পুরুলিয়ায় পার্টি অফিসের দখল নিল কংগ্রেস

একটি পার্টি অফিস নিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূলের দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে পুরুলিয়া ১ ব্লকের মানাড়া এলাকায়। মূলত পার্টি অফিসটি প্রকৃতপক্ষে কাদের দখলে, তা নিয়েই দ্বন্দ্ব। এ নিয়ে শুরু হয়েছে দু’তরফের চাপানউতোর। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মানাড়ায় পুরুলিয়া-মানবাজার রাস্তার ধারে চিতোড়া মোড়ে যে বাড়িটির দখল ঘিরে বিতর্ক, সেটি কংগ্রেসের আঞ্চলিক কার্যালয় হিসেবেই পরিচিত ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১
Share:

পুলিশের উপস্থিতিতে মুছে ফেলা হচ্ছে তৃণমূলের দেওয়াল লেখা।—নিজস্ব চিত্র

একটি পার্টি অফিস নিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূলের দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে পুরুলিয়া ১ ব্লকের মানাড়া এলাকায়। মূলত পার্টি অফিসটি প্রকৃতপক্ষে কাদের দখলে, তা নিয়েই দ্বন্দ্ব। এ নিয়ে শুরু হয়েছে দু’তরফের চাপানউতোর।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মানাড়ায় পুরুলিয়া-মানবাজার রাস্তার ধারে চিতোড়া মোড়ে যে বাড়িটির দখল ঘিরে বিতর্ক, সেটি কংগ্রেসের আঞ্চলিক কার্যালয় হিসেবেই পরিচিত ছিল। কংগ্রেসের অভিযোগ, তাদের পার্টি অফিসটি গত সোমবার দখল করে নেয় তৃণমূল। বুধবার পুলিশের উপস্থিতিতে কংগ্রেস ফের সেই কার্যালয়ের দখল নিয়েছে।

মানাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতটি দীর্ঘদিন বামফ্রন্টের দখলে ছিল। ওই পঞ্চায়েতের দখল পেতে গত বছর পঞ্চায়েত নিবার্চনে পুরুলিয়ার ১৭০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে শুধু এই মানাড়াতেই কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে জোট হয়। এবং দীর্ঘদিন পরে ওই পঞ্চায়েতের দখলও পায় জোট। পঞ্চায়েতের মোট ১০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ও তৃণমূল ৩টি করে আসন জেতে। জেলার অন্য কোথাও কিন্তু এমন জোট হয়নি। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল স্রেফ মানাড়া। যদিও পঞ্চায়েতের ফল বেরনোর কয়েক মাস পরেই কংগ্রেসের নিবার্চিত সদস্যেরা তৃণমূলে চলে যান। স্বভাবতই এর ফলে এলাকায় শক্তি বাড়ায় তৃণমূল।

Advertisement

পুরুলিয়া ১ ব্লকের কংগ্রেস সভাপতি বীরেন মুখোপাধ্যায় বলেন, “মানাড়ায় আমাদের নির্বাচিত সদস্যেরা তৃণমূলে গিয়েছেন, এটা সত্যি। কিন্তু, মানাড়ার ওই পার্টি অফিস আমাদের দলের। ওই এলাকারই বাসিন্দা দিবাকার মাহাতো ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৪ ডেসিমেল জমি আমাদের দলকে দান করেছিলেন। সেই দানপত্র আমাদের কাছে রয়েছে। তার পরে আমরা এই জমিতে কার্যালয় তৈরি করেছি। ওখান থেকে যে আমাদের রাজনৈতিক কাজকর্ম পরিচালিত হয়, তা এলাকার সকলেই জানেন।” বীরেনবাবুর অভিযোগ, সোমবার তৃণমূলের কিছু লোক ওই পার্টি অফিস থেকে কংগ্রেসের পতাকা সরিয়ে তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে দেয়। দেওয়ালে মা-মাটি-মানুষ লিখে অফিসটির দখল নিয়ে নেয়। কংগ্রেস পুলিশকে গোটা বিষয়টি জানানো হয়।

বুধবার ফের ওই পার্টি অফিসের দখল নেয় কংগ্রেস। কংগ্রেসের এই কর্মসূচির কথা জানা থাকায় এ দিন এলাকায় যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত ছিল। কিন্তু, তৃণমূলের তরফে কোনও বাধা না আসায় কংগ্রেস কর্মীরা ওই কার্যালয়ের বাইরের দেওয়ালে তৃণমূলের প্রতীক মুছে ফের ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কংগ্রেসের নাম লেখে। নিজেদের দলের পতাকাও লাগানো হয়। তখন সেখানে হাজির জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো এবং দলের জেলা কমিটির আরও কয়েক জন সদস্য। অফিসটির সামনে ত্রিপল খাটিয়ে ছোট সভাও করে কংগ্রেস।

তৃণমূলের মানাড়া অঞ্চলের প্রাক্তন সভাপতি (এখনও সব কমিটি ভাঙা রয়েছে) অনিলচন্দ্র মাহাতো বলেন, “আমিও শুনেছি ওই কাযার্লয়টিতে আমাদের দলের পতাকা ইত্যাদি লাগানো হয়েছিল। তবে, কে বা কারা তা লাগিয়েছিল, বলতে পারব না। কেন না, এ নিয়ে আমাদের দলে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।” একই দাবি স্থানীয় তৃণমূল নেতা ধনঞ্জয় মাহাতোর। তবে, শাসকদলেরই জেলা নেতা তরণী মাহাতোর বক্তব্য, “আমরা দিবাকর মাহাতো নামে এক ব্যক্তির কাছে ঘরটি ভাড়া নিয়ে তৃণমূলের কার্যালয় খোলা হয়েছিল।”

দিবাকরবাবুও জানিয়েছেন, রাস্তার ধারে সিদপুর মৌজায় আমার ৫৩ ডেসিমেল জমি রয়েছে। তার মধ্যে তিনি কংগ্রেসকে ৪ ডেসিমেল দান করেছেন। কিন্তু, সেই জমি এখনও ফাঁকা পড়ে রয়েছে। তাঁর আরও দাবি, “যে অফিস নিয়ে কথা হচ্ছে, সেই বাড়িটি আমি বানিয়েছিলাম। আমি নিজেও কংগ্রেস করতাম। তাই কংগ্রেসকে ভাড়ায় দিয়েছিলাম। কিন্তু, দীর্ঘদিন ভাড়া না পাওয়ায় এখন তৃণমূলকে দিয়েছি।” জমিদাতার এই বক্তব্য অস্বীকার করে কংগ্রেস নেতা বীরেনবাবু বলেন, “উনি যে আমাদের দলকে জমি দান করেছেন, তার রেকর্ড রয়েছে। সেই দানপত্রও আমাদের কাছে আছে। তার পরে আমাদের দলের পক্ষ থেকে ওই জমিতে কার্যালয় গড়া হয়েছে। নেপাল মাহাতো তার দ্বারোদ্ঘাটনও করেছেন। এখন উনি কেন অস্বীকার করছেন, জানি না।”

পুলিশ জানিয়েছে, যেহেতু বিষয়টি বিতর্কিত হওয়ায় ওই জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আদালত মীমাংসা করবে। নেপালবাবু অবশ্য বলেন, “ওখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বলে কোনও খবর আমাদের কাছে নেই। পুলিশ আমাদের এই মর্মে কিছু জানায়নি। আমরা আমাদের কার্যালয়ে কাজ শুরু করেছি। পুলিশ যদি কারও পক্ষ নিয়ে কাজ করতে যায়, আমরাও আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।” জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো জানিয়েছেন, মানাড়ার ঘটনা নিয়ে তাঁর কাছে বিশদ খবর নেই। তবে, যে কার্যালয় যে চাপানউতোর, সেটির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন