পথ আটকাচ্ছে স্ট্যান্ড, নাকাল যাত্রী

‘রূপসী বাংলা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস’ ধরবেন বলে ছুট লাগিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, প্ল্যাটফর্মের ঢোকার আগে ব্যারিকেডের সামনে রাখা মোটরবাইকের দীর্ঘ সারিতে বিচ্ছিরি ভাবে ব্যাগের ফিতে আটকে আর একটু হলে বাড়ি ফেরার ট্রেনটাই মিস করছিলেন ওই ব্যক্তি! বাঁকুড়া শহর স্টেশনে পৌঁছতে গিয়ে এ রকম নানা দুর্ভোগের মধ্যে পড়া নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে যাত্রীদের কাছে।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০১:২৯
Share:

সাইকেল স্ট্যান্ডে জায়গা নেই। তাই রাস্তাতেই রাখা যাত্রীদের মোটরবাইক। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

‘রূপসী বাংলা সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস’ ধরবেন বলে ছুট লাগিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, প্ল্যাটফর্মের ঢোকার আগে ব্যারিকেডের সামনে রাখা মোটরবাইকের দীর্ঘ সারিতে বিচ্ছিরি ভাবে ব্যাগের ফিতে আটকে আর একটু হলে বাড়ি ফেরার ট্রেনটাই মিস করছিলেন ওই ব্যক্তি!

Advertisement

বাঁকুড়া শহর স্টেশনে পৌঁছতে গিয়ে এ রকম নানা দুর্ভোগের মধ্যে পড়া নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে যাত্রীদের কাছে। যার নেপথ্যে বিভিন্ন কারণে প্ল্যাটফর্মে ঢোকার সঙ্কীর্ণ রাস্তাকেই দুষছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও জায়গা দখল করে হকারদের দোকান খুলে বসা এর কারণ নয়। যাত্রীদের জন্য রেল স্টেশনে সাইকেল বা গাড়ি রাখার স্ট্যান্ডের চাহিদা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে স্ট্যান্ডের ছাউনি ছাড়িয়ে মোটরবাইক-সাইকেলের লম্বা লাইন এসে পড়ছে প্ল্যাটফর্মে ঢোকার ব্যারিকেডের গায়েও। তাই যানবাহনের ফাঁক দিয়ে গলে প্ল্যাটফর্মে ঢোকার রাস্তা খুঁজে পাওয়াটাই মাঝে মাঝে দুষ্কর হয়ে উঠছে যাত্রীদের কাছে।

অথচ যত দিন যাচ্ছে সব দিক থেকে বাঁকুড়া শহরের গুরুত্ব আরও বাড়ছে। শহরের পরিধি ও জনসংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই আবার শিক্ষাক্ষেত্রেও ধাপে ধাপে এগোচ্ছে জেলা সদর বাঁকুড়া শহর। রাজ্য বা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের আনাগোনা ক্রমশ বাড়ছে এই শহরে। সেই দিক থেকে দেখলে প্রাসঙ্গিকতা বাড়ছে রেল যোগাযোগেরও। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এই পরিষেবার পরিকাঠামোগত দুর্বলতার জেরে সাধারণ মানুষের নাজেহাল হওয়ার ছবিটা বদলাচ্ছে না কোনও মতেই।

Advertisement

স্টেশনে ট্রেন ধরতে এসে রোজ দিন তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়তে হয় একটি বেসরকারি বিমা সংস্থার কর্মী, মেদিনীপুরের বাসিন্দা শান্তনু রক্ষিতকে। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বললেন, “এ ভাবে মোটরবাইক রাখলে লোক জন ঢুকবে কোন দিক দিয়ে! স্টেশন চত্বরের এমন হাল আর কোনও স্টেশনে দেখিনি। স্টেশন কর্তৃপক্ষের নজরেও কি এই সব পড়ে না?” একই সুর ধরা পড়েছে ‘রেলওয়ে ইউজার্স অর্গানাইজেশনে’র যুগ্ম সম্পাদক দেবু চক্রবর্তীর বক্তব্যেও। তাঁর অভিযোগ, “স্টেশনে ঢোকার ব্যারিকেডের সামনে পথ আটকে যাতে মোটরবাইক বা সাইকেল না রাখা হয়, তা নিয়ে আরপিএফ-কে আমরা একাধিক বার সচেতন হতে বলেছি। কিন্তু, রেলের জায়গায় ধূমপায়ীদের জরিমানা করতে তাঁরা যতটা তৎপর, এ ক্ষেত্রে ততটা নন।”

এমনিতে বাঁকুড়া স্টেশনের জন্য আরও একটি সাইকেল স্ট্যান্ড গড়ার দাবি দীর্ঘ দিন ধরে জানিয়ে আসছেন যাত্রীরা। এর কারণ, যে হারে যাত্রীদের মোটরবাইক-সাইকেল রাখার হাল দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে, তাতেই বর্তমানের স্ট্যান্ডটি যথেষ্ট নয়। রেল দফতর সূত্রের খবর, স্টেশন চত্বরটিতে ২,৮৫০ বর্গ মিটার এলাকা স্ট্যান্ডের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। সাইকেল স্ট্যান্ডটি রেল লিজে দিয়ে চালায়। এর বিনিময়ে সাইকেল স্ট্যান্ডটির দ্বায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তি বা সংস্থার কাছ থেকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা নেয় রেল। কিন্তু, ওই স্ট্যান্ডটির পরিষেবার হালের কোনও রকম পরিবর্তন হতে দেখা যায়নি। যে সব যাত্রীরা স্ট্যান্ডে সাইকেল বা বাইক রাখেন, তাঁদের এ নিয়ে দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ। সাইকেল স্ট্যান্ডের ছাউনি অংশ খুবই কম। ফলে অনেককেই সাধের বাইক বা সাইকেল খোলা আকাশের নীচে রেখে যেতে হয়। জল, ঝড় বা প্রখর রোদের মধ্যেই পড়ে থাকে সেটি। স্ট্যান্ডটির আবার কোনও সীমানা পাঁচিলও নেই। তাই অনেকেই সেখানে সাইকেল রেখে আশঙ্কায় ভোগেন। সাইকেল চুরি যাওয়ার মতো ঘটনাও নেহাত কম ঘটে না। যাত্রীদের দু’চাকার পরিমাণ দিনের পর দিন বেড়ে যাওয়ায় জায়গাও অপ্রতুল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ দিকে, এখনই পরিস্থিতির দিকে নজর না দিলে অবস্থা আরও খারাপ হবে বলেই মনে করছেন নিত্যযাত্রীদের একটা বড় অংশই। বিষ্ণুপুর-বাঁকুড়ার নিত্যযাত্রী বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা অপূর্ব আচার্যের বক্তব্য, “প্রতি দিন সাইকেল রাখার জায়গা খুঁজতেই ঘাম ছুটে যায়। সাইকেল বের করার সময় অবস্থা আরও খারাপ হয়। জায়গার অভাবে সাইকেলগুলিকে গায়ে গায়ে রাখতে হয়। একটি সাইকেলের সঙ্গে আর একটি সাইকেল জড়িয়ে যায়। যা পরিস্থিতি আরও একটি সাইকেল স্ট্যান্ড না গড়লে আগামী দিনে সমস্যা আরও বাড়বে।” আবার দেবুবাবুর কথায়, “হাজার হাজার নিত্য যাত্রী এই সাইকেল স্ট্যান্ডটির উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু, রেল এই স্ট্যান্ডটির বিষয়ে মোটেও সচেতন নয়। আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি আরও একটি সাইকেল স্ট্যান্ড গড়ার। কিন্তু, তা তো হচ্ছেই না, উল্টে স্ট্যান্ডটিকে লিজ দেওয়া নিয়ে যে রকম টালবাহানা শুরু হয়েছে, তাতে যাত্রীদের একমাত্র ভরসা স্ট্যান্ডটিই না বন্ধ হয়ে যায়!”

রেল সূত্রের খবর, বর্তমানে এক ব্যক্তি লিজ নিয়ে ওই সাইকেল স্ট্যান্ড চালাচ্ছেন। কিন্তু, দীর্ঘ দিন ধরে শর্ত মাফিক টাকা না মেটানোয় সাইকেল স্ট্যান্ড বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে রেল। এই পরিস্থিতিতে যাত্রীদের একমাত্র ভরসার জায়গা, এই সাইকেল স্ট্যান্ডটিও যদি বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে অবস্থা চরমে গিয়ে ঠেকবে। বাঁকুড়ার স্টেশন ম্যানেজার শান্তব্রত বিশ্বাস যদিও বলছেন, “স্টেশনের সাইকেল স্ট্যান্ড নিয়ে সমস্যাগুলি দীর্ঘ দিনের। বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। সমস্যাগুলি কী ভাবে মেটানো যায় বা নতুন সাইকেল স্ট্যান্ড গড়ার বিষয়েও আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। আশা করছি শীঘ্রই কোনও পদক্ষেপ করা হবে।” অন্য দিকে, এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে রেলের সিনিয়ার ডিসিএম (আদ্রা) মানসরঞ্জন আচার্য ‘ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন কেটে দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন