পানায় ঢাকা জলাধার, বেড়াবে কোথায়

বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে জলরাশি। পাশেই সামাজিক বনসৃজন প্রকল্পে তৈরি হওয়া বনাঞ্চল। শীতের সময়ে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা লেগে থাকে। এক কথায় পর্যটনের আদর্শ পরিবেশ। কিন্তু সম্ভাবনা থাকলেও রেল কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী না হওয়ায় আদ্রার সাহেববাঁধ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে আজও গড়ে উঠল না। এমনই অভিযোগ শোনা যায় রেল শহর আদ্রার আনাচে কানাচে। শুধু সাহেববাঁধই নয়, আদ্রার খোসলা জলাধারকে ঘিরে শিশু উদ্যান তৈরি হওয়ার পরেও সেই উদ্যান রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাতেই খণ্ডহরে পরিণত হয়েছে বলে আক্ষেপ আদ্রার।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

আদ্রা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৪৮
Share:

খোসলা জলাধারের শিশু উদ্যানে খেলার সরঞ্জাম নেই। জলের পাইপ নিয়েই খেলায় মেতেছে কচিকাঁচারা।

বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে জলরাশি। পাশেই সামাজিক বনসৃজন প্রকল্পে তৈরি হওয়া বনাঞ্চল। শীতের সময়ে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা লেগে থাকে। এক কথায় পর্যটনের আদর্শ পরিবেশ। কিন্তু সম্ভাবনা থাকলেও রেল কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী না হওয়ায় আদ্রার সাহেববাঁধ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে আজও গড়ে উঠল না। এমনই অভিযোগ শোনা যায় রেল শহর আদ্রার আনাচে কানাচে। শুধু সাহেববাঁধই নয়, আদ্রার খোসলা জলাধারকে ঘিরে শিশু উদ্যান তৈরি হওয়ার পরেও সেই উদ্যান রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাতেই খণ্ডহরে পরিণত হয়েছে বলে আক্ষেপ আদ্রার।

Advertisement

ব্রিটিশ আমলে রেল শহর আদ্রার গোড়াপত্তন। রেলশহরে রেলকর্মী তো বটেই আশপাশের গ্রামাঞ্চলেও জন সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব রেলের গুরুত্বপূর্ণ ডিভিশন আদ্রায় এখনও অবধি পর্যটন কেন্দ্র বা শিশু উদ্যান গড়ে ওঠেনি। এতে ক্ষুদ্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। অথচ সে সম্ভাবনা কম নেই। বিশেষ করে আদ্রার উপকন্ঠে কালিকেন্দ গ্রামের পাশে সাহেববাঁধকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র তৈরির সম্ভাবনাকে নষ্ট করছে রেল।

এনডিএ সরকারে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু সাহেববাঁধকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ার কথা ঘোষণাও করেছিলেন। রেল সূত্রেই জানা গিয়েছে, পরিকল্পনা ছিল সাহেববাঁধকে ঘিরে রেলের জমিতেই পর্যটন কেন্দ্র গড়া হবে। সাহেববাঁধে থাকবে নৌকা বিহারের ব্যবস্থা। কটেজ তৈরির কথাও ছিল। আদ্রায় রেলের যোগাযোগ ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত হওয়ায় এখানে পর্যটকদের আসাযাওয়ারও অসুবিধা ছিল না। আদ্রায় কটেজে থেকে পাশের জয়চণ্ডী পাহাড় ও কাশীপুরের পঞ্চকোট রাজবংশের রাজপ্রাসাদও দেখতে যাওয়ার সুযোগ ছিল পর্যটকদের। কিন্তু পুরো বিষয়টি রয়ে গিয়েছে নিছক পরিকল্পনার স্তরেই। দুধের সাধ ঘোলে মেটাতে ২০০০ সালে সাহেববাঁধের পাশে রেল কর্তৃপক্ষ তৈরি করে মিলেনিয়াম পার্ক বা স্বর্ণজয়ন্তী উদ্যান। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই উদ্যানও আজ বেহাল।

Advertisement

তাই আদ্রাবাসীর আক্ষেপ আর কাটছে না। বহু পুরনো রেল শহর হলেও কোথাও বেড়ানো বা বিনোদনের জায়গার বড় অভাব এখানে। আক্ষেপ আরও বেড়েছে খোসলা জলাধারকে ঘিরে তৈরি হওয়া শিশু উদ্যানের বেহাল দশায়। সাহেববাঁধের জল পরিশোধন করে রেল কলোনিতে পাঠানো হয়। তাই আদ্রা স্টেশনে এবং ট্রেনের কামরা সাফাইয়ের জন্য জলের জোগানের ব্যবস্থা করতে আশির দশকে আদ্রায় রেলের অফিসার্স কলোনির পাশে রেল কর্তৃপক্ষ একটি জলাধার তৈরি করে। উদ্বোধন করেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের তৎকালীন জেনারেল ম্যানেজার সিএম খোসলা। তাঁরই নাম অনুসারে এই জলাধার খোসলা ড্যাম বলে পরিচিত। জলাধারের সঙ্গেই পাশের জমিতে রেল একটি শিশু উদ্যান তৈরি করেছিল। ছুটির দিন সপরিবারে বেড়ানোর জন্য আদর্শ পার্ক হিসাবে গড়া হয়েছিল উদ্যানটি। কিন্তু বর্তমানে সেই উদ্যানের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। জলাধারটিও কচুরিপানায় ভরে গিয়েছে। পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আদ্রায় পর্যটন কেন্দ্র আর গড়ে উঠেনি।

মিলেনিয়াম পার্কে টয়ট্রেন কখন চলে কেউ জানে না।

এলাকার দুই যুবক অভিষেক দুবে ও শৌভিক তিওয়ারি বলেন, “এত পুরনো শহর অথচ কোথাও বেড়ানোর জায়গাটুকু এখানে নেই। বাইরে থেকে বন্ধু বা আত্মীয়রা এলে তাঁদের আদ্রার কোথাও ঘুরিয়ে নিয়ে আসার জায়গা নেই। অথচ সাহেববাঁধ বা খোসলা ড্যামকে ঘিরে অনায়াসেই পর্যটন কেন্দ্র করতে পারত রেল কর্তৃপক্ষ।”

শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই নয়, একই অভিযোগ রেলকর্মীদেরও। মেনস ইউনিয়নের নেতা গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “রেলের অন্য ডিভিশন যেমন খড়গপুর, আসানসোলে কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব উদ্যোগে বিভিন্ন পার্ক গড়ে তুলেছে। সেখানে রেলকর্মীদের পরিবার তো বটেই স্থানীয় বাসিন্দারাও শান্তিতে ঘুরতে পারেন। ব্যতিক্রম শুধু আদ্রা। অথচ এলাকার উন্নয়নের নামে প্রতি বছরই প্রচুর অর্থ খরচ করে রেল।” গৌতমবাবুদের অভিযোগ, আদ্রার রেল কর্তৃপক্ষ কোনওদিনই সে ভাবে এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র, পার্ক, পিকনিকের জায়গা তৈরি করতে উদ্যোগী হয়নি। তাই চাহিদা থাকলেও বিনোদনের ন্যূনতম পরিকাঠামো এই শহরে নেই। মেনস কংগ্রেস নেতা রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “এলাকা উন্নয়নের টাকা পরিকল্পনামাফিক খরচ করলে আদ্রাবাসীর এই আক্ষেপটা সহজেই দূর করতে পারত রেল। আসলে খামতিটা রয়ে গেছে পরিকল্পনার স্তরেই।” দু’টি সংগঠনেরই দাবি, তারা বিভিন্ন সময়ে রেলকর্তৃপক্ষকে সাহেববাঁধ ও খোসলা ড্যামের উন্নয়নের দাবি জানিয়েছে। তাতে অবশ্য লাভ হয়নি।

তবে রেলের পাল্টা দাবি, সাহেববাঁধে পরিকল্পনামাফিক মিলেনিয়াম পার্ক তৈরি করা হয়েছে। সেখানে টয়ট্রেন রয়েছে। নৌকা বিহারের ব্যবস্থা ও শিশুদের খেলার জায়গাও রয়েছে। কিন্তু ভুক্তভোগীদের কথায় টয়ট্রেন কখন চলে তা কেউ জানে না। নৌকা বিহারের নৌকাগুলিও চলতে দেখা যায় না। পাড়ের কাদার মধ্যে পড়ে রয়েছে। অথচ পার্কে ঢুকতে ১০ টাকা টিকিটের ব্যবস্থা করেছে রেল। ঘটনা হল রেল কর্তৃপক্ষ সাহেববাঁধ ও খোলসা ড্যামের উদ্যান পুর্নগঠনে কতটা আগ্রহী পরিষ্কার হয়ে যায় আদ্রার ডিআরএম অরবিন্দ মিত্তলের কথাতেই। তিনি বলেন, “খোসলা ড্যামে শিশু উদ্যান তৈরি হয়েছিল বলে জানা নেই। আর মিলেনিয়াম পার্কে কেউ বেড়াতে আসেন না বলে টিকিট বিক্রি হয় না। তাই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ বন্ধ।”

—নিজস্ব চিত্র।

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর পুরুলিয়া-বাঁকুড়া।
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, পুরুলিয়া-বাঁকুড়া বিভাগ, জেলা দফতর
আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement