শহরের বড় বড় পুজো মণ্ডপ দর্শকদের চোখ টানবেই। তাই উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে প্রস্তুত জেলা পুলিশ-প্রশাসনও। পুরুলিয়া শহরের বড় বড় পুজো মণ্ডপে দর্শকদের ভিড়ে, আড্ডায় মিশে থাকবেন মহিলা পুলিশকর্মীরা। তাঁরা নজর রাখবেন ইভটিজারদের উপর। পাশাপাশি বাড়ি থেকে পুজো দেখতে বেরিয়ে সাধারণ মানুষ কী কী সাবধানতা অবলম্বন করবেন তা নিয়েও একটি প্রচারপত্রও তৈরি করেছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। প্রচারপত্রে জানানো হয়েছে, পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও স্থানীয় থানার নম্বর নিজের কাছে রেখে দেওয়া, বেশিদিনের জন্য বেড়াতে গেলে সেই তথ্য থানায় জানানো, কোনও অপরিচিত ব্যক্তিকে গাড়িতে না তোলা, অচেনা ব্যক্তিকে বাড়িতে না তোলা এবং পুজো দেখার সময় বাচ্চাদের সামলে রাখা-সহ আরও কিছু জানানো হয়েছে দর্শকদের উদ্দেশ্যে। বিভিন্ন পুজো কমিটিকে থানা, দমকল, অ্যাম্বুল্যান্স, ইলেকট্রিসিয়ানের নম্বর লিখে টাঙিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যা হলে ১০০ ডায়াল করা, যানবাহনের স্থানে বা মানুষজন যে রাস্তা বা এলাকা দিয়ে যাতায়াত করেন সেখানে আতসবাজি না ফাটানো ইত্যাদি। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, “মণ্ডপে বা দর্শকদের ভিড়ে মহিলা পুলিশদের সাদা পোশাকে রাখা হচ্ছে। ইভটিজারদের রুখতে আমরা এই ব্যবস্থা নিচ্ছি। তা ছাড়া আমরা পুরুলিয়া শহরের বিশেষ কয়েকটি জায়গায় ‘পুলিশি সহায়তাকেন্দ্র’ নামে একটি কেন্দ্র করছি।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের পোস্টঅফিস মোড়, ডাকবাংলো, নডিহা জিমন্যাস্টিক, অলঙ্গিডাঙা মোড়, জেলিয়া পাড়া, রথতলা, ধবঘাটা, হাটতলা, গাড়িখানা ও দর্জিপাড়ার মধ্যবর্তী স্থানে সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, কোন কোন রাস্তায় নো-এন্ট্রি রয়েছে, কোথায় গাড়ি রাখতে হবে এসবই দর্শকদের রাস্তায় পুলিশ কর্মীরা জানাবেন। পাশাপাশি অপরাধ রুখতে কী কী সতর্কতা নিতে হবে তাও প্রচারপত্রের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। পুজোগাইড ম্যাপও প্রকাশ করা হয়েছে।
পুরুলিয়ার মতো বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনও কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। বাঁকুড়া শহরের লালবাজার, মাচানতলা, কেন্দুয়াডিহি, নতুনচটি, জুনবেদিয়া, নতুনগঞ্জ, স্টেশনমোড়, সতীঘাটে পুলিশ ক্যাম্প হবে। শহরে টহল দেবে পুলিশ ও মহিলা কমান্ডো বাহিনী। বিকেল ৪টে থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শহরের ভিতরে বাস বা লরি (কেরানিবাঁধ থেকে তামলিবাঁধ, কাটজুড়ি ডাঙা থেকে পাঁচবাগা মোড়, পাটপুর পাওয়ার হাউস থেকে কেরানিবাঁধ মোড়) নো-এন্ট্রি। এ ছাড়াও কাটজুড়িডাঙা থেকে সার্কিট হাউস, কেন্দুয়াডিহি পোস্ট অফিস মোড় থেকে কাটজুড়িডাঙা, কেরানিবাঁধ মোড় থেকে লালবাজার মোড়, মাচানতলা মোড় থেকে রানিগঞ্জ মোড়ের মতো যে সমস্ত রাস্তায় পুজো হয় সেগুলিতে সমস্ত রকম যানবাহন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গাড়ি পার্কিং করার জন্যও বঙ্গবিদ্যালয় ময়দান, লালবাজার, সেকেন্ড ফিডার রোড, তামলিবাঁধের মতো জায়গায় বিশেষ ব্যবস্থা করেছে বাঁকুড়া পুলিশ।
পুজো বা বিসর্জনের সময় মাইক বা সাউন্ড বক্স ব্যবহারের উপরেও কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুলিশ প্রশাসন। একাধিক সাউন্ড বক্স বা মাইক ভ্যানে বেঁধে চটুল গানের তালে তালে উদ্দাম নাচের সঙ্গে বিসর্জনের শোভাযাত্রা যাচ্ছে। সেই শোভাযাত্রার সঙ্গে চলেছে শব্দদৈত্য। এমন দৃশ্য বিগত কয়েক বছরে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজনের গাসওয়া হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন স্তরের মানুষের কথায়, “আনন্দ করে বিসর্জন করতে কোথাও বাধা নেই। কিন্তু এত জোরে গান বাজে যে এলাকায় দাঁড়ানো যায় না।” পুরুলিয়া শহরের এক কলেজ ছাত্রীর কথায়, “ডিজে নামে এখন এক ধরনের সাউন্ড বক্স রয়েছে। শোভাযাত্রায় সেই বক্স অত্যন্ত চড়া সুরে বাজাতে বাজতে যায়। রাস্তা দিয়ে শোভাযাত্রা পার হলেও এই শব্দে বাড়িতে থাকা বৃদ্ধ বা অসুস্থ মানুষ এবং শিশুদের খুব সমস্যা হয়।” তাঁদের ক্ষোভ, “শোভাযাত্রায় পুলিশও থাকে। কিন্তু এত চড়া সুরে মাইক বা সাউন্ড বক্স বাজলেও কেউই কিছু প্রতিবাদ করেন না।” পুলিশ জানিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে প্রত্যেক পুজোর উদ্যোক্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, জোরে মাইক বা সাউন্ড বক্স বাজানো আইনত অপরাধ। মাইক্রোফোন বা সাউন্ড বক্স ব্যবহারের বিধিও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বেলা ৩টে থেকে রাত ১০টা। নির্ধারিত শব্দমাত্রা ৬৫ ডেসিবেল। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, “এ বার শব্দমাত্রার বিধি না মানলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। সাউন্ড টেকনিশিয়ানদেরও এ বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিসর্জনের সময়ও পুলিশ শব্দমাত্রার বিষয়টি নজরে রাখবে।” তিনি জানিয়েছেন, এ বারে বিসর্জনের দিন ঠিক হয়েছে ৩ ও ৪ অক্টোবর। ৫ ও ৬ অক্টোবর রাত ৮টা পর্যন্ত বিসর্জনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ঈদের জন্য। এ দিকে, বাঁকুড়া পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার এবং ডিএসপি (আইন ও শৃঙ্খলা) বাপ্পাদিত্য ঘোষ বলেন, “মাইক ও সাউন্ড বক্স ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে আমরা প্রত্যেক পুজো কমিটিকে কড়া বার্তা দিয়েছি। রাতে কোনও মতেই বক্স বাজানো চলবে না। নিষিদ্ধ শব্দবাজি ব্যবহার করা হলে কড়া বব্যস্থা নেওয়া হবে।”