প্রথমে অপসারণ, ভাঙন রুখতে পরে সম্মান প্রদীপকে

অনুগামীদের নিয়ে সভা করে দলের জেলা নেতৃত্বকে সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন রঘুনাথপুর ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কৃত প্রদীপ মাজি। প্রকাশ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাঁকে ব্লক সভাপতির পদে পুনর্বহাল না করা হলে তৃণমূলে তাঁরা থাকবেন কি না, তা নিয়েই ভাববেন! সেই সময়সীমা পেরনোর দু’দিনের মাথায় ওই নেতাকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে এলেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩২
Share:

অনুগামীদের নিয়ে সভা করে দলের জেলা নেতৃত্বকে সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন রঘুনাথপুর ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কৃত প্রদীপ মাজি। প্রকাশ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাঁকে ব্লক সভাপতির পদে পুনর্বহাল না করা হলে তৃণমূলে তাঁরা থাকবেন কি না, তা নিয়েই ভাববেন! সেই সময়সীমা পেরনোর দু’দিনের মাথায় ওই নেতাকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে এলেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। মঙ্গলবার শান্তিরামবাবু বলেন, “প্রদীপবাবুকে জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।” দল সূত্রের ইঙ্গিত, জেলা কমিটি গঠন হলে তাঁকে অন্যতম সম্পাদক করা হবে।

Advertisement

রঘুনাথপুর ১ ব্লকে দলেরই পরিচালিত বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত, এমনকী পঞ্চায়েত সমিতিতেও অনাস্থা এনেছিলেন তৃণমূলেরই একাংশ। দলের মধ্যেই অভিযোগ উঠেছিল, দলীয় শৃঙ্খলা ও নির্দেশ অমান্য করে পরের পর অনাস্থা আনার পিছনে ইন্ধন জোগাচ্ছেন প্রদীপবাবু ও তাঁর অনুগামীরা। সেই সময়ে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনা যাবে না বলে দলের তরফে কড়া নির্দেশ জারি করা হলেও এই ব্লকে অনাস্থায় ছেদ পড়েনি। বরং ব্লক কমিটির (যার মাথায় তখনও প্রদীপবাবু) ‘নির্দেশ’ অমান্য করে জেলা পরিষদের সভাধিপতির উপস্থিতিতে সরকারি অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার ‘অপরাধে’ রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রদীপ-অনুগামী সদস্যেরা অনাস্থা আনেন সমিতির সহসভাপতি এবং এক কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠায় শেষ পর্যন্ত অবশ্য প্রদীপবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তাকে ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরানোর পাশাপাশি রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরিকে ওই ব্লকে সংগঠনের দায়িত্ব দেন জেলা সভাপতি।

কিন্তু পদচ্যুত হয়ে দলের বিরুদ্ধেই কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করে প্রদীপ-শিবির। অনুগামীদের নিয়ে একাধিকবার সভা করে দল ছাড়ার হুমকি দেন ওই তৃণমূল নেতা। ঘটনা হল, সেই চাপের কাছ কার্যত শেষ পর্যন্ত হার মানতেই হল জেলা নেতৃত্বকে। তৃণমূল সূত্রের খবর, মঙ্গলবার প্রদীপবাবুকে পুরুলিয়া শহরে ডেকে পাঠিয়ে তাঁকে জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার কথা জানান শান্তিরামবাবু। দলের মধ্যে কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এ ভাবে ‘বিদ্রোহ’ করেও কেন ছাড় পেয়ে গেলেন প্রদীপ মাজি।

Advertisement

জেলা নেতৃত্ব অবশ্য চাননি, প্রদীপবাবু কোনও দল ছাড়ার মতো কোনও চরম সিদ্ধান্ত নিন। এমনিতেই, জেলায় বিজেপি বাড়ছে। এই অবস্থায় প্রদীপ মাজি দলবল নিয়ে অন্য দলে যোগ দিক (বিশেষ করে বিজেপিতে) তা চায়নি জেলা নেতৃত্ব। দলে ভাঙন ঠেকাতেই ওই নেতাকে সম্মানজনক পদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের জেলা স্তরের এক নেতার কথায়, “শৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে প্রদীপকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে কর্মীদের কাছে শান্তিরামবাবু একটা নির্দিষ্ট বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু সকলকে নিয়েই দল চালানোর বাধ্যবধাকতা রয়েছে। বিশেষ করে এই সময়ে প্রদীপ অনুগামীদের নিয়ে বিজেপি-র দিকে চলে গেলে তার প্রভাব রঘুনাথপুর বিধানসভায় পড়তে পারে। মনে রাখতে হবে, লোকসভার ফলের নিরিখে রঘুনাথপুর নিয়ে আমরা খুব একটা স্বস্তিতে নেই।”

প্রথম রাউন্ডে ধাক্কা খেয়েও দ্বিতীয়টিতে প্রবলভাবে ফিরে প্রদীপবাবু বলছেন, “পঞ্চায়েত বা সমিতিতে অনাস্থা আনার ক্ষেত্রে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হলেও তা যে আদৌ ঠিক নয়, সেটা জেলা নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছেন। তাঁরা এটাও বুঝেছেন, রঘুনাথপুর ১ ব্লকে তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে হলে আমাকে দরকার। তাই জেলায় গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়েছেন। দলের নির্দেশেই নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন