুজোর প্রচলন করেন। বোলপুর-পালিতপুর রাস্তার ধারে ওই সুউচ্চ মন্দিরে পুজিত হন দেবী কালী। জানা গিয়েছে, গিরিলাল বাবুর মেয়ে চন্দ্রমুখী দেবীর বিবাহ হয় ন-নগর গ্রামের মুখোপাধ্যায় পরিবারে।
বিবাহের একবছর পর বিধবা হয়ে তিনি বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন। তারপর থেকেই তিনি মাতৃ সাধনায় ব্রতী হন। সিদ্ধি লাভের পর ওখানেই শুরু করেন দেবীর পুজো। গ্রামের বর্তমান প্রজন্ম থেকে জানা গিয়েছে, মন্দিরের পাণ্ডা শশিকান্ত মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর পরিবার এই পুজোর দায়িত্বে ছিলেন। প্রায় তিন দশক আগে শশিকান্তবাবুর ছেলে শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায় বঙ্গছত্র গ্রামবাসীদের হাতে পুজোর দায়িত্ব তুলে দেন। সেই সময় অবশ্য তালাপাতার ছাউনিতে পুজো হত। গ্রামবাসীদের ওপর পুজোর দায়িত্ব এলে, গ্রামের নেতাজী তরুন সেবা সমিতি এবং ভক্তদের উদ্যোগে পাকা মন্দির তৈরি হয়। ওই প্রাচীন প্রথা মেনে প্রতি বছর বঙ্গছত্রের বাসিন্দারা কালী পুজোয় মেতে ওঠেন। সেই প্রথা আজও অমলিন। শুধু ওই গ্রামই নয়, আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামও সামিল হয় ওই পুজোতে। লাগোয়া মফস্বল শহর নানুর ও বোলপুর থেকেও বহু মানুষের সমাগম হয়।
এক দিনের পুজো হলেও, কালী পুজো উপলক্ষে ওই গ্রামে প্রায় চার দিন ধরে চলে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বঙ্গছত্র সর্বজনীন মহাকালীমাতা পুজো কমিটির সম্পাদক অমল মণ্ডল বলেন, “প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলার নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। থাকছে, কবিগান, যাত্রা, বাউল, রবীন্দ্র সঙ্গীত এবং নৃত্যনাট্য- সহ রয়েছে নানা অনুষ্ঠান।”
বহুরূপী শিল্পী সুবল দাস বৈরাগ্য, এই বছর কালী পুজো উপলক্ষে পরিবেশন করবেন তাঁর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভিন্ন বয়সের মানুষদের জন্য রয়েছে নানা সাংস্কৃতিক এবং প্রতিযোগিতা মূলক অনুষ্ঠানও।