ধর্ষণে ধৃত সিভিক পুলিশ

প্রেমিকের ভরসায় শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে মোহভঙ্গ

যার মুখ চেয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়েছিল, আজ সেই প্রেমিকই বিশ্বাসভঙ্গ করেছে জানিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনল এক নাবালিকা! মাঝখান থেকে ঘটনার ফেরে বাপের বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ি হারিয়ে এখন মেয়েটির ঠাঁই হয়েছে হোমে। প্রেমের কথা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় নাবালিকা অবস্থাতেই অন্য পাত্রের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দিয়েছিলেন বাবা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৪ ০১:৫৫
Share:

যার মুখ চেয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়েছিল, আজ সেই প্রেমিকই বিশ্বাসভঙ্গ করেছে জানিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনল এক নাবালিকা! মাঝখান থেকে ঘটনার ফেরে বাপের বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ি হারিয়ে এখন মেয়েটির ঠাঁই হয়েছে হোমে।

Advertisement

প্রেমের কথা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় নাবালিকা অবস্থাতেই অন্য পাত্রের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দিয়েছিলেন বাবা। বিয়ের অল্পদিনের মধ্যেই অবশ্য শ্বশুরবাড়ি থেকেই প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যায় সেই নাবালিকা। ১৮ বছরে পা দিতে মেয়েটির আর বেশিদিন নেই। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সঙ্গে সহবাস করার পরে এখন সেই প্রেমিকই তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করছে বলে মেয়েটির অভিযোগ। বাঁকুড়া শিশুকল্যাণ সমিতির মাধ্যমে বাঁকুড়া সদর থানায় পেশায় সিভিক পুলিশকর্মী প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছে ওই নাবালিকা। তার ভিত্তিতে সোমবার রাতে বাঁকুড়ার বাদুলাড়া গ্রামের বাসিন্দা, অভিযুক্ত শেখ বাহার আলিকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেন বাঁকুড়া মহিলা থানার ওসি রমারানি হাজরা। মঙ্গলবার ধৃতকে বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। এ দিন বিচারকের সামনে গোপন জবানবন্দি দিয়েছে অভিযোগকারিণী। তার ডাক্তারি পরীক্ষাও করানো হয়েছে বাঁকুড়া মেডিক্যালে। আজ, বুধবার ধৃত যুবকের ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, গত মার্চ মাসে ওই নাবালিকাকে তার মতের বিরুদ্ধেই পাশের গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেয় পরিবার। পরের মাসেই শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যায় সে। কিছুদিন বাঁকুড়া শহরের একটি লজে থাকার পরে দু’জনে পুলিশের দ্বারস্থ হয়। পুলিশ মেয়েটিকে তার বাপের বাড়ি পাঠালে বাড়ির লোক তাকে নিতে অস্বীকার করে। এই পরিস্থিতিতে প্রথমে বিষ্ণুপুরের একটি হোমে রাখা হয় ওই নাবালিকাকে। পরে সেখান থেকে মেয়েটিকে সরিয়ে বাঁকুড়ার কেঠারডাঙার একটি হোমে নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার তাকে পুরুলিয়ার একটি হোমে পাঠানো হয়েছে। সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত মেয়েটি আপাতত ওই হোমেই থাকবে। কিন্তু, তার পরে তার ঠিকানা কোথায় হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

শেষ মুহূর্তে প্রেমিক তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করায় রীতিমতো ভেঙে পড়েছে ওই নাবালিকা। তার কথায়, “প্রেমিকের জন্যই আমি বাড়ির মতের বিরুদ্ধে গিয়েছিলাম। ওর কথাতেই শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিলাম। প্রাপ্তবয়স্ক হলে ও আমাকে বিয়ে করবে কথা দিয়েছিল। লজে থাকার সময় আমাকে বিয়ে করবে বলে একাধিকবার সহবাস করেছে। কিন্তু, সময় আসতেই বিয়ে করায় ও বেঁকে বসল।” মেয়েটির আক্ষেপ, “বাপের বাড়িতে আমার আর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। স্বামীও আমাকে ‘তালাক’ দিয়েছেন। আমি সব হারালাম। এ বার কোথায় যাব, কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না।”

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত যুবক বাঁকুড়া সদর থানায় সিভিক পুলিশের কাজ করেন। ওই নাবালিকাকে বিয়ে করার ব্যাপারে ধৃতের পরিবারের তরফ থেকে আপত্তি এসেছে। তাই বাড়ির মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই বিয়ে থেকে পিছিয়ে এসেছে বাহার আলি। এ দিন ধৃতের বাবার সঙ্গে বারবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি।

বাঁকুড়া শিশুকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান শেখ মুরসালিন বলেন, “প্রেমিকের প্রলোভনে পা বাড়িয়েই এমন পরিস্থিতিতে পড়ল মেয়েটি। আর ছেলেটি প্রেমিকার অনভিজ্ঞতার সুযোগ নিল।” তবে নাবালিকা অবস্থায় মেয়েটির বিয়ে বা তালাক, কোনওটিই বৈধ নয় জানিয়ে তিনি বলেন, “যে ছেলেটির সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে মেয়েটিকে সে ফিরিয়ে নেয় কি না, তা নিয়ে আলোচনা করব।” মেয়েটি ভবিষ্যতে কোথায় থাকবে, তা দেখার আশ্বাসও দিয়েছেন শেখ মুরসালিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন