পাথরকুচিতে আনন্দ এনেছে সপ্তদুর্গা

গ্রাম নয়, গোটা পাড়া অথবা মহল্লাও নয়। এক চিলতে গলির পথেই পাশাপাশি পূজিত হন সাতটি দূর্গা প্রতিমা। মহালয়ার আগে থেকেই গলির সেই মন্দিরে মন্দিরে থাকা একচালি দুর্গা প্রতিমা গুলিতে রঙের কাজ প্রায় শেষ। কোন ঠাকুর কেমন হয়েছে, কখন সাজানো হবে প্রতিমা, এই নিয়ে কৌতূহল আর উৎসাহের শেষ নেই বসতির। রোজের ছন্দ এখন গা ভাসিয়েছে সপ্তদুর্গার আনন্দে। এ দৃশ্য খয়রাশোলের পাথরকুচি গ্রামের একটি পাড়ার।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

খয়রাশোল শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:২৪
Share:

মা এসেছে। কচিকাঁচাদের ভিড় গ্রামের স্থায়ী মণ্ডপে। খয়রাশোলের পাথরকুচি গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

গ্রাম নয়, গোটা পাড়া অথবা মহল্লাও নয়। এক চিলতে গলির পথেই পাশাপাশি পূজিত হন সাতটি দূর্গা প্রতিমা।

Advertisement

মহালয়ার আগে থেকেই গলির সেই মন্দিরে মন্দিরে থাকা একচালি দুর্গা প্রতিমা গুলিতে রঙের কাজ প্রায় শেষ। কোন ঠাকুর কেমন হয়েছে, কখন সাজানো হবে প্রতিমা, এই নিয়ে কৌতূহল আর উৎসাহের শেষ নেই বসতির। রোজের ছন্দ এখন গা ভাসিয়েছে সপ্তদুর্গার আনন্দে। এ দৃশ্য খয়রাশোলের পাথরকুচি গ্রামের একটি পাড়ার।

সাতটি পুজোকে ঘিরে, পাথকুচির যে বাসিন্দাদের ঘরে ঘরে উৎসব, তাঁদের অধিকাংশই কর্মকার সম্প্রদায়ের। যাদের মূল পেশা কাঁসা পিতলের কারবার। পাথরকুচি গ্রামের সেই কর্মকার পাড়ায় ১০০ মিটারের একটি অপ্রশস্ত গলির মধ্যেই শতাব্দী প্রাচীন এতগুলি দুর্গা মন্দির থাকাটা শুধু ওই পাড়া বা গ্রামেই নয়, জেলার নিরিখেও বিরল ঘটনা।

Advertisement

যাঁদের মন্দির সেই মেহেতরি, কবিরাজ ও মণ্ডল পরিবারের বর্ষিয়ান সদস্য অশোক মেহেতরি, অমূল্য কবিরাজ এবং লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডলেরা বলছেন, ‘‘বংশ পরম্পরায় যে ইতিহাস আমরা শুনেছি তাতে বহুকাল আগে দুটি দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল। কিন্তু আত্মীয় স্বজন বা ভাগিদের মধ্যে কোনও বিষয় নিয়ে কখনও কোনও সমস্যার জেরেই দুর্গাপুজো ও মন্দিরের সংখ্যা সাতে দাঁড়িয়েছে। তবে, ঠিক কী নিয়ে মতের অমিল বা কতদিন আগে থেকে সাতটি দুর্গাপুজোর প্রচলন তা জানা নেই!’’

বসতির সকলের পদবি এক না হলেও পাথরকুচি গ্রামের ওই পাড়ায় তাঁরা সকলেই পরিচিত কর্মকার হিসাবে। এবং কাঁসা পিতলের বিভিন্ন সাইজের থালা তৈরিই যাঁদের পেশা। পেশাগতভাবে খুব একটা স্বচ্ছল অবস্থা না থাকলেও পুজো নিয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল সকলেই। পাথরকুচির ওই পড়ায় প্রথমেই রয়েছে মেহেতরিদের দুর্গা মন্দির। তারপরই পর পর চার চারটি দুর্গা মন্দির কর্মকার পদবি যুক্ত পরিবারের। শেষ দুটি দুর্গা মন্দির মণ্ডলদের। প্রত্যেকটি দুর্গাপুজোর দায়িত্ব রয়েছে সেই পরিবারের বাকি শরিরদের উপরও।

দুর্গাপুজোর মত এতবড় পুজো করার জন্য তাই সকলেই বছরভর প্রস্তুতি নিয়ে টাকা জমান, যাতে পুজোয় কোনও খামতি না থাকে। জানালেন লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল ও অমূল্য কবিরাজেরা। সকলেই বলছেন, ‘‘পরিবার বা পাড়ার সকলে তো আনন্দ মাতেনই। আনন্দে মাতে খয়রাশোলের পাথরকুচি, পাঁচড়া-সহ আশপাশের গ্রামও। সপ্তমীর সকালে সাতটি দোলা নিয়ে শোভাযাত্রা সহযোগে পাশের হিংলো নবপত্রিকাকে স্নান করানোই হক বা অষ্টমীতে কুমারী পুজো বা নবমীর দিন জমিয়ে খাওয়া দাওয়া বা দশমীর দোলা বিসর্জন কেমন ঘোরের মধ্যে কেট যায়।

স্থানীয় বধূ অপর্ণা কবিরাজ বলেন, ‘‘১৮ বছর আগে বাঁকুড়ার একটি গ্রাম থেকে বিয়ে হয়ে এই গ্রামে এসেছি। বাপের বাড়িতে দুর্গাপুজো হত না। একসঙ্গে এতগুলি দুর্গাপুজো দেখে মন ভরে গিয়েছিল। বধূ কল্পনা মণ্ডল, উর্মিলা মণ্ডলেরা বলছেন, তাঁদের পুজোর কারণেই কোনও বৌ পুজোর সময় বাপের বাড়ি যান না। মেয়েরাই সকলে পুজোয় আসে।

পুজো উপলক্ষে খুশি ছোটরাও। স্বপ্না কবিরাজ, পিঙ্কি মণ্ডল, সুদীপ কবিরাজ, টুকন মণ্ডলরেরা বলছে, ‘‘যেদিন থেকে মন্দিরে মন্দিরে ঠাকুর গড়া শুরু হয় আনন্দ শুরু তখন থেকেই।’’

এখন শুধু অপেক্ষা। পিতলের বাসন বানানোর ধাতব শব্দ বদলে গিয়ে ঢাকের আওয়াজে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন