পাত পেড়ে খিচুড়ি খেলেন রাম-রহিমেরা

মঞ্চ একটাই। কোরান পাঠের রেশ থামতে না থামতেই ধ্বনিত হল গীতার স্তোত্র। তার সঙ্গেই যেন মিলে গেল বাইবেলের প্রার্থনা সঙ্গীত। উপস্থিত মানুষজনের হৃদয়ে ছুঁয়ে গেল একাত্মতার সুর। বৃহস্পতিবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুর বেঁধে দিল ওই মঞ্চই। সাক্ষী থাকল লাভপুরের কূঁয়ে নদীর মনিকর্ণিকার ঘাট। শুধু এ বারই নয়, টানা ৬৮ বছর এই অনুষ্ঠান হয়ে আসছে প্রত্যন্ত এলাকার এই নদী ঘাটে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

লাভপুর শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২১
Share:

লাভপুরে বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

মঞ্চ একটাই। কোরান পাঠের রেশ থামতে না থামতেই ধ্বনিত হল গীতার স্তোত্র। তার সঙ্গেই যেন মিলে গেল বাইবেলের প্রার্থনা সঙ্গীত। উপস্থিত মানুষজনের হৃদয়ে ছুঁয়ে গেল একাত্মতার সুর।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুর বেঁধে দিল ওই মঞ্চই। সাক্ষী থাকল লাভপুরের কূঁয়ে নদীর মনিকর্ণিকার ঘাট। শুধু এ বারই নয়, টানা ৬৮ বছর এই অনুষ্ঠান হয়ে আসছে প্রত্যন্ত এলাকার এই নদী ঘাটে।

১৯৪৮ সালের এই দিনটিতে লাভপুরের মিরিটি গ্রাম লাগোয়া কুঁয়ে নদীর মনিকর্ণিকার ঘাটে মহাত্মা গাঁধীর চিতাভষ্ম এনে বিসর্জন দিয়েছিলেন প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাবা কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায়। গোটা এলাকা সে দিন ভেঙে পড়েছিল। কোরান, গীতা ও বাইবেল পাঠ করা হয়েছিল এখানে। হয়েছিল পঙ্ক্তিভোজও। তারপর থেকে বন্ধ হয়নি। এখন তা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনুষ্ঠানের চেহারা নিয়েছে। বিভিন্ন বছরে ওই অনুষ্ঠানে স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে থেকেছেন কংগ্রেসের তাবড় তাবড় নেতা। এমনকী কেন্দ্রীয় সরকারের বহু জনপ্রতিনিধিকেও দেখা গিয়েছে। কখনও কখনও গাঁধীজির প্রয়াণদিবস ৩০ জানুয়ারিও ওই অনুষ্ঠান হয়েছে।

Advertisement

সে দিনের সেই উদ্যোক্তারা আজ আর অধিকাংশই জীবিত নেই। কিন্তু থেমে যায়নি জাতির জনকের স্মরণ অনুষ্ঠান। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। এ দিন সকাল থেকেই নদীর ঘাটে দেখা গেল সাজো সাজো রব। একই মঞ্চে পরপর কোরান, গীতা ও বাইবেল পাঠ করলেন যথাক্রমে সেখ মহীউদ্দিন, নোটন চট্টোপাধ্যায় এবং তরুণ ঘোষ। তাঁদের কথায়, “ধর্মের অর্ন্তনিহিত অর্থই হল পরস্পরকে ধরে রাখা। গাঁধীজি সেই স্বপ্নই দেখেছিলেন। আমরা একত্রে নানা ধর্মগ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে সেই স্বপ্ন পূরণের আহ্বান জানিয়েছি।”

শুধু ধর্মগ্রন্থ পাঠই নয়। পঙ্ক্তিভোজেও দেখা গেল সম্প্রীতির ছবি। পাশাপাশি বসে পাত পেড়ে খেতে খেতে নিজেদের মধ্যে গল্প করছিলেন জনাই সেখ, জুহুর আলি, সীতারাম দাস, ইরাবতী বৈরাগ্যরা। খিঁচুড়ি, বাঁধাকপির তরকারি আর টক তাই খেয়েই পরিতৃপ্ত মুখ ওঁদের। গোপাল সেখ, শিবানী মণ্ডলরা বলেন, “এখানে এলে, একসঙ্গে বসে খেলে কেমন যেন একান্নবর্তী পরিবারের মতো লাগে। তাই প্রতিবারই আমরা সপরিবারে এখানে না এসে থাকতে পারি না।”

এ বারের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, কংগ্রেস নেত্রী মায়া ঘোষ, রাষ্ট্রপতি পুত্র সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। পরে অভিজিৎবাবু বলেন, “গাঁধীজির ভাবধারা প্রসারের উদ্দেশে দাদু এই অনুষ্ঠানের সুচনা করেছিলেন। আজকের দিনে এর প্রাসঙ্গিকতা মানুষ মাত্রেই অনুভব করছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন