অবৈধ যাতায়াত, চুপ প্রশাসন

ফের ট্রেলার ফেঁসে দুর্ভোগ দুবরাজপুরে

ফের ট্রেলারের দৌরাত্ম্যে জেরবার হল দুবরাজপুর শহর! যার জেরে দিনভর যন্ত্রণা ভোগ করলেন শহরবাসী। কালঘাম ছুটল প্রশাসনের। শেষমেশ পুরসভার একটি টোল আদায় কেন্দ্রের ঘরও ভাঙতে হয়েছে। কিন্তু, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সরানো যায়নি ফেঁসে যাওয়া ওই ট্রেলারটিকে। বুধবার গভীর রাতে শহরে ব্লক অফিসের অদূরে দুবরাজপুর-বক্রেশ্বর রাস্তায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:১৩
Share:

জট-চিত্র। দুবরাজপুর শহরের রাস্তায় ফেঁসে যাওয়া ট্রেলার। বৃহস্পতিবার সকালে ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।

ফের ট্রেলারের দৌরাত্ম্যে জেরবার হল দুবরাজপুর শহর!

Advertisement

যার জেরে দিনভর যন্ত্রণা ভোগ করলেন শহরবাসী। কালঘাম ছুটল প্রশাসনের। শেষমেশ পুরসভার একটি টোল আদায় কেন্দ্রের ঘরও ভাঙতে হয়েছে। কিন্তু, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সরানো যায়নি ফেঁসে যাওয়া ওই ট্রেলারটিকে। বুধবার গভীর রাতে শহরে ব্লক অফিসের অদূরে দুবরাজপুর-বক্রেশ্বর রাস্তায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। দিন কয়েক আগেও এ রকম বেআইনি ভাবে শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় একটি ট্রেলার বিদ্যুৎবাহী তার, কেবল ও ইন্টারনেটের অপটিক্যাল ফাইভারের তার ছিঁড়ে দুর্ভোগে বাড়িয়েছিল পুরবাসীর।

এলাকাবাসীর ক্ষোভ, গভীর রাতে শহরের সঙ্কীর্ণ রাস্তা দিয়ে অবৈধ ভাবে ওই ভারী গাড়ির যাতায়াত রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা অনিবার্য হয়ে উঠেছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরবাসী যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখনই বেআইনি ভাবে ট্রেলার রাস্তা দিয়ে পার করিয়ে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে শহরের বাসিন্দাদের একাংশ জড়িত। বিনিময়ে মোটা টাকার পেয়ে থাকে তারা। আরও অভিযোগ, গোটা প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ দফতরের কিছু কর্মী, পুরসভার টোল আদায়ের দায়িত্বে থাকা দু’এক জনও জড়িত। এমনকী, সব কিছু জেনেও কোনও পদক্ষেপ না করার নালিশ রয়েছে স্থানীয় পুলিশেরও বিরুদ্ধে। এক শ্রেণির পুলিশকর্মীও ওই বেআইনি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। তবে, পুলিশ-প্রশাসন অবশ্য তা মানছে না।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, অতীতে পানাগড়-দুবরাজপুর রাজ্য সড়ক হয়ে আসা ভারী ও বিশাল আয়তনের সামগ্রী বোঝাই ট্রেলারগুলি দুবরাজপুরে পৌঁছে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরত। তার পরে সিউড়ি শহরকে বাইপাস করে সিউড়ি স্টেশনের আগে পূর্ব রেলের অন্ডাল-সাঁইথিয়া রেল রুটের লেভেলক্রসিং পেরিয়ে যেত সচ্ছন্দেই। কিন্তু, বছরখানেক আগে ওই শাখায় বিদ্যুদয়ন হয়ে যাওয়ায় ওভারহেড হাইটেনশন তার লাগানো হয়েছে। সমস্যার শুরু সেখানেই। নিয়ম অনুযায়ী, ওই রাস্তা দিয়ে উঁচু বস্তু বোঝাই ট্রেলার বা ওই ধরনের যান পারাপার করতে হলে রেলের আগাম অনুমতি নিতে হয়। রেলকে প্রয়োজনীয় টাকাপয়সা দিয়ে অনুমতি মিললে বিদ্যুৎ সংযোগ সাময়িক ভাবে বিচ্ছিন্ন করে যানটিকে ওই লেভেলক্রসিং পার করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে রেল কর্তৃপক্ষই।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সময় ও খরচ বাঁচাতে রেলকে টপকে নয়া পন্থা নিয়েছে ওই বড় যানবাহনগুলি। এ ব্যাপারে চালক বা সংস্থাকে মধ্যবর্তী পথ দেখাচ্ছে দুবরাজপুরেরই কিছু বাসিন্দা। তারা ওঁত পেতে অপেক্ষা করে কখন ওই ধরনের যান আসবে। তেমন ট্রেলার পেলেই স্থানীয় সাতকেন্দুরী বাইপাস থেকে মোটা টাকার চুক্তিতে তারা সেটিকে দুবরাজপুর শহরে ঢুকিয়ে নেয়। রীতিমতো বাঁশের আগায় বাতা বেধে শহরের বিদ্যুৎ ও কেবল তার ঠেলে ট্রেলারটিকে এক বার বক্রেশ্বর রাস্তা ধরিয়ে দিতে পারলেই কাজ শেষ। কারণ সেটি তখন বিনা বাধায় বক্রেশ্বর-চন্দ্রপুর-কড়িধ্যা হয়ে জাতীয় সড়কে পৌঁছে যাবে। অথচ লেভেলক্রসিং পার হতে হবে না।

কিন্তু ঘটনা হল, শহরের মধ্যে দিয়ে এ ভাবে যাওয়ার সময় বিপত্তি আছেই। বিশেষ করে বাইপাস রাস্তায় গায়ে গায়ে বাড়ি। অত বড় গাড়ি ঘোরাতে গিয়ে ধাক্কা লাগলে ভেঙে যেতে পারে বাড়ি। এমন ভারী গাড়ির ধাক্কায় রাতের অন্ধকারে বাড়ির কানির্র্শ ভেঙে যাওয়ার ঘটনা ইতিমধ্যেই ঘটেছে। ফলে ঘর ভাঙার ভয় যেমন রয়েছে, তেমনই রাস্তার ঠিক উপরের বিদ্যুৎবাহী তারের জট অসাবধানতায় ছিড়ে আগুন লেগে বিপদ ঘটারও প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। যেমনটা হয়েছিল দিন কয়েক আগেই। বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রাংশ নিয়ে দু’টি ট্রেলারের চালকেরা কলকাতা থেকে নেপাল যাওয়ার পথে দুবরাজপুর শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার টোপ গিলে ফেলেছিলেন। প্রথম ট্রেলারটি ফেঁসে যেতেই আশপাশের বাসিন্দারা সজাগ হন। এ বার ফের একই ঘটনা ঘটতে দেখে রাতেই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু, পুলিশ তেমন তৎপরতা দেখায়নি বলেই বাসিন্দাদের দাবি। যানজট তৈরি হওয়ায় শেষপর্যন্ত বৃহস্পতিবার সকালে টোল আদায়ের ঘর ভেঙে ট্রেলারটিকে সরানোর একটা রাস্তা বের করা হয়। কিন্তু, সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও ফল মেলেনি। আপাতত ইঞ্জিন আলাদা করে কিছুটা খালি জায়গা বের করে সেখান দিয়েই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ।

এ দিকে, দুবরাজপুরের পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডের বক্তব্য, “যে বাইপাস রাস্তা ধরে ট্রেলারগুলি ঢুকছে সেটা মোটেও ওই ধরনের ভারী যানবাহন যাতায়াতের রাস্তা নয়। শহরের রাস্তা দিয়ে যাতে এ ভাবে ভারী ট্রেলার না যায়, তা দেখতে অনুরোধ করে এ দিনই দুবরাজপুর থানার ওসি-কে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।” অন্য দিকে, জেলার নতুন পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “বিষয়টি আমি জানি না। তবে, এমনটা হয়ে থাকলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন