পুরুলিয়ায় ৭.৩, বাঁকুড়ায় ৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পারদ নামতেই জমে গেল পিকনিক

একে বর্ষশেষের ছুটি। তাও আবার পারদ নিম্নমুখী। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। রবিবার বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া দুই জেলার পর্যটন স্থলগুলিতে ভিড়ের ঠেলায় পা রাখাই দায় হচ্ছে! গত বৃহস্পতিবার বড়দিন থেকেই কার্যত এই ছবি বহাল। গত চারদিন জেলার তাপমাত্রার ফারাক খুব একটা হয়নি। বৃহস্পতিবার ছিল ৯.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার তা নেমে যায় ৮.৩ ডিগ্রিতে। সেটাই এখনও পর্যন্ত চলতি বছরের বাঁকুড়ার সবচেয়ে শীতলতম দিন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০৪
Share:

ঠিক আছে তো? পুরুলিয়া মিনি জুতে রবিবার সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।

একে বর্ষশেষের ছুটি। তাও আবার পারদ নিম্নমুখী। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। রবিবার বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া দুই জেলার পর্যটন স্থলগুলিতে ভিড়ের ঠেলায় পা রাখাই দায় হচ্ছে! গত বৃহস্পতিবার বড়দিন থেকেই কার্যত এই ছবি বহাল।

Advertisement

গত চারদিন জেলার তাপমাত্রার ফারাক খুব একটা হয়নি। বৃহস্পতিবার ছিল ৯.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার তা নেমে যায় ৮.৩ ডিগ্রিতে। সেটাই এখনও পর্যন্ত চলতি বছরের বাঁকুড়ার সবচেয়ে শীতলতম দিন। শনিবার তাপমাত্রা ৯.৮তে উঠলেও রবিবার একঝটকায় নেমে গিয়েছে ৮.৭ ডিগ্রিতে। ফলে দিনভর শীতের পোশাক শরীর থেকে খুলতে হয়নি অনেককেই। পুরুলিয়া জেলায় গত ১৮ ডিসেম্বর থেকেই তাপমাত্রার পারদ নামতে শুরু করেছিল। সে দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.২ ডিগ্রি। তবে গত সোমবার তাপমাত্রার পারদ নেমে যায় ৮.৫ ডিগ্রিতে। শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপ নামে ৭ ডিগ্রিতে। সেটাই এখনও পর্যন্ত এ মুরসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্র। রবিবার তা ছিল ৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নিয়মের তোয়াক্কা না করেই বিষ্ণুপুরের সংরক্ষিত
এলাকায় চলছে পিকনিক। ছবি: শুভ্র মিত্র।

Advertisement

ফলে জবুথবু অবস্থা বাসিন্দাদের। সকালে লেপের তলা থেকে বেরোতে বেরোতেই অনেকের বেলা ১০টা হয়ে যাচ্ছে। “কনকনে ঠান্ডায় হাড়ে কাঁপুনি লেগে যাচ্ছে।” বলছিলেন বাঁকুড়ার পাঠকপাড়ার যুবক সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। আবার বিষ্ণুপুরের কালীতলার বধূ রমা চক্রবর্তী বলছেন, “শীতের দাপটে সকালে ঘুম থেকে উঠে সংসারের কাজে হাত লাগানোই দুষ্কর হয়ে পড়ছে। ভর দুপুরে ছাদে ঠায় রোদে দাঁড়িয়েও ঠান্ডা কাটছে না!”

শীতের কাছে হার মেনে অনেকেই অবশ্য ঘরবন্দি থাকতে নারাজ। বিষ্ণুপুরের লালগড়ের জঙ্গলে এ দিনও ছিল চড়ুইভাতির ভিড়। উনুন জ্বালিয়ে চলল রান্নাবান্না। কচিকাঁচাদের সঙ্গে বড়রাও সমানে হুল্লোড় করে গেলেন। রাসমঞ্চে মন্দিরে ঢোকার টিকিট কাটার লাইনেও দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। পর্যটকদের গাড়ির চাপে সরু রাস্তার এই পর্যটন স্থলের নানা জায়গায় যানজট লেগে যায়। লালধুলোর দাপটে অস্বস্তিতে পড়ছেন শ্যামরাই, কালাচাঁদের মতো মন্দির দেখতে আসা পর্যটকেরা। তবে সমস্ত প্রতিকূলতাকে উড়িয়ে সকলেই মল্লরাজাদের স্থাপত্য দেখে অভিভূত! শহরে পর্যটকদের ভারী সমাগমে ব্যবসা বেড়েছে পোড়ামাটির শিল্পী থেকে হোটেল ব্যবসায়ীদের।

একই অবস্থা শুশুনিয়ার পাহাড় কোলেও। ঝাঁকে ঝাঁকে পিকনিকের দল। প্রত্যেক দলের সাউন্ড বক্সের তীব্র স্বরে পাহাড়ের নিস্তব্ধতা ভেঙে খানখান। পিকনিকের ফাঁকেই দলবেঁধে পাহাড়ের চূড়োয় উঠছেন ছোট-বড় সব্বাই। পাহাড়ের ঢালে ছোট ছোট দোকানে ঠান্ডা ও গরম পানীয় কিনে গলায় ঢেলে অনেকে জিরিয়ে নিচ্ছেন। মুকুটমণিপুরের জলাধারে নৌকাবিহার চলছে পুরোদমে। চোখ জুড়নো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে অনেকেই বিভোর হচ্ছেন। ছুটছেন জলাধারের অন্য পাড়ে ডিয়ার পার্কে।

পুরুলিয়ার অযোধ্যাপাহাড়, মুরগুমা জলাধার, ফুটিয়ারি জলাধার, কয়রাবেড়া জলাধার, দোলাডাঙা-সহ জেলার বিভিন্ন চড়ুইভাতির জায়গায় ছিল এ দিনও উপচে পড়া ভিড় দেখা গিয়েছে। জয়চণ্ডী পাহাড়েও ছিল পযর্টকদের ভিড়। এ দিন থেকে শুরু হয়েছে পাঁচদিনের জয়চণ্ডী পর্যটন উত্‌সব। আদ্রা রেলশহরের বাসিন্দা বলবীর সিং বা কলকাতা পুলিশের কর্মী বাদল মণ্ডল এসেছিলেন ফুটিয়ারিতে। তাঁদের কথায়, “প্রচন্ড ঠান্ডা। কনকনে হাওয়া বইছে। কিন্তু এই জলাধারের তীরে রোদও মিঠে। এখানে পিকনিকের আমেজই আলাদা।” জলাধারে পর্যটকদের নৌকোয় ঘুরিয়ে যাঁরা কিছু টাকা রোজগার করেন, তাঁদের কথায়, “এ দিনও ব্যবসা ভালোই হল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন